ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের বোলিং ঝলকও দেখল পাকিরা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২০ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাদেশের বোলিং ঝলকও দেখল পাকিরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কী যে খেলে চলেছে বাংলাদেশ। একবাক্যে দুর্দান্ত! প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে পাত্তাই দিচ্ছে না। প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটিং চমক দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই চমকে ৭৯ রানে হেরেছে পাকিস্তান। এবার পাকিস্তানকে বোলিং ঝলকও দেখিয়ে দিল বাংলাদেশ। তাতে করে ২৩৯ রানের বেশি করতেই পারল না পাকিস্তান। টস জিতে এবার পাকিস্তান নিল ব্যাটিং। মনে করেছিল, প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যেমন আগে ব্যাটিং করে ৩২৯ রান করে চাপে ফেলে দিয়েছিল। তাতে করে ২৫০ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। এবার উল্টো করবে। চাপে ফেলার ধান্ধা করেছিল। কিন্তু তা কাজেই দিল না। বাংলাদেশ বোলার মাশরাফি, তাসকিন, আরাফাত, রুবেল, নাসির, সাকিব, মাহমুদুল্লাহরা এমন বোলিংই করলেন, জয়ের জন্য যা যথেষ্ট। আগে এমন হতো, বোলাররা ভাল করলে; ব্যাটসম্যানরা ভাল করতে পারে না। আবার ব্যাটসম্যানরা বড় স্কোর স্কোরবোর্ডে জমা করে দিলে বোলাররা এসে প্রতিপক্ষের লাগাম টেনে ধরতে পারে না। ডিসেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ থেকেই সব পাল্টে যেতে থাকে। ব্যাটসম্যানরা একটা ভিত তৈরি করে দিলে বোলাররা এসে প্রতিপক্ষকে আটকে দেয়। বোলাররা প্রতিপক্ষের স্কোরে লাগাম টেনে ধরলে, ব্যাটসম্যানরা এসে তা অতিক্রম করে জয় তুলে নেয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে তাই দেখা গেছে। ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোর্ডে জয়ের ভিত গড়ে দেয়া রান তোলার পর বোলাররা মিলে পাকিস্তানকে আটকে দিয়েছে। এর সুবাদে ১৯৯৯ সালের পর ১৬ বছর পর আবারও পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদও মিলে গেছে। এবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও জয়ের সুবাতাস পাওয়ার মতোই নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বোলাররা। শুরুতে অবশ্য আজহার আলী ও সরফরাজ আহমেদ এমন ব্যাটিং করছিলেন, মনে হচ্ছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে না রবিবার উৎসব করার বদলে হতাশাই যুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু যেই রুবেল হোসেন প্রথম ওভার করতে আসলেন দলের সপ্তম ওভারে, প্রথম বলেই সরফরাজকে (৭) ফিরিয়ে দিলেন। সেই ওভারটিতে আবার কোন রানই দেননি রুবেল! ৭ ওভারেই যে ৩৬ রান তুলে ফেলেছিল পাকিস্তান, তাতে ভাটা পড়ে গেল। শুধু কী ভাটা পড়ল, পাকিস্তান তো আর মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারল না। এরপর আর মাত্র ১ রান যোগ হতেই রানের খাতা খোলার আগেই হাফিজকে সাজঘরে ফেরান আরাফাত সানি। ৫৮ রানে দুর্দান্ত খেলতে থাকা আজহারকে (৩৬) সাকিব, ১ রান যোগ হতেই ফাওয়াদকে আউট করে দিলেন নাসির। পাকিস্তানের ইনিংস ছন্নছাড়া হয়ে পড়ল। দ্রুতই ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারল না পাকিস্তান। ঘুরে দাঁড়াতে দিল না বাংলাদেশ। ৭৭ রানে রিজওয়ানকে (১৩) যখন এলবিডাব্লিউ করে দিলেন সাকিব, এরপর যেন শুধু পাকিস্তানকে দ্রুত অলআউট করার ক্ষণই গননা শুরু হতে থাকে। সেই থেকে একটি বিষয়ের দিকেই সবার নজর যেতে থাকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে কম রানে পাকিস্তানের আউট হওয়ার রেকর্ডটি কত? পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেল ১৯৯৯ সালে যে বিশ্বকাপে পাকিস্তান প্রথমবার বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল, সেই ম্যাচে যে ১৬১ রানে অলআউট হয়েছিল; সেটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার স্মৃতি। তাহলে কী পাকিস্তানকে এবার তারচেয়েও কম রানে বেঁধে ফেলতে পারবে বাংলাদেশ? এমন যখন ভাবনা হচ্ছে, তখন ধীরে ধীরে একটি জুটিও দাঁড়িয়ে গেল। ষষ্ঠ উইকেটে দেখা গেল হারিস সোহেল ও সাদ নাসিম মিলে ৭৭ রানের জুটিও গড়ে ফেললেন। এ জুটি যেন পাকিস্তানের মানও বাঁচিয়ে দিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে কম রান করা থেকে বাঁচিয়ে দিলেন হারিস ও সাদ। ১৫৪ রানে হারিসকে (৪৪) বল করে যখন নিজেই ক্যাচ ধরলেন মাশরাফি, তখন স্টেডিয়ামে যেন উৎসবের আবহ তৈরি হয়ে গেল। প্রথম ওয়ানডেতে খেলতে পারেননি মাশরাফি। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে সেøা ওভার রেটের জন্য এক ম্যাচ নিষিদ্ধ থাকায় খেলা হয়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে আবার যখন জিতল বাংলাদেশ, সেই ম্যাচে তাই মাঠে থেকে উদযাপনও করতে পারলেন না। ক্রিকেটপ্রেমীরাও তাই তাদের প্রিয় ক্রিকেটারকে খেলতে দেখতে পেলেন না। এবার যখনই মাশরাফি বল করলেন, তখনই দর্শকরা আওয়াজ তুলল। যখন উইকেট নিলেন, তখন যেন স্টেডিয়াম ‘মাশরাফি, মাশরাফি’ শব্দে ফেটেই পড়তে চাচ্ছিল! ১৫০ ওয়ানডে খেলতে নেমে মাশরাফি প্রথম উইকেটটি নিতেই আনন্দ যেন শুরু হয়ে গেল। মাশরাফি জুটি ভাঙ্গলেন। কিন্তু সেই যে উইকেট পড়ল পাকিস্তানের, আর একটি উইকেটও পড়ল না। সপ্তম উইকেটে গিয়ে সাদ ও ওয়াহাব ৮৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে অনেক দূরই নিয়ে গেলেন। সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ড জুটিই গড়ে ফেললেন। সাদ ৭৭ রানে ও ওয়াহাব ৫১ রানে অপরাজিতও থাকলেন। বাংলাদেশের সামনে জিততে ২৪০ রানের টার্গেট দাঁড় হলো। তবে বাংলাদেশের বোলিংয়ের সময় একজন যেন দর্শকদের ভালবাসা একটু বেশিই পেতে শুরু করেছেন। বলতে গেলে আদায় করে নিচ্ছেন। তিনি রুবেল হোসেন। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওভারে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠানোয় ‘হিরো’ হয়ে গেছেন রুবেল। সেই রুবেল রবিবার কী বোলিংই না করলেন। প্রথম দুই ওভারে তো কোন রানই দিলেন না! আবার নিলেন একটি উইকেটও। পাকিস্তানের ইনিংসে যে ধস নামা শুরু হয়, সেটিতো রুবেলে কল্যাণেই। রুবেল এতটাই আগ্রাসী বোলিং করেছেন, পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা ভয় পেয়েই গেছেন। তাই তো শেষে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, রুবেল খুব বেশি উইকেট না নিলেও রান দিয়েছেন ৭ ওভার করে ২ মেডেনসহ ২৭ রান! ৭ ওভার বা তার বেশি করে এর আগে ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ ওভারে ২৩ রান যে দিয়েছিলেন সেটিই রুবেলের দুর্দান্ত বোলিং ছিল। কিন্তু একটি হতাশা যেন সবার মাঝে থেকেই গেল। রুবেলের আরও ৩ ওভার থাকতেও আর বোলিং করা নো হলো না এ পেসারকে। ফল কী হলো? পাকিস্তান যেখানে ২০০ রানও করার কথা নয়, সেখানে ৬ উইকেটে ৫০ ওভারে ২৩৯ রান করে ফেলল। তবে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটিং চমক দেখার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বোলিং ঝলক ঠিকই দেখে নিল পাকিস্তান। সাকিব ২, মাশরাফি, আরাফাত, রুবেল, নাসির ১টি করে উইকেট নিলেন।
×