হাশেম খান বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী। এ কথা বললে তাঁর পরিচয় শেষ হয়ে যায় না। তিনি রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক এ্যাক্টিভিস্ট। ছয় দফার বিখ্যাত পোস্টার ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’ যেমন তাঁর আঁকা, তেমনি ১৯৭২ সালের সংবিধানেরও তিনি আলঙ্কারিক। মৌলবাদ-জঙ্গীবাদবিরোধী এবং মানবতাবিরোধী বিচারের দাবিতেও ছিলেন, আছেন সোচ্চার। জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁকে দেখেছি রাস্তায়, গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে সোচ্চার, নির্মূল কমিটির এঁকেছেন তিনি পোস্টার। তিনি শিক্ষকও, দীর্ঘদিন চারুকলায় শিক্ষকতা করেছেন, ছাত্রদের পাঠ্যসূচী তৈরি করেছেন, বই লিখেছেন। তিনি সংগঠন, বিশেষ করে শিশু চিত্রমেলা নির্মাণের পথিকৃত। জাদুঘর করেছেন কয়েকটি। এবং অনেকে বোধহয় জানেন না যে, তিনি গল্প লেখক, শিশুতোষ গ্রন্থের রচয়িতা। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে। খুব কম শিল্পীই জীবিত অবস্থায় এই দুটি পুরস্কার পেয়েছেন। স্বাধীনতা পুরস্কার তাঁকে শিল্পকলায় নয়, সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য দেয়া হয়েছে। যথার্থ বিচার।
এখন এ ধরনের শিল্পী, লেখক পাওয়া যাবে না, যাঁরা নিজের কর্ম ছাড়া সমাজের অন্যান্য কর্মের সঙ্গেও যুক্ত। কিন্তু ১৯৫০ দশকের শিল্পী-সাহিত্যিকরা কম-বেশি সবাই এরকমই ছিলেন- আমিনুল ইসলাম, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, শামসুর রাহমান, জহির রায়হান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বা বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। তাঁদের এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাই ষাট দশকে মাত্র দুইজন শিল্পীর মাঝে- হাশেম খান ও রফিকুন নবী। রফিকুন নবী অবশ্য গত দেড় দশকে নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছেন, কিন্তু হাশেম খানই বোধহয় এখনও সেই ধারা বহন করে যাচ্ছেন। তাঁর পরে এই ধারার বিলুপ্ত ঘটবে। ঘটবে কেন বলব, ইতোমধ্যেই ঘটেছে।
বাংলাদেশের অনেক শিল্পী, বোদ্ধা এবং সমালোচক একজন শিল্পীকে দু’ভাবে বিচার করেন। অনেক শিল্পী তাঁদের কাছে ‘শুদ্ধ শিল্পী’ কারণ সবসময় তাঁরা ক্যানভাস নিয়েই চর্চা করেছেন। কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান বা রফিকুননবী তাঁদের কাছে এই রকম ‘শুদ্ধ শিল্পী’ নন। কারণ সবসময় তাঁরা আবদ্ধ থাকেননি ক্যানভাসের ফ্রেমে। তাঁদের বিচরণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে, কিন্তু অন্তিম বিচারে এটিই প্রতিভাত হয়ে উঠছে যে, বাংলাদেশের চিত্রকলায় তো বটেই, বাংলাদেশের সমাজে রুচি নির্মাণে এবং আন্দোলনে সামগ্রিকভাবে দ্বিতীয়দের অবদান বেশি।
হাশেম খানকে ‘শুদ্ধ শিল্পী’ হিসেবে আমি বিচার করতে চাই না। তিনি চিত্রকর বা শিল্পী তো বটেই, কিন্তু বাংলাদেশে তাঁর পরিচয় এতেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি প্রচ্ছদ শিল্পী, বই নক্সাকার, পোস্টার ডিজাইনার, শিশুসংগঠক, প্রতিষ্ঠান নির্মাতা এবং লেখক। কিন্তু সবকিছুই তাঁর উৎসারিত হয়েছে শিল্পকলা থেকে, শিল্প বোধ থেকে।
