ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা উত্তরের সিটি প্রার্থীরা প্রচারে সমান সুযোগ চান

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৩ এপ্রিল ২০১৫

ঢাকা উত্তরের সিটি প্রার্থীরা প্রচারে সমান সুযোগ চান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনের প্রার্থীরা সেনা মোতায়েনসহ প্রচারের সমান সুযোগ চেয়েছেন। একই সঙ্গে তারা পেশিশক্তি ও কালোটাকার প্রভাবমুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। প্রধান দুই দল সমর্থিতদের দিকেই গণমাধ্যমের নজর থাকার অভিযোগ তুলে প্রচারের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ দাবি করেছেন বেশিরভাগ প্রার্থী। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন অকারণে প্রার্থীদের হয়রানি না করে এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। রবিবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রার্থীরা এসব দাবি জানান। এতে উত্তরের মেয়র, কাউন্সিলরসহ সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সবাই যোগ দেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নিজ নিজ মতামত তুলে ধরেন প্রত্যেকেই। জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নির্বাচনকে ঘিরে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। সভায় কোন অভিযোগ তুলে ধরেননি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ব্যবসায়ী আনিসুল হক। সব প্রার্থীর জন্য ‘সমান সুযোগ’ সৃষ্টির পক্ষে মত ব্যক্ত করে প্রচারে সবাইকে সমান গুরুত্ব দিতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা ২০ দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি বন্ধ এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্তি দিয়ে ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশি তৎপরতাও চেয়েছেন তিনি। নির্বাচন যেন টাকার খেলা না হয়, সেদিকে নজর দিতে বলেছেন তিনি। পাশাপাশি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করারও দাবি জানান তিনি। তবে তাদের দাবি ও নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য না শুনেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন আনিসুল হক, তাবিথ আউয়াল ও মাহী বি চৌধুরী। মতবিনিময়ের শুরুতে নির্দলীয় প্রার্থী মোঃ আনিসুজ্জামান খোকন বক্তব্যে গণমাধ্যমের প্রতি নির্বাচন কমিশনের কোন বক্তব্য না থাকার সমালোচনা করলে কাউন্সিলর প্রার্থীরা হট্টগোল শুরু করেন। পরে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়। খোকন বলেন, এটা নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে। নির্বাচন দেখে মনে হচ্ছে, এক বা দুই জন ব্যক্তি নির্বাচন করছেন। নির্বাচন কমিশন কেন গণমাধ্যমগুলোকে বলছে না সকলকে সমান সুযোগ দিতে। বিএনএ সমর্থিত প্রার্থী শেখ শহীদুজ্জামানও প্রচারে ‘সুযোগ না দেয়ায়’ গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন। গণমাধ্যমে সমান সুযোগ চাওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ। রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে কেউ প্রচার চালাতে পারবে না। গণভবন থেকে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হচ্ছে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন যেন ‘বিত্তবানদের লড়াই’ না হয় সেজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি করে কে কত টাকা খরচ করছেন তা তদারকির প্রস্তাব দেন বিকল্প ধারার মাহী বি চৌধুরী। গণমাধ্যমে সমান সুযোগ চেয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রার্থীর প্রচার এবং নির্বাচনী ইশতেহার গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। এজন্য প্রচারিত সময়কে প্রত্যেকের জন্য সমান ভাগে ভাগ করে দিতে হবে। তার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচনে পেশীশক্তি ও টাকার খেলা বন্ধ করতে কমিশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচনের আগে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সমর্থিত প্রার্থী নাদের চৌধুরী। নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের হয়রানি বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল ক্বাফী রতন। সবার বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক বলেন, আমি সকল মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে একমত। সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। মেয়রদের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরপরই আনিসুল, তাবিথ ও মাহী কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান, যদিও তখনও কাউন্সিলর প্রার্থী এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য বাকি। এ সময় উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনেই ওই তিন মেয়র প্রার্থীকে ঘিরে ধরেন। ইসি সচিব সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। এছাড়া চার নির্বাচন কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, ইসির অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় ভোটে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ১৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭৭ এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮৮ জন অংশ নিচ্ছেন। এ সিটিতে একজন মেয়র এবং ৩৬ কাউন্সিলর ও ১২ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পেতে ভোট দেবেন ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন ভোটার। ফজলে বারী মাসুদ বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য ভোটগ্রহণের তিনদিন আগে থেকে সেনা মোতায়েন ও প্রচারণায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। মোঃ জামান ভূইয়া বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দীন আহমেদ বাবুল বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী যেন সমান সুযোগ পান, সে দিকে ইসি’র দৃষ্টি দিতে হবে। এছাড়া ভোটাররাও যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, সে নিশ্চয়তা দেয়াও ইসির জন্য জরুরী। শামসুল হুদা চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থীরা কলেজের শিক্ষকদের ব্যবহার করছে। এ ধরনের কর্মকা- বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। কাউকে হয়রানি না করতে পুলিশকে বললেন সিইসি ॥ নির্বাচনকে ঘিরে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, আমি পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিচ্ছি অযথা যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছি আনন্দমুখর পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীকে সবাই যাতে ভোট দিতে পারেন সে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে।’ মতবিনিময় শেষে বক্তব্যে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ আবারও বললেন, অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও সর্বোচ্চ ব্যবস্থাও নেয়া হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের কোন রকম ছাড় দেয়া হবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সভার শুরুর দিকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। প্রার্থীদের আশ্বস্ত করতে চাই, আচরণবিধির কোন লঙ্ঘন আমরা হতে দেব না। প্রার্থী বা অন্য কেউ তা লঙ্ঘন করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ফেস্টিভ মোড-এ নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি এবং এলাকার প্রভাবশালীদের দিকে নজর রাখছি। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কোনো প্রার্থীর যদি নিরাপত্তাজনিত সংশয় থাকে বা অস্বস্তিতে ভুগেন আইনের ব্যত্যয় দেখতে পান তাহলে হয়, কমিশনের না হয় আমাদের নজরে আনবেন। ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনিসুর রহমান জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশন পুরোপুরি প্রস্তুত।
×