ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে সিরীয় নাগরিক নিয়ে বিপাকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

শাহজালালে সিরীয় নাগরিক নিয়ে বিপাকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা

আজাদ সুলায়মান ॥ সিরীয় নাগরিক আলী আল মারাই এখনও আটকা পড়ে আছেন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে। তাঁকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। কারণ তাঁকে না পারছে সিরিয়ায় পাঠাতে, না পারছে দেশে রাখতে। এ অবস্থায় এখন তিনি বিমানবন্দরেই অবস্থান করছেন। কাতার এয়ারওয়েজের তত্ত্বাবধানেই তিনি বিমানবন্দরে একটি কক্ষে সময় কাটাচ্ছেন। আপাতত তাঁকে ট্রানজিট যাত্রী হিসেবেই মর্যাদা দেয়া হচ্ছে। এদিকে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এ ঘটনা শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে অবহিত করা হয়নি। জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেন- আপনার কাছ থেকে শোনার পর আমি এয়ারপোর্টে খোঁজ নিয়ে প্রাথমিকভাবে জানতে পারি, ঘটনা সত্য। তবে এটা এমন কোন সিরিয়াস ব্যাপার নয়। ওই লোক এসেছিলেন এজতেমায়। পরে যখন ফেরত গেলেন তখন ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে তাঁর চেহারার কোন মিল না থাকায় তাঁকে গ্রহণ না করে ঢাকায় ফেরত পাঠায়। এখন কাতার এয়ারওয়েজ তাঁকে সিরিয়ায় পাঠানোর জন্য চেষ্টা করছে। এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত বারোটায় বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, আলী আল মারাইকে নিয়ে ইমিগ্রেশন শাখা ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা দুপুর থেকেই ব্যতিব্যস্ত। তাঁকে কিভাবে সিরীয়ায় ফেরত পাঠানো যায়, কিংবা না পাঠানো গেলে আর কী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেও কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি প্রতিনিধিরা। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের বিশেষ শাখার স্পেশাল সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি এখন কাতার এয়ারওয়েজ দেখভাল করছে। আলী আল মারাই ওই এয়ারওয়েজের যাত্রী, বিধায় বিমানবন্দরের ভেতরে ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে তাদেরই দায়িত্ব। তবে তাঁকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তাঁর সব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যেটা আইনানুগ হয় সেটাই করা হবে। এদিকে আলী আল মারাই কিভাবে, কেন বাংলাদেশে এসেছিলেন- সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমা উপলক্ষে তিনি অন-এরাইভাল ভিসায় ঢাকায় আসেন। তখন তাঁকে দুই সপ্তাহের জন্য ভিসা দেয়া হয়। ভিসার মেয়াদ থাকাবস্থায় তিনি আর সিরিয়ায় ফিরে যাননি। দ্বিতীয় দফায় তিনি আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তবলীগে সময় কাটান। একপর্যায়ে তিনি গত মাসের শেষের দিকে টার্কি এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তুরস্কে যান। কিন্তু সিরীয় নাগরিক হওয়ায়, কিংবা পাসপোর্ট ও ভিসাসংক্রান্ত জটিলতার দরুণ তাঁকে আর তুরস্কে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর থেকেই ফিরতি ফ্লাইটে তাঁকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়। তারপর আবার কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তুরস্ক যাওয়ার পর তাঁকে আবারও ঢুকতে না দিয়ে ঢাকায় ফেরত পাঠায় সে দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এবার যখন তিনি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন ততক্ষণে তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ। ফলে তিনি আর ঢাকায়ও ইমিগ্রেশন দিয়ে দেশের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। এ অবস্থায় তিনি বিমানবন্দরের ভেতরে ইমিগ্রেশন সংলগ্ন নামাজের ঘরে আত্মগোপন করে থাকেন। ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আলী আল মারাইয়ের সন্দেহজনক গতিবিধি থেকেই তাঁকে শনাক্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরেই তাঁকে নিয়ে দেন-দরবার করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। রাতে যখন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন তিনি সিরিয়ায় ফিরে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। এ সময় দেখা যায়, পাসপোর্টে তাঁর ভিসার মেয়াদও শেষ। এ বিষয়ে কাতার এয়ারওয়েজের একজন কর্মকর্তা শুক্রবার জনকণ্ঠকে বলেন, সিরিয়ায় এখন যুদ্ধ-বিগ্রহ চলছে। সেখানে ঢাকা থেকে কোন ফ্লাইট যেতে পারছে না। এছাড়া আলী আল মারাই নিজেও সিরিয়ায় যেতে ইচ্ছুক নন। এসব কারণেই জটিলতা। তারপরও চেষ্টা চলছে তাঁকে দ্রুত সিরিয়া না পারলেও অন্তত তুরস্কে ফেরত পাঠানোর। এটি এখন নির্ভর করছে সরকারের ওপর মহলের সিদ্ধান্তের ওপর। এ জাতীয় ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে হবে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেই। তাঁকে আদৌ ফেরত পাঠানো হবে, নাকি কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে- সেটাই এখনও অনিশ্চিত। এ বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কাতার এয়ারওয়েজও কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
×