ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী

খালেদা পরাজিত, বিজয়ী দেশের মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৮ এপ্রিল ২০১৫

খালেদা পরাজিত, বিজয়ী দেশের মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে কোন ঝড় মোকাবেলার জন্য দলের নেতাকর্মীদের সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত নাকি তিনি ঘরে ফিরে যাবেন না! ভেবেছিলেন দলীয় কার্যালয়ে নিজেকে অবরুদ্ধ রেখে মানুষকে পুড়িয়ে মারার হুকুম দিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে বিজয়ের মালা নিয়ে ঘরে ফিরবেন। কিন্তু বিজয় নয়, উনি (খালেদা জিয়া) সম্পূর্ণ পরাজিত হয়েছেন। বিএনপি নেত্রীকে পরাজিত হয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়েই বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। এ বিজয় আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষের। এ বিজয়কে ধরে রাখতে হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড-ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সূচনা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দলের প্রতিটি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোন সময় কালবৈশাখী কিংবা ঘূর্ণিঝড় আসতে পারে। যে কোন ঝড় আসুক, তা মোকাবেলার জন্য সবাইকে প্রস্তুত ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশের জনগণই হচ্ছে প্রধান শক্তি। কতিপয় সন্ত্রাসী দিয়ে বোমা মেরে পুড়িয়ে হত্যা করে যে জনগণের মতামত পরিবর্তন করা যায় না, তা আবারও প্রমাণ হয়েছে। ৯২ দিন ধরে মানুষ হত্যা করা আর দগ্ধ হয়ে নিহত ও আহতদের ভয়াল যন্ত্রণা, কষ্টই বিএনপি নেত্রীর একমাত্র সফলতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশের জনগণেরই প্রতিবার বিজয় হয়েছে। মানবতাবিরোধী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী ও জঙ্গীবাদীরা কখনও জয়ী হতে পারে না। এবারও হতে পারেনি। আগামীতেও কেউ যাতে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে। তিনি নগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, দেশবাসী ছাড়াও দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও ধন্যবাদ জানান। টানা ৩ মাস ধরে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল সন্ত্রাস-নাশকতা ও জঙ্গীবাদী কর্মকা- জনগণের সঙ্গে থেকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলার জন্য ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হলেও পরে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আসন্ন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত মেয়র ও একক কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিজয়ের ব্যাপারে নগরের নেতারা বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন। বৈঠকে দল সমর্থিত একক প্রার্থীর পক্ষেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মূল মঞ্চে সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, নগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম উপবিষ্ট ছিলেন। মতবিনিময় সভায় ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের ও নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়ক ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান ছাড়াও দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন, ড. হাছান মাহমুদ, এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, অসীম কুমার উকিল, হাজী মোহাম্মদ সেলিম, সুজিত রায় নন্দী, এনামুল হক শামিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। টানা ৯২ দিন দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ঘরে ফিরে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯২ দিন ধরে উনি দলীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় নিজেকে অবরুদ্ধ রেখে হুকুম দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করিয়েছেন। সারাদেশে নাশকতা-সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। ৯২ দিন পর বিএনপি নেত্রী গুহা থেকে বের হয়েছেন। সরকারের উৎখাতের জন্য উনি অভিনব কৌশল নিয়ে নিজের কার্যালয়ে নিজেকে বন্দী করে রেখেছিলেন। উনি বিজয়ী বেশে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে ফিরতে হয়েছে। বাসায় ফিরেছেন পরাজিত হয়ে। উনি পরাজিত হয়েছেন, আর বিজয় হয়েছে দেশের জনগণের, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষের। