ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেট্রোলবোমা থেকে নীরব বিপ্লবের পথে

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২০ এপ্রিল ২০১৫

পেট্রোলবোমা থেকে নীরব বিপ্লবের পথে

তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত জোটকে অবরোধ-হরতাল নামক নাশকতা হতে সাময়িক সরিয়ে আনার পথ তৈরি করে দিলেও তারা যে কোন অজুহাতে আবার যে পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে না, তার কোন নিশ্চয়তা মেলে না। আর এই নির্বাচন হোক সহিংসতামুক্ত এমনটাই কাম্য জনগণের। গত তিন মাসের বেশি যে নারকীয় অবস্থা সৃষ্টি করে মানুষ হত্যাসহ সম্পদহানি ঘটিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট, তা থেকে নিজেদের উদ্ধার করার মোক্ষম সুযোগ এনে দিয়েছে বলে তারা মনে করছে। এই সুযোগে নাশকতা, সন্ত্রাস, বোমাবজির সঙ্গে জড়িতদের মুক্ত করা ও মামলা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগেরও ক্ষেত্র পেয়েছে। আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছানো পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ নামক অবস্থান হতে সরে না আসার ঘোষণাও তাদের অসারে পরিণত হয়েছে। নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্বাচন তাদের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে এসেছে বৈকি। স্বাভাবিক রাজনীতির ধারায় দলগুলোকে ফিরে আসার জন্য সরকার একটা পথ তৈরি করে দিয়েছে। নির্বাচনকে উৎসবমুখর পরিবেশে নিয়ে যেতে চাইছে সরকারী দল। নির্বাচন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অবাধ করার জন্য সব পক্ষই চাইছে। এখনও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি, যা এদেশে হয়ে থাকে। বরং প্রার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশ এনে দিতে বদ্ধপরিকর যেন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে নিজের ও দলের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছেন জঙ্গীদের নেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বেগম জিয়া। জনগণের কাছে তিনি দলীয় প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইতে প্রচার ও গণসংযোগে নেমেছেন। অবশ্য ২০ দলীয় জোট মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে অর্থহীন দাবি তুলে মানুষ হত্যায় সংঘবদ্ধ হয়ে জঙ্গীবাদের প্রসার ঘটিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্বকে বিলীন করে তালেবান, আল কায়দার অনুসারী হয়ে তাদের রাজনৈতিক সহায়তা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে। বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে যে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটিয়েছেন, এমনকি শেখ হাসিনার প্রাণনাশে গ্রেনেড হামলাও চালানো হয়েছিল। সে সব বিচারাধীন এখনও। সর্বশেষ গত তিন মাসের বেশি সময় বেগম জিয়ার নির্দেশে তাঁর অনুসারী বিএনপি, জামায়াত, শিবির, যুবদল, ছাত্রদলসহ আরও সংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডার পেট্রোলবোমা মেরে সারাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মানে এই নয় যে, সে সব অপরাধ ঢাকা পড়ে গেছে। সরকারী দল তাদের উদারতায় বিএনপিকে স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আসার যে সুযোগ করে দিয়েছে, একই স্থানে যদি বিএনপি থাকত তবে তার উল্টোটাই হতো। বেগম জিয়া পরিচালনায় জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এক ধরনের চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে খুন, জখম, সম্পদহানি অবলীলায় ঘটানোর পর আজ তারা সাফসুতরো হতে চাইছেন নির্বাচনে অংশ নেয়ার আড়ালে। সরকারও সে ক্ষেত্র তাদের দিয়েছে বলেই আজ বেগম জিয়া গণসংযোগ করতে পারছেন নির্দ্বিধায়। তিন মাসের বেশি ঘরবাড়ি ছেড়ে অফিসে বসে সরকার উৎখাতের লক্ষ্য নিয়ে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছেন, তার দায়ভার হতে আর যাই হোক নির্বাচনে অংশ নিয়েও মুক্ত হতে পারবেন তা নয়। চূড়ান্ত নীতিহীনতা বিএনপি-জামায়াত জোটকে অর্ধোন্মাদ, মেরুদ-হীন, অসুস্থ মানসিকতার অভাবগ্রস্তে পরিণত করেছিল বলেই পেট্রোলবোমার বিস্তারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তারা। বিবেকের দংশন তাদের বিদ্ধ করেনি। