ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষবরণে শ্লীলতাহানি-ঢাবি ভিসি ও আইজির প্রতি রুল

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

বর্ষবরণে শ্লীলতাহানি-ঢাবি ভিসি ও আইজির প্রতি রুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে তরুণীকে বিবস্ত্র ও নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। আগামী ১৭ মে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ঢাবি উপাচার্য ও আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করে। আদালত তার আদেশে বলেছে, ‘বাঙালী জাতিসত্তার এতবড় সম্মিলন নববর্ষ উদযাপন, যাতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই উদ্যাপন করে থাকে।’ এরকম একটি অনুষ্ঠানে ‘নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা ও দায়িত্বে অবহেলার’ দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুলও দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, পুলিশের রমনা জোনের ডিসি ও শাহবাগ থানার ওসিকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে। এদিকে, নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক এএম আমজাদ বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আমরা চারজনকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছি। তাদের ধরতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এমনকি সন্দেহভাজনদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের এডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। নববর্ষ উদ্যাপন করে বাসায় ফেরার পথে ঢাবি ক্যাম্পাসে এক তরুণীকে বিবস্ত্রসহ একাধিক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, নববর্ষের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হন কয়েক নারী। বৃহস্পতিবার কয়েকটি দৈনিকে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন দুই নারী আইনজীবী। পরে আদালত রুলে জানতে চায়, এ ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানিয়েছেন, বর্ষবরণের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে ও দোষীদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে। কিন্তু কেউ এ ঘটনায় নিজেদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি স্বীকার করছে না। বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে এ মামলা (নম্বর : ২৫) দায়ের করেন। এছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িত চারজনকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাবির টিএসসিসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট এবং এর আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেছেন প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে রমনা জোনের ডিসি আবদুল বাতেন ও এসি শিবলি নোমানসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় তাঁরা ঘটনায় জড়িতদের দ্রুতবিচার আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান। রমনা জোনের উপকমিশনার আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দোষীদের চিহ্নিত করা হবে। তিনি বলেন, ওই সময় বিশজন পুলিশ দায়িত্বরত ছিল। তাদের গাফিলতির বিষয়েও তদন্ত করা হবে। তিনি বলেন, আপনারা বলেছেন পুলিশ ছিল না। হাজার হাজার মানুষ ছিল। সেখানে পুলিশও তার ডিউটি পালন করেছে। যে ঘটনার কথা আপনারা বলছেন, সে বিষয়ে মামলা নিয়েছি। যে ঘটনাটি ঘটেছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করছি। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে সিসিটিভি ছিল, ফুটেজ নিয়েছি। কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের উদ্দেশ্য কী? যারা এখানে প্রত্যক্ষদর্শী ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ প্রত্যেক স্তরের লোকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হবে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। তবে যাদের লাঠিপেটা করেছিল তারা বলেছিল যে, তাদের সহায়তা করার জন্য এসেছেন। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা বলছে যে তারা ফেরাতে এসেছে। ঘটনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এএম আমজাদ বলেন, যে সময়ের বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার এক ঘণ্টার সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ আমরা দেখেছি। কিন্তু সেখানে এরকম বিভৎস ঘটনা দেখলাম না। আবার আলো স্বল্পতার কারণে ভিডিওগুলো ভালমতো বোঝা যাচ্ছিল না। মানুষের এদিক-ওদিক যাওয়ার বিষয়ই বোঝা যাচ্ছিল। তবে কিছু ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটতে ফুটেজে দেখা যায়। কিন্তু এটায় পরিকল্পিতভাবে লাঞ্ছিত করার মতো কোন ঘটনা চোখে পড়েনি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ভিডিও ফুটেজে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী বা কোন পরিচিত মুখ পাওয়া যায়নি। সব ফুটেজ এখনও দেখা শেষ হয়নি। বাকিগুলো দেখে বলা যাবে লাঞ্ছিত ও শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা ঘটেছে কি-না। আমি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিলাম এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যে যোগাযোগ ও বৈঠক হয়েছে তাতে আমি ছিলাম। বিগত সময়ে যেসব জায়গায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল সেগুলো চিহ্নিত করি, যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এবং সেজন্য পরিকল্পনাও করেছিলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও চলছিল। কিন্তু কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে। যে পরিকল্পনা ছিল তা শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে বিশৃঙ্খলার বিষয় জানতে পেরে প্রথমে প্রক্টরিয়াল টিমকে সেখানে পাঠাই। তারা আমাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে, তবে সেখানে কিছুসংখ্যক পুলিশ উপস্থিত হয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানায়। পরে আমি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করি। ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক এএম আমজাদ আরও বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আমরা চারজনকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছি। তাদের ধরতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এমনকি সন্দেহভাজনদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হবে। টিএসসি এলাকার নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী লিটন নন্দী বলেন, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কয়েকজন সঙ্গীসহ শাহবাগ থেকে টিএসসির দিকে আসছিলাম। এ সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের সামনে এসে ২৫ বছরের এক নারীকে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। ওই নারীর ওপর কয়েকজন যুবক চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে যৌন নির্যাতন চালাচ্ছিল। আমরা চারজন ওই নারীকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাই।
×