ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৮ ইউনিয়নে আক্রান্ত ৬৬৪ জন, অপর্যাপ্ত চিকিৎসা

ফকিরহাটে ৭০ শতাংশ নলকূপে আর্সেনিক

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

ফকিরহাটে ৭০ শতাংশ নলকূপে আর্সেনিক

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ ফকিরহাট উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আর্সেনিকের ভয়াবহতা চরম আকার ধারণ করেছে। গভীর ও অগভীর নলকূপের তীব্র সংকট, মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা এবং গণসচেতনতার অভাবসহ নানাবিধ কারণে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুত গভীর নলকূপ স্থাপন, মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানে আরও উদ্যোগী হওয়াসহ গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাঠ পর্যায়ে প্রচারাভিযান জরুরী বলে সংশ্লিষ্টরা মত দিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে, ২০১৪ সালের জরিপে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৬৬৪ পুরুষ ও মহিলা আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বেতাগা ইউনিয়নে ২৪, লখপুর ইউনিয়নে ৫৮, পিলজংগ ইউনিয়নে ১৭৫, ফকিরহাট সদর ইউনিয়নে ১১৫, বাহিরদিয়া-মানসা ইউনিয়নে ২৫২, নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নে ১২, মূলঘর ইউনিয়নে ৮ ও শুভদিয়া ইউনিয়নে ১০ ব্যক্তি আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ হতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার পাশাপাশি এনজিও ফোরাম ফর ড্রিংকিং ওয়াটার সাপ্লাই এ্যান্ড স্যানিটেশন ও কোনিয়া নামক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা রোগীদের ওষুধ ও চিকিৎসা প্রদান করেন। এরপর তারা কোন রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করছেন না। যে কারণে রোগীদের চিকিৎসা সেবা ও ওষুধপ্রাপ্তি সুবিধায় নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১৫শ’ ৫৩টি গভীর এবং ২ হাজার ২শ’ ৩৭টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি গভীর ও ৮০টি অগভীর নলকূপ অকেজো রয়েছে। চাহিদার তুলনায় অনেক কম হওয়ার কারণে জনগণের প্রত্যাশা সঠিকভাবে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ১০টি নলকূপ পরীক্ষা করলে প্রায় ৭টিতে আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর চাহিদার তুলনায় গভীর অগভীর নলকূপের সংখ্যা কম হওয়ায় তারা সব এলাকায় নলকূপ স্থাপন করতে পারছে না। সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, মানসা বাহিরদিয়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া, লালচন্দ্রপুর, হুচলা, পিলজংগ ইউনিয়নের বৈলতলী, বালিয়াডাঙ্গা, বেতাগা ইউনিয়নের মাসকাটা ও লখপুর ইউনিয়নের লখপুর। আক্রান্ত ব্যক্তিরা জানান, এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শ্যামবাগাত ও বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় মুনজিল মল্লিক তার ভাই ইখতিয়ার মল্লিক মারা যান। তারপর হতে একের পর এক এ রোগে আক্রান্ত হলেও স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন বা গভীর অগভীর নলকূপ প্রদান করার বিষয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, এনজিওগুলো ২/৩ বছর আগে ওষুধসহ চিকিৎসা সেবা প্রদান করলেও সরকারীভাবে তাদের কোন চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়নি। যদি কোন রোগী নিজের উদ্যোগে ইউনিয়ন বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যায়, তবে কিছু ভিটামিন জাতীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন ও ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ লস্কর বলেন, রোগীদের সব সময় চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তাঁরা আন্তরিক। তাছাড়া হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্সেনিকের ওষুধ রয়েছে, যা রোগীদের চিকিৎসাসহ সব সময় সরবরাহ করা হচ্ছে।
×