ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাপার সেমিনার

পরিমাপ বিজ্ঞান অবহেলিত হলে খাদ্যমান নির্ধারণ সম্ভব নয়

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১১ এপ্রিল ২০১৫

পরিমাপ বিজ্ঞান অবহেলিত হলে খাদ্যমান নির্ধারণ সম্ভব নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে নিরাপদ খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানতত্ত্ব মেনে সূক্ষ্ম পরিমাপের ব্যবহার হচ্ছে না। খাদ্যের উৎপাদন পর্যায়ে থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে পরিমাপের বিষয়ে সচেতন না হওয়ায় খাদ্য মান নির্ধারণ এবং গুণাগুণও যাচাই করা সম্ভব নয়। রসায়নবিদ এবং পরিবেশবাদীরা শুক্রবার রাজধানীতে এক সেমিনারে এ অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বলছেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে বিজ্ঞানতত্ত্ব মেনে মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা ‘নিরাপদ ও মানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিতকরণে সঠিক পরিমাপের গুরুত্ব ও ভোক্তা অধিকার’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে। শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সেমিনার সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। ব্যবহার অপরিসীম। শুধু খাদ্যই নয় যে কোন পণ্যের ক্ষেত্রেও একইভাবে তা গুরুত্বপূর্ণ। নিখুঁতভাবে পরিমাপের বিষয়ে যে বিজ্ঞানতত্ত্ব তাই মেট্রোলজি। পরিমাপ বিজ্ঞান অবহেলিত হলে কোনদিনও খাদ্য মান নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না এবং তার গুণাগুণও যাচাই করা যাবে না। মূল বক্তব্য রাখেন রসায়নবিদ জাহেদুর রহমান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বি-সেফ ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. রেজাউল করিম, বাপার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মহিদুল হক খান ও বাপার জাতীয় পরিষদ সদস্য অধ্যাপক নুসরাত সুলতানা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাপার যুগ্ম-সম্পাদক হুমায়ন কবির সুমন। জাহেদুর রহমান বলেন, নিরাপদ খাদ্যের মান ও মান নিয়ন্ত্রণে সূক্ষ্ম পরিমাপের ব্যবহার অপরিসীম। পরিমাপ বিজ্ঞান অবহেলিত হলে কোনদিনও খাদ্য মান নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না এবং তার গুণাগুণও যাচাই করা যাবে না। সেইসঙ্গে ভোক্তা অধিকার হবে নিশ্চিতভাবে নিছক মূল্যহীন। তিনি বলেন, মেট্রোলজির ব্যবহার ব্যতীত মানসম্পন্ন কোন ডিজাইন, কোনকিছু তৈরি, আবিষ্কার, উৎপাদন, পরীক্ষাগারে কোন পরীক্ষা, রক্ষণাবেক্ষণ এমনকি কোন কিছু প্রমাণ করাও সম্ভব নয়। নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য কোন কিছু পরিচালনা করাও সম্ভব নয়। কেমিক্যাল মেট্রোলজি আমাদের জীবন রক্ষার জন্য অপরিহার্য। রোগ নির্ণয়, ওষুধ তৈরি, ওষুধ সেবন, আবার শরীরের অবস্থা নির্ণয়ে কেমিক্যাল মেট্রোলজিসহ সকল বিষয়ে মেট্রোলজি অত্যন্ত জরুরী। জমি থেকে শুরু করে খাবার টেবিল পর্যন্ত মেট্রোলজির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। কেমিক্যাল মেট্রোলজি ছাড়া খাদ্য দূষণের মাত্রা, খাদ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা এবং খাদ্যে পুষ্টির মাত্রা নিরূপণের কথা ভাবাই যায় না। তিনি আরও বলেন, যে যন্ত্র দ্বারা পরিমাপ করা হবে সেটাও সঠিক আছে কিনা তা নির্ধারণ করাও মেট্রোলজির অন্যতম কাজ। কর্মজীবনে এবং বেঁচে থাকার প্রতিটি পদে মেট্রোলজির অপরিহার্য ব্যবহার কোনভাবেই আপোস করার সুযোগ নেই। তাই সবকিছুর আগে কোথায় সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে তা নিরূপণ করা বিশেষভাবে জরুরী। তিনি বলেন, সার্বিক উন্নয়নের অন্তরালে নৈতিক অবক্ষয়ের প্রসার জাতিকে উচ্চাকাক্সিক্ষত সারশূন্য জাতিতে পরিণত করতে পারে। নৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সকল উন্নয়নের মেরুদ-। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, মেধাবী ও দক্ষ জাতি গঠনে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও খাদ্য দ্রব্যের মান সঠিক রাখা অপরিহার্য। মানহীন ও দূষিত খাদ্য জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। ফসলের জমিতে কতটা সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হবে এবং শাক সবজি ফলমূলসহ খাদ্যদ্রব্যে কতটা রাসায়নিক প্রয়োগ মানসম্মত তা নিরূপণের জন্য তিনি সরকারের প্রতি কঠোর নজরদারীর দাবি জানান। ড. রেজাউল করিম বলেন, খাদ্যের মান ঠিক রাখতে মেট্রোলজির গুরুত্ব অপরিসীম। খাবার তৈরি থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত এর পরিমাপ ঠিক রাখা জরুরী। অথচ এ পরিমাপের বিষয়টি আমাদের দেশে গুরুত্ব পাচ্ছে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। খাবারের পরিমাপ সঠিক না হলে মানবদেহে এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে। মহিদুল হক খান বলেন, খাবার মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিমাপ বিষয়ে উৎপাদনকারীদের দায়িত্ববান হতে হবে। আমরা সবাই জানি স্বাস্থ্যই সম্পদ, তাই স্বাস্থ্য রক্ষা করা না গেলে সবকিছুই বিফলে যাবে। চিকিৎসা বা ডাক্তার নির্ভরতা কমিয়ে, নিজস্ব ক্ষমতায় তা নিয়ন্ত্রণ করারও চেষ্টা করতে হবে। অধ্যাপক নুসরাত সুলতানা বলেন, শুধু আইন করে লাভ নেই, উৎপাদনের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের মূল্যবোধ ঠিক রাখতে হবে।
×