স্টাফ রিপোর্টার ॥ একসঙ্গে অনেক পরিচয়কে ধারণ করেছিলেন সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন। ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক পরিচয়ের পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন নাট্য আন্দোলনে। প্রয়াত এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বের ৯২তম জন্মদিন উপলক্ষে শুরু হলো সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মৃতি নাট্যোৎসব।
মুক্ত করো মানবতা সেøাগানে পাঁচ দিনের এ উৎসবের আয়োজক পদাতিক নাট্য সংসদ। আর উৎসবের অংশ হিসেবে রয়েছে স্মারক সম্মাননা। ষষ্ঠবারের এ উৎসবে সম্মাননা পাচ্ছেন নাট্যজন অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন আহমদ ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আগামী ১১ এপ্রিল তাঁদের সম্মাননা প্রদান করা হবে। মঙ্গলবার বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার লবিতে উৎসবের সূচনা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশ ও ভারতের ৭টি নাট্যদল অংশ নিচ্ছে। দেশের নাট্যদলগুলোর মধ্যে রয়েছে থিয়েটার বেইলী রোড, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, আরণ্যক নাট্যদল, বটতলা ও পদাতিক নাট্য সংসদ। ভারতের নাট্যদলের মধ্যে অংশ নিচ্ছে অনীক ও রঙ্গকর্মী। নাট্যশালার মূল হল ও পরীক্ষণ হলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দুইটি করে ১০টি নাট্য প্রদর্শনী দিয়ে সাজানো হয়েছে উৎসব।
উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনয়শিল্পী মামুনুর রশীদ এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন এনামুল হক ও ভারতের নাট্যশিল্পী ঊষা গাঙ্গুলী। অতিথিরা প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে উৎসব উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পদাতিকের সম্মানিত সদস্য নাট্যকার কাজী রফিক।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে অতিথিরা বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে লাঞ্ছিত হচ্ছে মানবতা। সেই প্রেক্ষাপটে মানবতার বাণীকে ধারণ করে আয়োজিত এ উৎসবটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। অন্ধকারের শক্তিকে সাংস্কৃতিক শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে। এগিয়ে নিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে আবার নতুন করে হরতাল দেয়া হয়েছে। এ ধরনের অপতৎপরতার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার বানচাল করা যাবে না। বক্তারা আরও বলেন, থিয়েটার চর্চার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথ পাড়ি দিতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও মুক্তচিন্তার সমাজ গড়তে হবে।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার বেইলী রোডের নাটক কুহকজাল। মাসুম রেজার রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ত্রপা মজুমদার। অন্যদিকে এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় পদাতিক নাট্য সংসদের নাটক জনমাংক। নাসরিন মুস্তাফা রচিত প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন মীর মেহবুব আলম নাহিদ।
এর আগে বিকেলে নাট্যশালার বহিরাঙ্গনে উৎসবের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। পরিবেশিত হয় চন্দ্রকলা থিয়েটারের পথনাটক আজব বাক্স। সঙ্গীত পরিবেশন করে পদাতিক নাট্য সংসদের শিল্পীরা। আর কবিতার দোলায়িত ছন্দে শিল্পিত উচ্চারণে আবৃত্তি করে সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্রের শিল্পীরা।
১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান উৎসবে জাতীয় নাট্যশালার মূল হল ও পরীক্ষণ হলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দুইটি করে নাটক মঞ্চস্থ হবে। এছাড়াও প্রতিদিন বিকেলে নাট্যশালার বহিরাঙ্গনে থাকবে গান, কবিতা ও পথনাটকের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আজ বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হবে ভারতের নাট্যদল রঙ্গকর্মীর নাটক রোজানা। প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন ঊষা গাঙ্গুলী। একই সময়ে পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে ভারতের অনীক নাট্যদলের প্রযোজনা ২১-এর গল্প। অমলেশ চক্রবর্তীর রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মলয় বিশ্বাস।
স্মারক সম্মাননা : উৎসবের শেষ দিন ১১ এপ্রিল বিকেল ৫টায় অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমদ ও আসাদুজ্জামান নূরকে ২০১৫ সালের স্মারক সম্মাননা প্রদান করা হবে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে থাকবেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন পদাতিক নাট্য সংসদের সভাপতি তাসনিন হোসাইন তানু।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: