ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আসছে ভরা ইলিশ মৌসুম

জেলেরা এখন বৃষ্টির অপেক্ষায়

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২১ এপ্রিল ২০১৫

জেলেরা এখন বৃষ্টির অপেক্ষায়

শংকর লাল দাশ, গলাচিপা থেকে ॥ আর ক’দিন বাদেই আসছে ইলিশ মৌসুম। আর একে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীর সাগরপাড়ের রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা উপজেলার জেলে পল্লীগুলোতে চলছে সাজসাজ রব। চলছে সাগরে ইলিশ আহরণের পূর্ণ প্রস্তুতি। জেলেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জাল নৌকা মেরামতে। মহাজন-আড়তদাররা ব্যস্ত জেলেদের দাদন দিতে। বরফ কলগুলোতে চলছে ধোয়া মোছা ও ইঞ্জিন সচল রাখার কাজ। মোটকথা ইলিশ নিয়ে যেন জেলেরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। স্থানীয় মৎস্য দফতরের হিসাব মতে গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় জেলে পরিবারের সংখ্যা ১৬ হাজার ৯শ’। ইলিশ মৌসুমে এ সংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যায়। এলাকার বহু পরিবার আছে, যারা বংশপরম্পরায় জেলে নয়। অথচ ইলিশ মৌসুমে নেমে পড়ে সাগরে। দীর্ঘ প্রায় সাত মাস নিষেধাজ্ঞার পরে সরকারীভাবে জুন থেকে শুরু হচ্ছে ইলিশের ভর মৌসুম। কিন্তু তার বহু আগে থেকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে ইলিশ আহরণের মৌসুম শুরু হয়ে যায়। ইলিশ শিকারি জেলেরা জানিয়েছেন, মূলত বৈশাখ মাস থেকেই তারা সাগরে ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নেন। কেউ কেউ বৈশাখে রীতিমতো নেমে পড়েন সাগরে। এ সময়টাতে সাগরে দখিনা বাতাস শুরু হয়। এতে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। সঙ্গে বজ্রবৃষ্টি হলে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করে। এ আশাতে অনেকেই আগাম প্রস্তুতি নেয়। সাগরপাড়ের বড় মৎস্য বন্দর চরমোন্তাজ ও মৌডুবী ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার জেলে পল্লীগুলোর বাসিন্দাদের মাঝে যেন ঈদের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। জেলেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জাল-নৌকা মেরামত-সংস্কারে। অনেকে যেমন নতুন নৌকা-ট্রলার বানাচ্ছে। আবার অনেকে পুরনোটাকে জোড়াতালি দিয়ে নতুন রূপ দিচ্ছে। নতুন জাল বুনছে অনেকে। কেউ কেউ পুরনো জাল মেরামত করছে। জেলে পল্লীগুলোতে জাল নিয়েই ব্যস্ততা সবচেয়ে বেশি। এমনকি ঘরের নারীরাও জাল বোনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। চরমোন্তাজের জেলে আবদুল জলিল ফরাজী জানান, নৌকার আকার ভেদে জালের পরিমাণ নির্ধারিত হয়। কোন কোন নৌকায় ৮-১০ মণ পর্যন্ত জাল লাগে। মেশিনের জালের চেয়ে হাতে বোনা জাল বেশি ঠেকসই হয়। এ কারণে আরও ১-২ মাস আগ থেকে জাল বোনা শুরু হয়ে গেছে। দ্বীপআগুনমুখার জেলে লালন ফকির জানান, তারা তিন পুরুষের জেলে। ইলিশের ওপর ভর করেই চলে জীবন। ঘরের নারী-পুরুষ সবাই এখন ব্যস্ত জাল বোনায়। যে কোন মুহূর্তে বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। তাই যাতে সে সুযোগ নষ্ট না হয়, এ জন্য দিনরাত চলছে জাল বোনার কাজ। আরও কয়েকটি জেলে পল্লী ঘুরে ইলিশ মৌসুম কেন্দ্র করে দেখা গেছে একই রকমের ব্যস্ততা। ইলিশ মৌসুম এবং জেলেদের ব্যস্ততা প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, খাতা-কলমে যাই থাক, বাস্তবে ইলিশ মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। সাগরে কিছু কিছু বড় সাইজের ইলিশ ধরাও পড়ছে। আর তা দেখে জেলে পল্লীগুলোর মানুষদের ব্যস্ততা বেড়েছে, এটিই স্বাভাবিক। তিনি আরও জানান, ইলিশ মৌসুম কেন্দ্র করে বিভিন্ন খাতে পটুয়াখালী অঞ্চলে প্রতিবছর নতুন করে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়। এর বেশির ভাগটাই আসে মহাজন-আড়তদারদের কাছ থেকে। এ নিয়ে চলে নানা রকমের প্রতিযোগিতা। যে কারণে এখন ইলিশ মৌসুম কেন্দ্র করে জেলে পল্লীগুলোর কয়েকদিন আগের চিরচেনা দৃশ্য পাল্টে গেছে। কে কার আগে সাগরে নামবে, এ নিয়েও চলছে দ্বন্দ্ব। মোটকথা আসন্ন ইলিশ মৌসুম পাল্টে দিয়েছে এখানকার জীবনযাত্রা।
×