ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সৌদির পর শ্রম বাজার খুলে যাচ্ছে ওমানে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১০ এপ্রিল ২০১৫

সৌদির পর শ্রম বাজার খুলে যাচ্ছে ওমানে

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবের পর এবার ওমান সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ওমান সাধারণ কর্মীর পাশাপাশি ডাক্তার-প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নিতেও আগ্রহী। সৌদি আরবের মতো ওমানও দীর্ঘদিন বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছিল। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ওমান সফর করে এসে এ তথ্য জানান। ওমান বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী জুনে ওমান থেকে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে এসে বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার জন্য ওমান সরকারের পক্ষ থেকে এ জন্য শিগগিরই কৌশল নির্ধারণ করতে একটি ‘টেকনিক্যাল টিম’ বাংলাদেশ সফরে আসবে। তারা বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ শেষে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আগামী জুন মাসের দিকে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করবে। সাধারণ কর্মীর পাশাপাশি ৪ থেকে ৫শ’ পেশাজীবী ডাক্তার নেবে ওমান। ওমানে বর্তমানে ৫ লাখ ৪৪ হাজার বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত। ওমানে কি প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো ও কেমন বেতন হবে তা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তার সঙ্গে ওমানের উপ-প্রধানমন্ত্রীসহ শ্রম ও কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারী জনশক্তি রফতানিকারক কোম্পানি বোয়েসেলের মাধ্যমে কর্মী পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখানেও সরকার থেকে সরকার (জি টু জি) পদ্ধতিতেই কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। শুধু ওমানেই নয়, বাহরাইন, জর্দান, সৌদিসহ বিশ্বের সব দেশেই এখন থেকে এই পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো হবে। কোন থার্ড পার্টি থাকছে না। আকামার সুযোগ বাংলাদেশের জন্য সৌদি আরবের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার প্রথম ধাপ। এদিকে, সৌদি আরবে বাংলাদেশী কর্মী নিযোগে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এখন কাজ চলছে কর্মী পাঠানোর। কবে থেকে কর্মী সৌদিতে যাবেন তা নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় বলছে, সব কিছু ঠিক থাকলে অল্পদিনের মধ্যে সৌদিতে গৃহকর্মী পাঠানো শুরু হবে। প্রতিমাসে ১০ হাজার গৃহকর্মী সৌদি যেতে পারবেন। এই হিসাবে বছরে এক লাখ ২০ হাজার কর্মী সৌদি যাওয়ার সুযোগ পাবেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ছয় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আবারও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। কোন্ প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ করবে তা চূড়ান্ত করতে গত মাসে ১৯ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনায় ঠিক হয় রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো হবে। তবে যে কোন অনিয়ম ধরতে সরকারের কড়া নজরদারি রাখার কথা বলেছেন বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। একজন কর্মী কত বেতন-ভাতা পাবেন তা নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়। সব শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, ন্যূনতম বেতন ৮ থেকে ১২শ’ রিয়াল (১ রিয়াল সমান ২১ টাকা)। বাংলাদেশ থেকে সরকারী নিয়ন্ত্রণে কর্মী যাবে সৌদি আরবে। বেসরকারী জনশক্তি রফতানিকারকরাই শতভাগ লোক পাঠাবেন। তবে এখানে কোন প্রকার মধ্যসত্বভোগী থাকতে পারবেন না। রেজিস্ট্রেশনকৃত কর্মীদের তালিকা অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ করতে হবে। কোন দালালের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করা যাবে না। যদি কোন জনশক্তি রফতানিকারকের বিরুদ্ধে সৌদিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সৌদি আরব যেতে একজন কর্মীর ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না। এই খরচের বাইরে কোন খরচ কেউ নিতে পারবেন না।
×