বাংলাদেশের একটি শিশু যখন পড়তে শেখে তখন সে প্রথমে দেখে হাশেম খানের সচিত্রকরণ। নিসর্গ, বালক-বালিকা, পাখি, ফুল প্রভৃতি। অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, বাংলাদেশের শিশুরা হাশেম খানের চোখ দিয়ে প্রথম দেখে এ দেশের ঋতু, গাছ-পালা, ফুল-পাখি বা বাংলাদেশকে।
গত তিন দশক হাশেম খান প্রাথমিক শিক্ষার প্রায় সমস্ত বইয়েরই নক্সাকার। নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বাংলাদেশকে শিশুর অন্তরে প্রবিষ্ট করিয়েছেন। চাঁপাইনওয়াবগঞ্জের এক অজপাড়াগাঁয়ে হাশেম খানের সঙ্গে হাঁটছি। মধ্য তিরিশের এক যুবক এসে বললেন, আপনি হাশেম খান? বইয়ে বইয়ে আপনার ছবি দেখে বড় হয়েছি।
শিশুটি যখন পাঠ্যবই ছাড়া অন্যান্য বই পড়তে শেখে তখনও সে আবার মুখোমুখি হয় হাশেম খানের। ছড়ার বইয়ের মনোলোভা ইলাস্ট্রেশন, গল্পের বইয়ের সচিত্রকরণ, শিশু-কিশোরটিকে নিয়ে যায় কল্পনার জগতে। তাকে ভাবতে শেখায়, কল্পনা করতে শেখায়, তার সৃজনশীলতা উন্মোচন করে। গত চার দশকে বাংলাদেশে যাবতীয় শিশুতোষ গ্রন্থের অন্যতম নক্সাকার হাশেম খান। শিশুটি যখন কিশোর হয় তখন আবার সে হয়ত মুখোমুখি হয় হাশেম খানের। কচি-কাঁচার শুরু থেকে তিনি এর সঙ্গে জড়িত। দেশজুড়ে কিশোর সংগঠন আছে একমাত্র কচি-কাঁচার আসর। এর বিকাশে হাশেম খানের অবদান অনেক। এই সূত্রে তিনি চষে বেড়িয়েছেন সারা বাংলাদেশ। শিশু-কিশোরদের আঁকতে শিখিয়েছেন, শিল্পকলার প্রতি মনোযোগ তৈরিতে সাহায্য করেছেন। হাশেম খান তাদের মুরুব্বী নন, বন্ধু।
কিশোরটি যখন যুবক হয়, তখন হয়ত তার সঙ্গে আবার হাশেম খানের দেখা হয়, রাস্তায়। ১৯৬৯ সাল থেকে সমস্ত গণআন্দোলনের সঙ্গে হাশেম খান জড়িত। মিছিলে তাঁকে পাওয়া গেছে, পাওয়া গেছে একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ছবি, আল্পনা আঁকায়। আরও আগে যখন ছয় দফার পোস্টার করা হয়, তখন লোগো ও ছয় দফা প্রচারের আঁকাআঁকিতে ডাক পড়েছিল হাশেম খানের। বাংলাদেশের সংবিধান অলঙ্করণে ও বই নক্সার প্রধান শিল্পী ছিলেন তিনিই। ১৯৭৫ সালের পরও যতগুলো গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে সেখানেও সক্রিয় ছিলেন তিনি, নাট্য আন্দোলনে সহায়তা করেছেন তাদের পোস্টার এঁকে। আরও আছে, এদেশে থিমেটিক ক্যালেন্ডার প্রকাশের যে জোয়ার তারও অন্যতম পথিকৃত তিনি।
নাক উঁচু সমালোচকরা মনে করেন এগুলো যথার্থ শিল্পীর কাজ নয়। আমার নাক বোঁচা। আমি মনে করি বইয়ের অলঙ্করণ বা প্রচ্ছদ, পোস্টারও চিত্রকলার অঙ্গ। পিকাসো বইয়ের অলঙ্করণ করেছেন, পোস্টার এঁকেছেন, সেগুলোতো চিত্রকলার অঙ্গ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। এ হিসাবটি মনে রাখলে অনুধাবন করা সম্ভব কী পরিমাণ তিনি এঁকেছেন।
আগেই উল্লেখ করেছি, যৌবন থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত ছিলেন চারুকলারই শিক্ষক। ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে। শুধু ছাত্র তৈরি করেননি, ছাত্রদের বহুল পঠিত ‘চারুকলা পাঠ’ তাঁর রচনা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে চারুকলার পাঠক্রম তাঁরই তৈরি। লিখেছেন শিশুতোষ এবং মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত গ্রন্থ।
অনেকে হয়ত জানেন কিনা জানি না, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ও ঢাকা নগর জাদুঘর তাঁর সক্রিয় সহযোগিতা না থাকলে প্রতিষ্ঠা করা হতো দুরূহ। মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের জাদুঘর ও সোহরাওয়ার্র্র্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণে তিনি সক্রিয়। শিল্পীদের সংগঠনেরও তিনি ছিলেন সভাপতি।
