ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেল গাড়ি ঝমাঝম

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

রেল গাড়ি ঝমাঝম

রেল লাইন বহে যায় সমান্তরাল। কু ঝিক ঝিক শব্দ তুলে চলে রাজকীয় ভঙ্গিমাতে। তবে রাজবাড়ীর রেল মাথা বিগড়ে গেলে বহে উল্টোপথে। আর তা চালক ছাড়াই। এমনটাই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে। দায়িত্বহীনতা, কর্তব্যহীনতা, অবহেলা-গাফিলতির পরিমাণ অনেকটা হলেই এমন বিনাচালকে রেল ইঞ্জিন ছুটতে পারে এক দু’কিলোমিটার নয় টানা ২৬ কিলোমিটার। গিনেস বুকে নাম লেখানোর ঘটনা যেন এটি। চালক, সহকারী চালকসহ পরিচালকবিহীন অবস্থায় ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে উল্টোপথে ছুটে চলে ঝমাঝম। রাজবাড়ী-ফরিদপুর লাইনে যাত্রীবাহী আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালক ও গার্ড ছাড়াই রবিবার সকালে ‘রহস্যজনকভাবে’ অটো ব্যাক গিয়ারে পড়ে এক ঘণ্টায় ৪টি স্টেশন পার হয়ে যেতে থাকে। প্রায় অর্ধশত যাত্রীর চিৎকার চেঁচামেচিতে শেষতক টিকেট চেকার অনেক চেষ্টা চালিয়ে ট্রেনের হোসপাইপ খুলে ট্রেনটিকে থামান। অবশ্য ট্রেনটি থামাতে অন্য একটি ইঞ্জিন পাঠানো হলে তা পৌঁছানোর আগেই ট্রেনটি থেমে যায়। মারাত্মক দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই মেলে এভাবেই। ট্রেনটি সকাল ৮টা ১০ মিনিটে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর যাওয়ার প্রস্তুতিপর্বে ছিল। ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে চালক ও সহকারী চালক ইঞ্জিন চালু রেখে চা পান করতে নিচে নামেন। এ সময় ট্রেনটি অটোমেটিক চালু হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, উল্টোপথে চলতে থাকে। এই ঘটনা বাংলাদেশ রেলওয়ে কিভাবে চলছে সেই করুণ দৈন্যদশাকেই যেন তুলে ধরল। কতটা কর্তব্যবোধ ও দায়িত্বহীনতা এবং অবহেলার মধ্যে চলছে রেলওয়ে। চালকহীন এই উল্টোপথে ট্রেন চলার নেপথ্যে সামান্য ভুল বা অবহেলা নয়, বরং যুগপৎ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতাই যে কাজ করছে, তা স্পষ্ট। নিয়মনীতির প্রতি সামান্য ভ্রƒক্ষেপ বা তোয়াক্কা না করার সংস্কৃতি যে তারা লালন করে আসছে, তারই যেন প্রতিফলন ঘটানো হলো। নিয়ম রয়েছে, ট্রেন ছাড়ার ৪৫ মিনিট পূর্বে চালক ও সহকারী চালকের ইঞ্জিন রুমে অবস্থান নেবেন। ইঞ্জিন চালু করার পর তাদের রুম ছাড়ার সুযোগ নেই। গার্ডের ট্রেনে অবস্থান নেয়ার বিধান ৩০ মিনিট আগে। কিন্তু এসব নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সবাই নেমে পড়েন স্রেফ চা পানে। অথচ ট্রেনেই রয়েছে ক্যান্টিন। ঘটনাটি সামান্য হতে পারে রেল হয়ত কর্তৃপক্ষের কাছে। রেলের মতো এক গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে যেখানে চরম সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন সেখানে দায়িত্বহীনতার এমন নজিরের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়া সঙ্গত। এই ঘটনা কর্তব্যহীনতার যে নিদর্শন রেখেছে তার পুনরাবৃত্তি কারও কাম্য হতে পারে না। ঘটনা তদন্তে তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে পুলিশ ও রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন গঠিত কমিটি দায়ীদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য যথাযথ সুপারিশও করবেন। রেল মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে গুরুত্বহীন যেন না ভাবেন- সেটাই প্রত্যাশা।
×