ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য মিলেছে

চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ টার্গেটে অত্যাধুনিক অস্ত্র যোগাড় করছে জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ টার্গেটে অত্যাধুনিক অস্ত্র যোগাড় করছে জঙ্গীরা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে জঙ্গীরা জড়াচ্ছে অস্ত্র ব্যবসাসহ দেশের অভ্যন্তরে নাশকতা ও হাঙ্গামা সৃষ্টির অপচেষ্টায়। জঙ্গীদের এসব যোগাড়ের পেছনে কাজ করছে প্রশিক্ষণ টার্গেট। অবৈধ অস্ত্র আমদানি, পাচার ও প্রশিক্ষণের কাজে যারা ব্যবহার করছে তাদের গ্রেফতারে ও তথ্য কালেকশনে র‌্যাব সেভেনের ইন্টেলিজেন্স টিম। তবে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গীরা তাদের নাম ও সংগঠনের নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেড়াজাল এড়াতে পারছে না। গত দুই মাসে র‌্যাবের অভিযানে যেসব আগ্নেয়াস্ত্র ও ভারী অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে এগুলোর সবক’টিই প্রশিক্ষণের জন্য উপযোগী বলে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছে জঙ্গীরা। ৮টি একে-২২ রাইফেলসহ শক্তিশালী ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র জঙ্গীরা প্রশিক্ষণের কাজে দেশের অভ্যন্তরে স্থানান্তর করছিল কিনা সেসব বিষয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। র‌্যাব-৭ সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোতোয়ালি থানাধীন চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের বিপরীতে থাকা আবাসিক হোটেল মিড টাউনে অভিযান চালানো হয়। সেখানে জঙ্গীরা অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় করবে এমন তথ্যের ভিত্তিতেই এগিয়েছে র‌্যাব। অভিযান পরিচালনা করে হোটেলের ২৫৯নং কক্ষ থেকে জঙ্গীদের অস্ত্র সরবরাহকারী সাতকানিয়ার কাঞ্চনা এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোজাহের হোসেন মিঞাকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এলাকার গুলগাও এলাকার আবুল কালামের ছেলে বাঁশখালীতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত জঙ্গী মোঃ সাব্বির আহমেদ প্রকাশ মুহিবকেও সেই কক্ষ থেকে গ্রেফতার করা হয়। হোটেল কক্ষ থেকে চারটি বিদেশী ৭ দশমিক ৬৫ মিমি পিস্তল, এসব পিস্তলের চারটি ম্যাগাজিন, দশমিক ২২ বোরের এক হাজার রাউন্ড গুলি, ১২ রাউন্ড ৭ দশমিক ৬৫ মিমি পিস্তলের গুলি উদ্ধার করা হয়। তাদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলও এ সময় আটক করা হয় হোটেলের নিচ থেকে। আটককৃতদের দিনভর জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রাত সাড়ে ১১টার দিকে ২ জঙ্গী ঢাকায় পালানোর জন্য আকবরশাস্থ একে খান মোড় এলাকা থেকে শ্যামলী বাসের অপেক্ষায় ছিল। এ সময় কাউন্টার থেকে ঢাকার ধামরাইস্থ ইন্দরা নয়াচর এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোঃ কামাল উদ্দিন প্রকাশ মোস্তফা (২৪) ও নওগাঁর পরশা এলাকার আব্দুল হকের ছেলে আশরাফ আলী প্রকাশ আদনানকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে শ্যামলী বাসের দুটি টিকেট, দুটি ট্যাব ও চারটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, পাঁচলাইশ থানাধীন গ্রীন বাংলা নামের জাহানারা এপার্টমেন্টে তাদের একটি অস্ত্রের ভা-ার রয়েছে। কসমোপলিটন আবাসিক এলাকার এ ভবনের ৭ম তলায় মাসুদ রানা প্রকাশ ফাহাদের বাসায় তারা অস্ত্র মজুদ রাখে। জঙ্গীদের তথ্যের ভিত্তিতেই গত ১৩ এপ্রিল সকালে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। ঐ ঘরের স্টিলের আলমারির ভিতরের প্রকোষ্ঠে রাখা পাঁচটি একে-২২, একে-২২ এর দশটি ম্যাগাজিন, একটি বিদেশী পিস্তল, পিস্তলের ম্যগাজিন একটি, একটি এসবিবিএল বন্দুক, একটি এলজি, দশমিক ২২ বোরের গুলি ২ হাজার ১৫৫ রাউন্ড, ৫০১ রাউন্ড শটগানের গুলি উদ্ধার করে অভিযান দলটি। বিভিন্ন প্রকারের অস্ত্র পরিচালনা, সঞ্চালন, গোয়েন্দা নজরদারি বিষয়ে সতর্কতা ও সমর কৌশল বিষয়ক মূল্যবান কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হালিশহর থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ জঙ্গীকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ৩০ প্রকারের বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ১৫০ কেজি বিস্ফোরক পদার্থ, ৭৬টি শক্তিশালী তাজাবোমা, ২৪ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, বিপুল পরিমাণ ব্যাটারি, বাল্ব, ইলেকট্রিক তার, বোমা বানানোর জন্য মাস্ক, গ্লাভস এবং প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত পোশাক। গত ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার লটমনি পাহাড়ের একটি ডেইরি খামারে অভিযান চালিয়ে ৫ জঙ্গীকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৩টি একে-২২, ৬টি একে-২২ এর ম্যাগাজিন, ৬টি বিদেশি পিস্তল, এসব পিস্তলের ৯টি ম্যাগাজিন, একটি রিভলবার, ৩টি দেশীয় তৈরি বন্দুক, বিভিন্ন প্রকারের ৭৫১ রাউন্ড গুলি, ৩টি চাপাতি, ২টি ওয়াকিটকি, মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণের সরঞ্জামাদি, ১৪ জোড়া জঙ্গল বুট, ২ জোড়া সেনা বুট, ৪ জোড়া পিটি সু, ৩৮ সেট প্রশিক্ষণের পোশাক উদ্ধার করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী এলাকার আল মাদরাসাতুল আবু বকর নামের এক মাদ্রাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব সেভেনের সদস্যরা। মাদ্রাসা শিক্ষার নামে সেখানে চলছিল জঙ্গী প্রশিক্ষণ। এ মাদ্রাসা নামের প্রািশক্ষণ কেন্দ্র থেকে ১২ জন জঙ্গীকে আটক করা হয়। সেখান থেকে একটি কম্পিউটার, একটি ল্যাপটপ, তিনটি ট্যাব, ২৪টি মোবাইল, ৮টি মেমোরি কার্ড, জিহাদ ও জঙ্গী বিষয়ক বইয়ের কম্পিউটারে রক্ষিত কপি। এছাড়াও আইএসআই, আলকায়েদা, আনসারউল্লাহ বাংলা টিমসহ বিভিন্ন জঙ্গী প্রশিক্ষণের অডিও এবং ভিডিও কপি।
×