ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দারিদ্র্য কমাতে ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১০ এপ্রিল ২০১৫

দারিদ্র্য কমাতে ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অতিদারিদ্র্য জনসংখ্যা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে কমিয়ে আনতে ৭ শতাংশ হারে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, প্রকৃত অতিদরিদ্র মানুষদের এর আওতায় নিয়ে আসা, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, আয় বৈষম্য কমানো এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর যৌথ আয়োজনে টেকসই উপায়ে অতিদারিদ্র্য নিরসন শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে এসব তাগিদ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্বনর ড. আতিউর রহমান এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কে.এ.এস মুরশিদের সভাপতিত্বে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, টেকসই প্রবদ্ধি উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কেননা গ্রোথ দারিদ্র্য নিরসনে অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে। সেজন্য বিনিয়োগ বাড়ানো ও রাজস্ব বাড়ানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের রাজস্ব আয় এখনও অনেক কম। তিনি বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার দিয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নের বিশেষ কর্মসূচী অব্যাহত রাখতে হবে। সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার দেখা একটি বিষয় হচ্ছে দিনাজপুর শহরে এক স্কুলছাত্রী বাইসাইলে চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। মুসলিত পরিবারে আগে যা ভাবাই যেত না। ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ প্রক্ষেপণ দিয়েছে আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্য সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হবে। যা ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনও অতিদারিদ্র্যের উচ্চ হার রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। তাছাড়া মৌসুমভিত্তিক দারিদ্র্য ওঠানামা করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক সময় একটি অংশ অতিদারিদ্র্যের নিচে চলে যায়। এই অংশটিকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় আনতে হবে। অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, সম্পদের সুষম বণ্টন ও বাজার ব্যবস্থায় সকলের সমাজ অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলে টেকসই দারিদ্র্য নিরসন সম্ভব হবে না। প্রবৃদ্ধির সুফল সকলের কাছে সমানভাবে পৌঁছাতে হবে। সমতাভিত্তিক সমাজ বির্নিমাণে কাজ করতে হবে। বেশি বেশি উৎপাদনমূলক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। দারিদ্র্য নিরসনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) উন্নয়নে বিশেষ নজর দিতে হবে। দুদিনের সম্মেলনে যেসব বিষয়ে অংশগ্রহণকারীরা তাগিদ দিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অতিদারিদ্র্য দূরীকরণে বিষেশ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল ব্যবহার করে অতিদারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য আরও বেশি বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ অর্জন করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আকার বাড়াতে হবে, এগুলো আরও কার্যকর ও দক্ষভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। অতিদারিদ্র্যদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে তাদের দুর্যোগ প্রতিরোধের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। জিইডিতে অতিদারিদ্র্য বিষয়ক একটি স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা যেতে পাবে। এছাড়া সম্মেলনে বলা হয়েছে, মধ্য আয়ের দেশ হয়ে গেলেই অতিদরিদ্রদের কাছে সুবিধা পৌঁছাবে এমন কথা নয়। তাই আয় বৈষম্য কমিয়ে অতিদারিদ্র্য শূন্যের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। বলা হয়েছে, ব্যাংকে অতিরিক্ত টাকা পড়ে আছে, কিন্তু গরিবরা কি সেই টাকা নিতে পারছে? এ ব্যবধান কমাতে হবে। তাই অতিদারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়টি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ভিশন ২০২১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
×