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৯২ দিন হরতাল-অবরোধের সময় জনগণের পাশে থেকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় অক্লান্ত পরিশ্রম করায় নগর আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতেও নানা সময় দেশ ও আমাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু আমরা সততার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছি এবং দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি বলেই সব ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হয়ে গেছে। দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সৃষ্টি করি, আর বিএনপি-জামায়াত জোট ধ্বংস করে। ধ্বংস করা আর হাওয়া ভবন খুলে লুটে খাওয়াই হচ্ছে বিএনপির রাজনীতি। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই দেশের উন্নতি হয়, দেশের মানুষ ভাল থাকে। বিএনপির আমলে বাংলাদেশ পরিচিত পায় সন্ত্রাস-জঙ্গী ও দুর্নীতির দেশ হিসেবে। আর আওয়ামী লীগ আমলে এখন সারাবিশ্বের কাছেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, একজন রাজনীতিকের কাজই হচ্ছে জনগণের স্বার্থে কাজ করা, জনগণের মঙ্গল করা। অতীতেও আমরা বহু আন্দোলন করেছি, সেই আন্দোলন করেছি দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীরাই নিহত হয়। কিন্তু রাজনীতির কথা বলেন দেশের জনগণকেই পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা অতীতে কোনদিন আমরা দেখিনি। যা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ৯২ দিন ধরে করে গেছেন। তিনি বলেন, ৯২ দিন ধরে দেশের মানুষকে কী নির্যাতনই না করলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। এমনকি নিজের ছেলের মৃত্যুর পর দেশে লাশ আসার সময়ই উনি হরতাল-অবরোধ চালিয়ে গেলেন। ৯২ দিনে অফিসে বসে তাঁর একটাই কাজ ছিল, তা হলো হুকুম দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা। মানুষ খুন করাকেই যেন বিএনপির নেত্রী উৎসবে পরিণত করেছিলেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সকল অবরোধ-হরতাল দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাদের ৯২ দিনের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচী কলের গানের ভাঙ্গা রেকর্ডের মতোই শুধু ছিল, বাস্তবে তার কোন প্রভাব ছিল না। বিএনপি নেত্রীর ধ্বংসাত্মক সহিংসতা কর্মসূচীকে দেশের জনগণ ন্যূনতম সমর্থন জানায়নি। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী তৃণমূল নেতাদের ভূমিকার প্রশংসার পাশাপাশি দলের কিছু সিনিয়র নেতাদের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকা-ের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যায়ের কাছে আমি কখনও মাথানত করিনি। ওয়ান ইলেভেনের সময় আমি প্রতিবাদ করেছিলাম বলেই আমাকে গ্রেফতার করে বন্দী রাখা হয়েছিল। কিছু সময় উঁচু (সংস্কারপন্থী সিনিয়র নেতা) নেতাদের মাথা এতই উঁচুতে চয়ে যায় যে তারা টালমাটাল হয়ে পড়েন। কিন্তু তৃণমূল নেতারা কখনও ভুল করে না। নীতি-আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে তৃণমূল নেতারা সোচ্চার হয়েছিল বলেই ওই সময়ের সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তাঁর মুক্তির জন্য নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মাত্র ১৫ দিনে ঢাকা নগরীর ২৫ লাখ মানুষের স্বাক্ষর গ্রহণের দৃষ্টান্তের ভুয়শী প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য নগর নেতাদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কাজে যেতে হবে, তাঁদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হতে হবে। ঢাকা মহানগরীর উন্নয়নের চিত্র নগরবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বিএনপি আমলে রাজধানীর চিত্রের সঙ্গে বর্তমান সরকারের আমলের চিত্রের তুলনামূলক বিচারের জন্য নগরবাসীর সামনে তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপির আমলে রাজধানীর হাল কি ছিল, এখন কেমন হয়েছে একটু বিচার করুন। আমরা নগরবাসীর বিদ্যুত, পানি ও গ্যাসের সমস্যা সমাধান করেছি। রাজধানী ঢাকাকে এমনভাবে সাজিয়েছি, যাতে বিশ্বের উন্নত শহরগুলোর সঙ্গে এখন ঢাকাকে তুলনা করা যায়। এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, কেউ তা রুখতে পারবে না।
×