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাতে যে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হয়, তা তারা ভুলে গিয়ে ষড়যন্ত্রের অন্ধকার পিচ্ছিল পথে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলন করার বিষয় না থাকায় মধ্যবর্তী নির্বাচন নামক বায়বীয় দাবিতে অবরোধ-হরতাল ঘোষণা করেও মাঠে রাজনৈতিক নেতাকর্মী নামাতে পারেননি। পেরেছেন জেএমবি, হিযবুত তাহ্রী, হেফাজত নামক জঙ্গীবাদীদের শিবির-জামায়াতের সহায়ক হিসেবে। তারপর বাংলাদেশ দেখেছে আগুনে পোড়া বাসযাত্রী, বার্ন ইউনিটে আর্তনাদ, আর মৃত মানুষের সারি। গণহত্যার দায় সরাসরি অস্বীকার করে বেগম জিয়া বলেছেনও তাঁর আন্দোলন যৌক্তিক। খালেদা জিয়া তাঁর তিন মাসের অন্তঃপুরবাসিনীর লেবাস আর খোলস খুলে ফেলে নির্বাচনী মাঠে নেমেই সবার জন্য সমান সুযোগ চাইছেন। তাঁর নির্দেশে যারা নাশকতাকালে ধরা পড়ে জেলে, তিনি তাদের মুক্তি চাইছেন। এদের দলের নেতাকর্মী দাবি করে নির্বাচনী প্রচারের সুবিধার্থে মুক্ত করার দাবি করছেন। কিন্তু যারা মানুষ হত্যার আসামি, তাদের বিচারের আগে খালাসদান যৌক্তিক কতটা তা তিনি বলেন না। একই অভিযোগে তিনিও অভিযুক্ত। এ নিয়ে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, আগামী ১৭ মে তার তারিখ পড়েছে। অর্থাৎ মানুষ হত্যার অপরাধ হতে পার পাওয়া খুব সহজতর হবে তা মনে হয় না। বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচন পরিচালনাকারী সহস্র নাগরিক কমিটি দাবি করছে, তাদের কর্মীদের পুলিশ গ্রেফতার করছে। বিস্ময়কর যে কমিটির সদস্যসচিব, যিনি এই দাবি করছেন, তাঁর বিরুদ্ধেও মাসখানেক আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে দায়ের করা মামলায়। তিনি প্রকাশ্যে গলাবাজি করে বেড়াচ্ছেন, টিভিতে টক শোতে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দাবি করছেন অথচ তাঁকে গ্রেফতার বা হয়রানি কিছুই করা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁরা এই দাবি করছেন। কমিশন কোন্ বিধানে ও কিভাবে হত্যা ও নাশকতাসহ অন্যান্য মামলার আসামিদের মুক্ত করে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ করে দিতে পারে, তা পরিষ্কার করে বলে না। নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা দেখা দিলে তা হতে সরে আসার পথটি খোলা রাখার এটাও একটা পন্থা বটে। নির্বাচনে হারা-জেতা যাই হোক, বিএনপি এখন নিজেদের যতই ধোপদুরস্ত বলে প্রচার করুক না কেন, জঙ্গী, সন্ত্রাসবাদের ছায়াতলে আবার ফিরতে চাইবেই। কারণ বিএনপিকে এখনও জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে হয়। যদিও নিজেদের মুখোশ ঢাকতে যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসি নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি। গত তিন মাস নাশকতা চালানোর নেপথ্যে ছিল অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের জেল হতে বের করে আনা। বেগম জিয়া সরকারকে টেনেহিঁচড়ে নামানোর জন্য কর্মীবাহিনীর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার সবকিছুই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বেগম জিয়া ও তাঁর ‘পলাতক’ পুত্র এবং জামায়াত ছাড়া দেশের আর কেউ ক্ষমতাসীন সরকারের ওপর ক্ষিপ্তÑ এমনটা শোনা যায় না। জনগণ বরং গত তিন মাসে ভীষণ ক্ষুব্ধ বেগম জিয়ার সহিংস কর্মে। আর তা দমনে শ্লথগতির কারণে সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিল। বেগম জিয়া প্রচারণাকালে যদি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাথী কিংবা স্কুল, কলেজ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মুখোমুখি হন তবে জানবেন দেশের শিক্ষাব্যবস্থাসহ ভাবী প্রজন্মকে ধ্বংস করতে কী নারকীয় ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। ুধভধৎধিুবফ@ুধযড়ড়.পড়স
×