বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আসন্ন সিটি নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের ‘শত নাগরিক কমিটি’র বিপরীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষের এবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিবর্গকে সম্পৃক্ত করে গঠন করা হচ্ছে ‘সহস্র নাগরিক কমিটি’। মূল নাগরিক কমিটির ব্যানারে গঠন করা হবে আরও দুই সহস্রাধিক সাব-কমিটি। ভোট কেন্দ্রভিত্তিক এসব কমিটি প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একাধিক পথসভার পাশাপাশি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইবেন। কাল সোমবারই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এক হাজার সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়িতে চিন্তার বলিরেখা ফুটে উঠেছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলে। প্রায় ১৫ দিনব্যাপী দফায় দফায় বৈঠক করে প্রায় তিন শতাধিক দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে সক্ষম হলেও এখনও অধিকাংশ ওয়ার্ডেই দু’তিন জন করে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। বিষয়টি সামাল দিতে ও দল সমর্থিত একক প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে শুধু দল থেকে আজীবন বহিষ্কারই নয়, একই সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের কোন পদে কিংবা সরকারের লাভজনক পদে থাকলে সেখান থেকেও তাদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে শাহবাগস্থ বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের কার্যালয়টি ‘সহস্র নাগরিক কমিটি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আজ রবিবার বিকেলে কমিটির শীর্ষ ব্যক্তিবর্গরা কার্যালয়টি উদ্বোধন করবেন। আগামীকাল সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। ‘শত নাগরিক কমিটি’র প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন দেশবরেণ্য কবি ও সব্যসাচি লেখক সৈয়দ শামসুল হক। সদস্য সচিব থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ।
সহস্র নাগরিক কমিটি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় গঠিত কমিটিগুলোর কার্যক্রম তদারকি, আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার এবং সভা-সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক-জঙ্গীবাদী গোষ্ঠীর ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কর্মকা- সম্পর্কে নগরবাসীকে অবহিত করবেন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল-শ্রেণী পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সাম্প্রদায়িক সকল অপশক্তির ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলারও ঘোষণা দেবেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ শনিবার জনকণ্ঠকে জানান, ইতোপূর্বে গঠিত ২শ’ ৫১ সদস্যবিশিষ্ট ‘ঢাকা নাগরিক কমিটি’ই নতুন অবয়বে এবং চিন্তা-চেতনা নিয়ে ‘সহস্র নাগরিক কমিটি’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। আগামীকাল সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এক হাজার সদস্যবিশিষ্ট সহস্র নাগরিক কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। এর প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকছেন দেশবরেণ্য কবি সৈয়দ শামসুল হক। তিনি জানান, শাহবাগস্থ বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের কার্যালয়টিই নাগরিক কমিটির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আজ রবিবারই কার্যালয়টি উদ্বোধন করা হবে।
দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ‘এসিড টেস্ট’ হিসেবেই নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দলটি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ও এর সকল সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ভোট কেন্দ্রভিত্তিক ২ হাজার ৭১০টি প্রচার কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি ইতোমধ্যে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছে। তিন সিটিতেই মেয়র পদে দলের একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারলেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর ছড়াছড়িতে কিছুটা উদ্বিগ্নই দলটির নীতিনির্ধারকরা।
তাঁরা মনে করছেন, শক্ত হাতে বিদ্রোহী প্রার্থী দমাতে না পারলে দলীয় মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী বিজয়ে প্রভাব ফেলবে। তাই দ্রুতই বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারের জন্য আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। জানা গেছে, দুই সিটিতে দল ঘোষিত একক প্রার্থীর বিপরীতে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে যেসব নেতা এখনও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনী মাঠে রয়েছে, তাদের একটি তালিকাও ইতোমধ্যে প্রস্তুত করে তা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। দ্রুতই তারা দল সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন করে নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা না দিলে ভবিষ্যতে সাংগঠনিক কোন পদে না রাখার ঘোষণাসহ দলের প্রাথমিক পদ থেকেও বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এই চরম সিদ্ধান্তটি ইতোমধ্যে দুই সিটির বিদ্রোহী প্রার্থীদের জানিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রচার-প্রচারণার কৌশলও চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নামেন, সেক্ষেত্রে পাল্টা পদক্ষেপ অনুযায়ী বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারে নামলে তিনি যেখানেই ভোট চাইতে যাবেন, সেখানেই তাঁর হরতাল-অবরোধের নামে ৫২ দিনের সন্ত্রাস-নাশকতা ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ভয়াল-বীভৎস্য কর্মকা-গুলো নগরবাসীর সামনে তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী সরকারের কোন মন্ত্রী-উপদেষ্টারা নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারবেন না। যেহেতু বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এই প্রথম সরকার কিংবা বিরোধী দলের নেতার পদেও নেই। সেক্ষেত্রে তাঁর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নেই। এ বিষয়টি জেনেই পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে শুধু দলের সাংগঠনিক শক্তিই নয়, সহস্র নাগরিক কমিটির ব্যানারে থাকা সকল বুদ্ধিজীবীসহ স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সকল শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিবর্গও খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারে গেলে তাঁর সম্পর্কে নগরবাসীকে সজাগ-সচেতন করবেন। খালেদা জিয়াকে ভোট দিলে তিনি যে আবারও সন্ত্রাস-নাশকতার সুযোগ নেবেন, মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করবেন, দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেবেন, সে বিষয়েও ঢাকা ও চট্টগ্রামের নগরবাসীকে সজাগ ও সচেতন করবেন তাঁরা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: