ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে বদ্ধ জলমহাল লবণ পানিতে সয়লাব

মরে যাচ্ছে বোরো ক্ষেত

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

মরে যাচ্ছে বোরো ক্ষেত

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারে চকরিয়ার ঢেমুশিয়ায় মৎস্য চাষের নামে বদ্ধ জলমহালে লবণ পানি প্রবেশ করানোর কারণে মরে যাচ্ছে হাজারও একর বোরো ধান ক্ষেত। জেলা প্রশাসন থেকে জলমহালটি ইজারা নিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে লবণ পানি ঢুকাচ্ছে দেদার। ফলে বদ্ধ খালের ওপর নির্ভরশীল উপকূলীয় অঞ্চলের তিন ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক মিঠাপানি না পেয়ে বোরো ধান ক্ষেতে লবণ পানির সেচ সুবিধা দেয়ায় মরে যাচ্ছে ধানক্ষেতগুলো। ঘটনাটি কৃষি বিভাগের লোকজনকে অবহিত করা হলেও ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহালের লবণ পানি প্রবাহ বন্ধে কোন উদ্যোগ নেয়নি। এতে গরিব কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। জানা গেছে, চকরিয়া পশ্চিম বড় ভেওলা ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের বুক চিরে প্রবাহিত ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহালটি চলতিবছর কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা (লীজ) নেন স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা মৎস্য চাষের শুরুতে গতবছরের নবেম্বর-ডিসেম্বরে খালের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে সামুদ্রিক লবণ পানি ঢুকিয়ে দেয়। ওই সময় স্থানীয় কৃষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসন লবণ পানি প্রবেশ না করাতে ইজারা নেয়া ব্যক্তিদের চাপ প্রয়োগ করে। প্রশাসনের কঠোর নির্দেশনার ফলে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত কয়েকমাস ধরে কৌশলে তারা আবারও বদ্ধ খালে লবণ পানি ঢুকাচ্ছে অবাধে। এ অবস্থার কারণে খালটির মিঠাপানির ওপর চাষে নির্ভরশীল উপকূলীয় অঞ্চলের চারটি ইউনিয়ন যথাক্রমে ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড়ভেওলা, সাহারবিল ও পূর্ববড় ভেওলার একটি অংশের কৃষকরা জমিতে মিঠাপানির সেচ সুবিধা না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। ঢেমুশিয়া গান্ধিপাড়ার অনেক কৃষক জানান, তাঁরা স্থানীয় মনোয়ারুল হকের স্কিমের মাধ্যমে জমিতে প্রতিবছর সেচ সুবিধা নিয়ে থাকে। তার আওতায় দুটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে দুইশ কানি ধানক্ষেত রয়েছে। ভুক্তভোগী কৃষকরা অভিযোগ করছেন, ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহালে প্রভাবশালীরা মৎস্য চাষের জন্য খালটি লবণ পানিতে সয়লাব করে ফেলায় জমিতে রোপণ করা বোরো ধানে তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই লবণ পানির সেচ সুবিধা নিচ্ছে। এতে এলাকার বেশিরভাগ ধানক্ষেত শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। বিষয়টি কৃষি বিভাগের লোকজনকে জানালেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না কৃষকরা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ঢেমুশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রোস্তম আলী বলেন, এলাকায় মিঠাপানির বিকল্প কোন উৎস না থাকায় কৃষকরা বাধ্য হয়েই ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহালের লবণ পানি সেচ কাজে ব্যবহার করছে। এতে চলতি মৌসুমে এলাকার কৃষকরা বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আতিক উল্লাহ বলেন, ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহালটি এখন কৃষক ও চাষাবাদের জন্য চরম হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। ইজারা সংশ্লিষ্টরা লবণ পানি ঢুকাবে না- এমন আশ্বাস দিলেও পরে তারা ঠিকই এ অন্যায় কাজটি করে চলছে। বোরো ধানক্ষেত নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষকের মাঝে মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই জলমহালটি মৎস্য চাষের জন্য দেয়া ইজারা (লীজ) বাতিল করতে হবে।
×