এ সমস্ত কাজের ফিরিস্তি দিলাম হাশেম খানকে বোঝার জন্য, তাঁর ছবির পটভূমি বা নির্মাণ বোঝার জন্য। এ সমস্ত তাঁর সামগ্রিক কর্মকা-ের অংশ মাত্র। তিনি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত থেকেছেন, মুক্তিযুদ্ধে আহত হয়েছেন, কারণ এই দেশের প্রতি ভালোবাসা তাঁর অসীম। চাঁদপুরে তাঁর জন্ম, কৈশোর কেটেছে সেখানে। তারপর থিতু হয়েছেন ঢাকায়। চার দশকে বর্তমান ঢাকার গড়ে ওঠাটাকেও প্রত্যক্ষ করেছেন। এ দেশটিকে ভালোবাসেন, গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধশালী একটি দেশ হিসেবে তিনি এ ভূখ-কে দেখতে চেয়েছেন, যেখানে সংস্কৃতির সুষ্ঠু বিকাশ হবে। এটিকে তিনি একজন সচেতন মানুষের বোধ হিসেবে বিচার করেছেন, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিল্পবোধ। তাঁর বই নক্সা, আলপনা আঁকা, সংগঠন করা, সব কিছুই ছিল শিল্পের প্রায়োগিক ক্ষেত্র। শিল্পকে সাধারণের সংলগ্ন করা, যা আমাদের দেশের অধিকাংশ শিল্পী উপেক্ষা করেছেন। এই চর্চা যাতে অব্যাহত থাকে এ কারণে প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানের। এবং সেজন্য প্রতিষ্ঠান সৃষ্টিতে তিনি এগিয়ে এসেছেন। ‘শুদ্ধ শিল্প’ তো আছেই। তাঁর এই জীবনবোধ অন্তিমে সঞ্চারিত করেছেন চিত্রকলায়, এভাবে একটি শিশুর কাছে, একজন যুবকের কাছে, একজন সক্রিয়তাবাদীর কাছে, মধ্যবিত্ত রুচিশীল পরিবারে হাশেম খান হয়ে উঠেছেন অনন্য। সেজন্য তাঁর চিত্রকলার বিষয়, নির্মাণ মেলানো যাবে না কারো সঙ্গে। কারণ, এসব বিষয়, উপাদান তিনি সঞ্চয় করেছেন বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে এবং তাই পরিস্ফুট হয়েছে ক্যানভাসে। রং, নির্মাণশৈলীও অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবিত হয়েছে সেই বোধ থেকে। এভাবে হাশেম খান হয়ে ওঠেন একজন ব্যতিক্রমী মানুষ, একজন ব্যতিক্রমী শিল্পী।
সংগ্রামী, সাহিত্যিক সত্যেন সেন ১৯৬৮ সালে আমার প্রথম গ্রন্থ, শিশুতোষ একটি বই প্রকাশ করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, ১৭-তে পা দিয়েছি। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন হাশেম খানের গোপীবাগের বাসায়। এ বাসাতেই পরে উদীচীর কর্মকা- হয়েছে। মাথাভর্তি কোঁকড়া চুলের, সদা হাস্যময় হাশেম খানের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি তখন চারুকলার শিক্ষক। আমার কলেজ সহপাঠিনী পারভীনকে বিয়ে করেন তিনি পরের বছর। সেজন্য তিনি আমার হাশেম ভাই। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। আস্তে আস্তে তিনি বিরল কেশের এবং আমি শুভ্র গোঁফের মানুষে পরিণত হয়েছি। আমি, তিনি এবং স্থপতি রবিউল হুসাইন একসঙ্গে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছি, এক সঙ্গে যে কত কাজ করেছি তার ইয়ত্তা নেই। সেই বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে টাকা জাদুঘর, ঢাকা নগর জাদুঘর, সব আমরা তিনজনেই করেছি বা ভূমিকা রেখেছি। একসঙ্গে এখনও কাজ করছি। এতে আমার মনে হয়েছে সম্পর্ক থাকে, গভীর হয় কাজের মাধ্যমে। এজন্যই কি বলা হয় কর্মেই মুক্তি! হাশেম ভাই আমার ১০ বছরের বড়। আর কাজ করেন আমার ১০গুণ বেশি।
