ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শুক্রবার ঢাকায় নির্বাচনী প্রচারে ছিল ভিন্নমাত্রার কৌশল

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

শুক্রবার ঢাকায় নির্বাচনী প্রচারে ছিল ভিন্নমাত্রার কৌশল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের কাছে শুক্রবার জুমার নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই এ সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে চান না। এক সঙ্গে অনেক ভোটার কাছে পেয়ে সহজেই ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করা যায়। এ সুযোগ কাজে লাগাতে শুক্রবার সব প্রার্থীই ছুটে গেছেন জুমার নামাজ আদায় করতে। উত্তরের আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী জুমার নামাজ আদায় করেছেন কাজী পাড়ার একটি জামে মসজিদে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা তাকে ঘিরে ধরে। এ সময় তিনি সবার কাছে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করেন। সিটির বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীও ভোটার আকৃষ্ট করতে ছুটে যান মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনে স্কলাশটিকা সংলগ্ল একটি মসজিদে। অপর দিকে ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন পুরান ঢাকার জুরাইনের হযরত খাজা আবুন্নছর মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চিশতি (র.) মাজার সংলগ্ন মসজিদে। এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকার জামে মসজিদে নামাজ আদায় করে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েন। এ সময় তারা পোস্টার লিফলেট মুসল্লিদের মাঝে বিতরণ করেন। নির্বাচিত হলে এলাকার সমস্যার সমাধানে তারা ভোটারদের কাছে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। জুমার নামাজ ছাড়াও সকাল থেকে রাত অবধি প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। এছাড়াও সিটি নির্বাচনে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় রয়েছে মাইকে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার। খোলা হয়েছে নির্বাচনী ক্যাম্প। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী মেয়র পদে প্রতি থানায় প্রার্থীর পক্ষে একটি করে নির্বাচনী ক্যাম্প করা যাবে। এছাড়া বেলা ২টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারে মাইক ব্যবহারের বিধান রয়েছে। এদিকে শুক্রবার থেকে হঠাৎ করেই নির্বাচনী মাঠের চিত্র বদলে গেছে। এত দিন ধরে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা মাঠে নামতে পারছে না এমন অভিযোগ করা হলেও শুক্রবার থেকেই এ অবস্থার পরিবর্তন দেখা গেছে। পুরোদমে সব দল সমর্থিত মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা জমজমাট প্রচারের নেমে পড়েছেন। এখন তারা নির্ভয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ফলে সব দল সমর্থিত প্রার্থীদের অংশগ্রহণের নির্বাচনী মাঠ এখন সরগরম হয়ে পড়ছে। গত ৭ এপ্রিল থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু হলে এত দিন অভিযোগ ছিল বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে নামতে পারছেন না। একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি ছাড়া ঢাকার উত্তর দক্ষিণের দুই সিটিতে প্রথম থেকে এ অভিযোগ জানানো হচ্ছিল বিএনপির পক্ষ থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া এখন প্রায় সব দলের মেয়র, কাউন্সিল প্রার্থীরা নির্ভয়ে সমানভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। ঢাকা উত্তরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শাহীনুর আলমকে এতদিন নির্বাচনীর মাঠে দেখা যায়নি। তার নামে ছিল না কোন পোস্টারও। এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রথম থেকেই নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় থাকলে বিএনপি সমর্থিত কউকে প্রচারে দেখা যায়নি। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে এ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা এলাকা। জানা গেছে, থানায় গুরুত্ব অভিযোগ রয়েছে বা মামলা রয়েছে এমন দু-একজন প্রার্থী ছাড়াও বিএনপির সব প্রার্থীই এখন নির্বাচনে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচনে সক্রিয় রয়েছেন। একমাত্র ঢাকা দক্ষিণের মির্জা আব্বাস এখনও নির্বাচনী মাঠে নামতে পারেননি। কিন্তু তার পক্ষে স্ত্রী আফরোজা আব্বাস নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। শেষ মুহূর্তে এসে উত্তরে বিএনপির সমর্থিত তাবিথ আউয়ালের পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টারর মওদুদ আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, যুগ্মমহাসচিব মোহাম্মদ শাজাহানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এদিকে সরেজমিনে ঢাকার দুই সিটির অলিগলি, পাড়া মহল্লা, ও রাজপথে মেয়র কাউন্সিলরদের উৎসবমুখর প্রচারে অংশ নিতে দেখা গেছে। পারিবারিক গ-ি থেকে শুরু করে সামাজিক আচার অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক কর্মসূচীতের এখন আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে সিটি নির্বাচন। রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে রীতিমতো বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি নিবন্ধ হয়েছে সিটি নির্বাচনকে ঘিরে। আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিশেষ করে সিটি নির্বাচন নির্দলীয় হলেও প্রথম থেকেই দলীয়ভাবে প্রার্থী নির্বাচন বা প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দিতে দেখা গেছে। তিন সিটিতেই এখন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা আলোচনায় রয়েছেন। প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর এখন সব প্রার্থীর বিষয়ে দল থেকেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এদিকে নির্বাচনী প্রচারের রাজনৈতিক গ-ি ছেড়েও আত্মীয়তার বন্ধন এমনকি পারিবারিক পরিচিতিও মুখ্য হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ঢাকার উভয় সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী পরিচিতি করতে মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রতীকও যৌথভাবে টানানো হয়েছে। তবে উভয় সিটি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে নির্বাচনে আচরণ বিধি লংঘনের ঘটনা নেই বললেই চলে। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় এদিনে সকাল থেকেই প্রার্থীরা প্রচারে নেমে পড়েছেন। বিশেষ করে অফিস আদালত বন্ধ থাকায় পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে কাছে পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি প্রার্থীরা। একসঙ্গে অধিক ভোটারকে কাছে পেতে ভোটারদের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে ভোলেননি তারা। নামাজ শেষে রাজধানীর প্রতিটি মসজিদে মেয়র প্রার্থী, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে পোস্টার লিফলেট বিলি করতে দেখা গেছে। এছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠও চষে বেড়চ্ছেন প্রার্থীরা। শান্তির পক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান সাঈদ খোকনের ॥ শুক্রবার সকাল থেকেই পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালান ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকন। দুপুরে তিনি জুরাইনে হযরত খাজা আবুন্নাছর মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চিশতীর (র.) মাজারে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে তিনি সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদের পক্ষের প্রার্থী নয় শান্তির পক্ষের ইলিশ মাছ মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আমার প্রয়াত পিতা আমৃত্যু ঢাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। আমাকে মেয়র পদে নির্বাচিত করলে আমিও বাবার মতো ঢাকাবাসীর সেবা করব। আমাকে আপনারা মেয়র পদে নির্বাচিত করুন। আমি নগরের পিতা নয়, আপনাদের সন্তান হিসেবে ঢাকাবাসীর সেবা করব। এরপর বিকেলে সাইদ খোকন যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ এলাকার ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এদিকে সন্ধ্যায় এ মান্নাফির সভাপতিত্বে রাজধানীর সূত্রাপুরের লালকুঠিতে সাঈদ খোকনের সমর্থনে এক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, মুকুল বোস, সুজিত রায় নন্দি, প্রমুখ আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচনী পথসভায় বক্তৃতা করেন। এ সময় তারা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে সাঈদ খোকনকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান। এদিকে সাঈদ খোকনের পক্ষে সহস্র নাগরিক কমিটি বাসায় বাসায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করেছে। শুক্রবার তারা আজিমপুর কলোনি, ছাপড়া মসজিদ, দোলাইরপাড় ও জুরাইন এলাকায় প্রচারাভিযান চালায়। এ সময় তারা সাঈদ খোকনের পক্ষে লিফলেট বিতরণ ও ভোট প্রার্থনা করেন। মির্জাকে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ দাবি স্ত্রীর ॥ ঢাকার দক্ষিণের বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে তার স্ত্রী আফরোজ আব্বাস রাজধানীর কামরাঙ্গির চর এলাকায় প্রচার চালান। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারে গেলে কর্মীদের ভয় দেখানোর পাশাপাশি তাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এ সরকার স্বৈরাচারী ও জালিম সরকার। খুন-গুম সন্ত্রাসের মাধ্যমে এ সরকার ত্রাসের রাজত্ব জারি করেছে। তিনি বলেন, ব্যালটের মাধ্যমে সরকারের অপকর্মের জবাব দিতে হবে। মিথ্যা মামলা দিয়ে মির্জা আব্বাসকে সামনে আসতে দেয়া হচ্ছে না। মনে করেছিলাম বৃহস্পতিবার তৃতীয় বিচারপতির আদালতে তিনি জামিন পাবেন। কিন্তু সরকার বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে পিছয়ে দিচ্ছে। এ সময় তিনি মির্জা আব্বাসকে জামিন দিয়ে প্রচারের সুযোগ দেয়ার দাবি জানান তিনি। সকাল ১০টায় কামরাঙ্গীর চরের ঝাউচর এলাকায় প্রচারপত্র বিতরণের মধ্য দিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন আফরোজা আব্বাস। সাইকেল র‌্যালিতে আনিসুল হক ॥ এদিকে সবুজ ঢাকা গড়ার প্রত্যাশায় সাইকেল র‌্যালিতে অংশ নিয়েছেন ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক। শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর বছিলা বুড়িগঙ্গা তিন নম্বর সেতু থেকে সাইকেল র‌্যালিটি শুরু হয়ে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ে এসে শেষ হয়। বিডি সাইক্লিস্টের ১৫০তম ‘বাইক ফ্রাইডে’ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে র‌্যালিতে অংশ নেন আনিসুল হক। আনিসুল হকের সাইকেল র‌্যালিতে ৫০টির বেশি সাইকেল অংশ নেয়। র‌্যালি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়-কালে আনিসুল হক বলেন, মেয়র হলে দূষণমুক্ত ও সবুজ ঢাকা গড়ার চেষ্টা করব। রাজধানীর পার্কগুলো দখলমুক্ত করব। এছাড়া উত্তাপ কমিয়ে ঢাকাকে একটি স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে গড়ে তুলব। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী শেখ বজলুর রহমান। এদিকে আজ থেকে আনিসুলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারের নামছেন সহস্র নাগরিক কমিটির ১০টি টিম। তারা আনিসুলের পক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার শুরু করবেন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ সময় উত্তরের প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে টেবিল ঘড়ি মার্কা সম্বলিত পোস্টার, লিফলেট বিতরণ করবেন কমিটির সদস্যরা। সিপিবি সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, সাত মসজিদ রোড, মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন, কাজী পাড়া, সেনপাড়া খিলগাঁও ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ঢাকা শহর এখন লুটেরা, দুর্বৃত্ত মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সাধারণ মানুষ তাদের হাতে বন্দী। গণবিরোধী এই চক্রের হাত থেকে ঢাকাকে রক্ষা করতে হবে। ক্ষমতা কাঠামো বদলে দিতে হবে। আগামী সিটি নির্বাচনে সে লক্ষ্যে ব্যালট বিপ্লব ঘটাতে হবে।
×