ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তীব্র গরমে রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ

আইসিডিডিআরবিতে ঘণ্টায় ২১ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

আইসিডিডিআরবিতে ঘণ্টায় ২১ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তীব্র গরমে রাজধানীতে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। নগরীর আইসিডিডিআরবিতে গড়ে ঘণ্টায় প্রায় ২১ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। যা স্বাভাবিক অবস্থার দ্বিগুণ। রাজধানীর অন্য সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও ভর্তি হচ্ছে নতুন ডায়রিয়া রোগী। ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব সামাল দিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ। রোগী শয্যা, চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক, নার্স ও ভল্যান্টিয়ারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রা এবং জীবাণুযুক্ত পানি পান করায় এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডায়রিয়া বিশেষজ্ঞরা। ডায়রিয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় তা দেখা গেছে। এপ্রিলের শেষ দিকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকে এমন অবস্থা। উচ্চ তাপমাত্রা, জীবাণুযুক্ত পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সঙ্গে ডায়রিয়ার বেশ সম্পর্ক রয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রায় ডায়রিয়ার জীবাণু যেন জীবন খুঁজে পায়। এ পরিবেশে ডায়রিয়ার জীবাণুর দ্রুত বিস্তার ঘটে। আর দূষিত পানি ও বাসি খাবার খেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হবেই। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইসিডিডিআরবিতে চলতি মাসের শুরু থেকেই নতুন করে আক্রান্ত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৫শ’ এর নিচে নামছে না। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৬শ’ নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। নতুন রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে নগরীর আইসিডিডিআরবির (কলেরা হাসপাতাল) চিত্র। চিকিৎসক, নার্স ও ভল্যান্টিয়ারদের কাটছে ব্যস্ত সময়। মূল গেট পার হলেই জরুরী বিভাগের সামনে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫টি ট্রলি ও হুইল চেয়ার। রোগী আসা মাত্রই ট্রলিতে করে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন কর্মচারীরা। হাসপাতালের কর্মচারীরা জানান, এপ্রিলের শুরু থেকেই সকলের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। আসা মাত্রই রোগী ভেতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেরি না করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। আগত রোগীদের অধিকাংশই শিশু বলে জানান চিকিৎসকেরা। ওয়ার্ডের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে, খালি বেড নেই। মূল গেটের সামনে ১শ’ বেডের একটি তাঁবু গড়ে তোলা হয়েছে। ওই তাঁবুতেও কোন বেড খালি নেই। হাসপাতালের ভেতরে নির্মিত ১শ’ ২০ বেডের নতুন ওয়ার্ডটিও রোগী ভর্তি। নতুন ভর্তি ও বিদায়ী রোগীর মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অনেক সময় নতুন ভর্তি তুলনায় বিদায়ী রোগীর সংখ্যা কমে যায়। তবে নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ রোগী ভর্তি হয় হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। বেডের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে জনবল। নতুন করে অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রায় ১১ চিকিৎসক, ১৯ নার্স, ১৮ জন ভল্যান্টিয়ার এবং ৮ রোগীর ট্রলিম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, হাজারীবাগ, মিরপুর এলাকা থেকে বেশি রোগী যাচ্ছে হাসপাতালে। মঙ্গলবার সকালে বাড্ডার ১১/বি হোল্ডিংয়ের বাসিন্দা নজরুল মিয়ার ৯ বছরের শিশুসন্তান হোসেনকে আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি করা হয়। নজরুল মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। পাতলা পায়খানা শুরু হওয়ার একদিন পর শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে ৫টি আইভি স্যালাইন। শিশুটির অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানি খাওয়ার কারণেই তাঁর সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে বলে মনে করেন নজরুল মিয়া। আইসিডিডিআরবির বিভাগীয় প্রধান ও বৈজ্ঞানিক ডাঃ শাহাদত হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, প্রতিবছরই এপ্রিলে তাপমাত্রা বাড়লে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যায়। নতুন করে আক্রান্ত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রা ও জীবাণুযুক্ত পানি পান করার কারণে এমনটি হতে পারে। তাপমাত্রা না কমলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে জানান ডাঃ শাহাদত হোসেন।
×