আমি যখন ছাত্র, তখন ১৯৬৯ সালে তাঁর এবং রফিকুন নবীর প্রথম জলরং প্রদর্শনী দেখি। সেই থেকে তাঁর সব কটি প্রদর্শনী দেখেছি। এন্তার ছবি উপহারও দিয়েছেন আমাকে। তাঁর ছবির বিচার করবেন শিল্প সমালোচকরা, আমি নই। যেমন লিখেছেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, “দৃশ্যমানকে বুঝবার, দেখবার, অনুভব করার চেষ্টা হাশেম খানের সব সময়। এই চেষ্টায় তাঁর বিরতি নেই। দৃশ্যমান বাস্তবতা তাঁর চোখে বাসা বাঁধে ও দূরত্ব বদলে দেয়। তিনি বাস্তবকে অনবরত অভ্যন্তরীণ করেন। এই অভ্যন্তরীণকরণ তাঁর বিষয়ের বাস্তবকে বদলে দেয়। তাঁর সৃষ্ট এই অভিজ্ঞতার মধ্যে একটা বাধ্যতা আছে। এই বাধ্যতা হাত ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো। তিনি দেখেন এবং দেখান, প্রশ্ন করেন এবং করান। অনেকটা উন্মীলন, অনেকটা সন্তানের মতো। এখানে বাস্তব ও ঈশ্বর একত্র হয়। তাঁর চোখ প্রায় সন্তদের মতো। এই চোখ আমাদের সম্পদ, আমাদের উত্তরাধিকার।”
রবিউল হুসাইন লিখেছেন- “শিল্পী হাশেম খানের শিল্পী-কৃতিত্ব তাই মননধর্মী ও বাস্তবময়তা নিয়ে নিজস্ব পরিচয়ে পরিচিহ্নিত অতি সফলভাবে। পরিবেশ, রাজনীতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সবশেষে মানুষের স্মৃতি, মনন ও অভিজ্ঞতা সংলগ্ন হয়ে মানুষকে ভাবিত ও আনন্দদায়ক সুখ বা বেদনাদায়ক দুঃখানুভূতিতে জারিত করতে সক্ষম হচ্ছে। সেটিই প্রধান বিবেচ্য। সরলতাই উত্তম বিধি এবং মানব মনোগ্রাহী, তিনি এই মতবাদে বিশ্বাসী যা প্রকৃতির মধ্যে সদা বিরাজমান, সেটিকেই তিনি অনুসরণ করে নিজস্ব এক শিল্পজগৎ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন, এটিই তার পরম কৃতিত্ব।”
বড় কঠিন সব আলোচনা। সরলভাবে বলি, গত পাঁচ দশকে অবিরাম নিজেকে বদলেছেন। যেই দৃশ্যমানের কথা বলেছেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর সেই দৃশ্যমানকে নিজে বোঝার চেষ্টা করেছেন, সেটি যখন প্রতিফলিত হয়েছে কাগজে বা ক্যানভাসে তখন তা কখনও নিছক দৃশ্যমান, কখনও প্রতীক। তার বাস্তবধর্মী ছবি, একেবারে নিটোল নয়, যেমনটি রফিকুননবী বা কাইয়ুম চৌধুরীর। তাতে আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়, যা শব্দে প্রকাশ করতে পারব না, উপলব্ধিতে তা আশ্রয় নেয়। তিনি যখন নির্বস্তুক কিছু আঁকেন তা কিবরিয়ার মতো নিটোল নয়, তাতে যুক্ত হয় এমন কিছু যা নাড়া দেয়। প্রায় দু’দশক আগে আঁকা ‘বিকাল : হলুদ, নীল, সবুজ’ প্রভৃতি তার প্রথম দিককার উদাহরণ। তিনি ছবির নতুন অর্থের খোঁজ করে চলছেন অনবরত।
সাধারণ একজন দর্শক হিসেবে নিজেকে অনেক সময় প্রশ্ন করেছি। একটি ছবির গুণ কী? যে ছবি দু’দ- দেখতে ইচ্ছে করে। নিছক ভালো লাগা হিসেবে, যে ছবি আবার ভাবায়, যে ছবি মনে গেঁথে থাকে। তারপর আসে শিল্পীর কলাকৌশল, গঠন, প্রতীক, রঙের ব্যবহার প্রভৃতি। হাশেম খানের ছবিতে রাজনীতি আছে, সমাজ আছে। প্রতীকী এবং নির্বস্তুক ছবিও অনেক। রঙের ওপর রং চাপিয়ে দেয়া বা শুধু গঠন প্রকরণ। সাধারণ হিসেবে সেগুলোর অর্থ না খুঁজলেও চলে। আমার তাঁর আঁকা নৌকা, পাখি, বাংলার বিদ্রোহ এমনকী ‘বিকাল’-এর সামনে দাঁড়ালেও ভালো লাগে। এটিই হচ্ছে মূল বিষয়, এখানেই শিল্পীর সার্থকতা। এই দুই অর্থেই তিনি শিল্পী যিনি নিজস্ব ঘরানা সৃষ্টি করেছেন। এ কারণেই বাংলাদেশের চিত্রকলায় তিনি বেঁচে থাকবেন।
আজ তাঁর জন্মদিন। জন্মদিনে প্রত্যাশা করি তিনি এবং তাঁর সহধর্মিণী সুস্থ থাকুন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: