ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পোশাক রফতানিতে এবারও জিএসপি চাওয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১০ এপ্রিল ২০১৫

পোশাক রফতানিতে এবারও জিএসপি চাওয়া হবে

এম শাহজাহান ॥ আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে টিকফা ফোরামের দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রে। এই বৈঠকে বাংলাদেশ কি নিয়ে আলোচনা করবে সে বিষয়ে এজেন্ডা ঠিক করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এবারও পোশাক রফতানিতে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চাইবে সরকার। রফতানিতে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে একটি কৌশলপত্র তৈরি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্ষমতাধর এই রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। টিকফা (ট্রেড এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) এই সময়ে দু’দেশের বাণিজ্য কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাধাগুলো কোথায় সেসব বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে টিকফা ফোরামের বৈঠকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। জানা গেছে, টিকফা ফোরামের বৈঠকে এজেন্ডা নির্ধারণে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটি) পরবর্তী বৈঠক নিয়েও আলোচনা করা হয়। এছাড়া আগামী বছরের শুরুতে জেনেভায় ট্রিপস’ (ট্রেড রিলেটেড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এটি সামনে রেখে ডব্লিউটিও’র বালি সম্মেলনে গৃহীত পদক্ষেপ ও বিভিন্ন ইস্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের করণীয় বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। একমাত্র ওষুধ শিল্প ছাড়া সেবা খাতসহ প্রায় সব খাতে ২০২১ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ নীতিমালা বাস্তবায়নের বিষয়ে অব্যাহতি পেয়েছে। এখন ওষুধ শিল্পও যাতে ২০২১ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা পায়, সে জন্য জেনেভার পরবর্তী বৈঠকে প্রচেষ্টা চালানো হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের পরিচালক এসএম নূরুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, দিনক্ষণ তারিখ ঠিক না হলেও আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে টিকফা ফোরামের দ্বিতীয় বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে যোগ দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এজেন্ডা নির্ধারণ করছে। কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে সে বিষয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। গত এক বছরে টিকফা থেকে কি পেয়েছে বাংলাদেশ জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই চুক্তির ফলে আমরাই লাভবান হয়েছি। আগে বাণিজ্য সংক্রান্ত কোন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোন ফোরাম ছিল না। টিকফা আলোচনা করার জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি বাড়ছে। আছে কিছু সমস্যাও তবে এই সমস্যা সমাধানে টিকফায় আলোচনা করবে সরকার। তবে আগের মতো এবারও পোশাক রফতানিতে জিএসপি সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ। জানা গেছে, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে আগামী জুন মাসে টিকফা ফোরামে যোগ দিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের সরকারী প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, গত ২০১৩ সালের নবেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি বা টিকফা সই হয়। এর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায় গত বছরের এপ্রিলে। ওই সময় বাংলাদেশ তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধার প্রস্তাব উত্থাপন করে। ডব্লিউটি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের মতো এলডিসির সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা। ডব্লিউটিও’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০০ শতাংশ না দিতে পারলে অন্তত ৯৭ শতাংশ পণ্যে ওই সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বাংলাদেশকে এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৯৯ শতাংশ, কানাডা ৯৮ দশমিক ৬, অস্ট্রেলিয়া ১০০, জাপান ৯৭ দশমিক ৯, নিউজিল্যান্ড ১০০ ও সুইজারল্যান্ড ১০০ শতাংশ দিয়েছে। উন্নত অনেক দেশ এ সুবিধা দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশসহ কিছু এলডিসিকে এ সুবিধা এখনও দেয়া হয়নি। উপরন্তু বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে জিএসপি পেত, তা শ্রমিক অধিকার ও কারখানার কাজের পরিবেশ ইস্যুতে স্থগিত রয়েছে। এদিকে, পণ্য রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দেয়া হলে টিকফা স্বার্থক হবে বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ইতোমধ্যে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। ব্যবসাবাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ২০০১ সালে টিকফা নিয়ে আলোচনা শুরুর পর ২০১৩ সালের ২৫ নবেম্বর টিকফা চুক্তি সই হয়। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হয়েছে।
×