ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গমনেচ্ছুরা হতাশাগ্রস্ত

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ আবার স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২০ এপ্রিল ২০১৫

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ আবার স্থগিত

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় সরকারীভাবে কর্মী নিয়োগ আবার স্থগিত হয়ে গেছে। এর আগে আরও দুই দফা কর্মী নিয়োগ স্থগিত করে দিয়েছিল দেশটির কর্তৃপক্ষ। পরে আলোচনা করে কর্মী পাঠানো শুরু করা হয়। এবার দীর্ঘ সময় ধরে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, অবৈধ অভিবাসীর অনুপ্রবেশের হার বেড়ে যাওয়ায় কর্মী নিয়োগ স্থগিত রাখতে পারে। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো না গেলে বাজারটি হারাতে হতে পারে। দীর্ঘ সময় বাজারটি বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালের শেষদিকে কর্মী নিয়োগের জন্য মালয়েশিয়া-বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে জি টু জি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করার শর্তে বাজারটি খুলে দেয় মালয়েশিয়া। কয়েক ধাপে ১০ হাজার ৪শ’ কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। বেশ কয়েক ধাপে মালয়েশিয়া সাড়ে ৩ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। এরপর গত কয়েক মাস ধরে দেশটিতে আর কোন কর্মী জি টু জি পদ্ধতিতে যায়নি। জানা গেছে, র‌্যান্ডম সিলেকশনের মাধ্যমে এক্সসেস টু ইনফর্মেশন (এটুআই) সারাদেশ থেকে ১০ হাজার ৪শ’ কর্মী বাছাই করে দেয় একই বছর। কর্মী সিলেকশনের পর ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৩ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পেরেছেন। বাকিরা অপেক্ষায় রয়েছেনÑ কবে তারা মালয়েশিয়া যেতে পারবেন জানে না কেউ। মালয়েশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেনি। তবে গত বছরের শেষদিক থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত কর্মী নিয়োগের কোন চাহিদাপত্র পাঠায়নি। ৭ হাজার কর্মী অপেক্ষমাণ থেকে এখন তাঁরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। আদৌ তাঁরা মালয়েশিয়া যেতে পারবেন কিনা সেই আশঙ্কা করছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বেশি কিছু না বলে শুধু বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ বন্ধ হয়নি। কিছু দিন ধরে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকার অভিবাসীদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপদ অভিবাসনের জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। জানা গেছে, মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ২০১১ সালের আগস্টে ৬-পি প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত ফিঙ্গারপ্রিন্ট করে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে নির্দেশ দেয় অবৈধ হয়ে পড়া কর্মীদের। মালয়েশিয়ায় প্রায় ২ লাখ ৬৮ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী ছিল। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এসব কর্মী বৈধ হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। ওই সময় বেশিরভাগ কর্মী বৈধ হয়েছেন। কিন্তু অনেকে নাম রেজিস্ট্রেশন করলেও দালাল বা এজেন্টদের খপ্পরে পড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার কর্মী অবৈধ হয়ে গেছে। এই অবৈধ কর্মীদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাছাড়া সাগরপথে নৌকায় যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন তারাও অবৈধ হিসেবে সেখানে কাজ করছেন। এর বাইরেও ছাত্র ও টুরিস্ট ভিসায় অনেকেই মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। ছাত্র ও টুরিস্ট ভিসায় গিয়ে দালালদের মাধ্যমে গোপনে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করছেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ৫ লাখ বাংলাদেশী অভিবাসী মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন। বাংলাদেশীর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার কর্মী অবৈধ থাকতে পারে। এই কর্মীরা বিভিন্ন দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে বৈধ হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। এখন তাদের বৈধ হওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। পুলিশে ধরা পড়লে তাদের হয় জেলে যেতে হবে, না হয় দেশে ফিরে আসতে হবে। এই অবৈধ কর্মীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সাগর ও আকাশপথে অবৈধ কর্মীর সংখ্যা বাড়ছেই। অবৈধভাবে কর্মী যাওয়া বন্ধ না হলে বৈধভাবে কর্মী পাঠানো মুশকিল হবে। এ কারণে বৈধপথে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বন্ধ রাখতে পারে। কর্মী নিয়োগের বিষয়ে দুই দেশের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি মাঝে মধ্যেই কর্মী নিয়োগের বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসেন।
×