ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভূমধ্যসাগরে নৌযানডুবিতে এ বছর মৃত্যু হয়েছে দেড় হাজার

সমস্যা সমাধানে নীতি তৈরি ॥ হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২১ এপ্রিল ২০১৫

সমস্যা সমাধানে নীতি তৈরি ॥ হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপ

লিবিয়ার উপকূলের অদূরে প্রায় ৭শ’ অভিবাসী নিয়ে জাহাজডুবি ইউরোপে অভিবাসনের প্রশ্নটিকে আলোচনার শীর্ষে নিয়ে এসেছে। বিষয়টি কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সেটা এখন অনেক দেশ ও পর্যবেক্ষকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসীদের ভূমাধ্যসাগরে গাড়ি দিয়ে ইউরোপ পৌঁছানোর মরিয়া প্রচেষ্টায় তা তারা যে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে তার গুরুত্ব আরেকবার দৃশ্যমান হয়েছে লিবীয় উপকূলের অদূরে ব্যাপক প্রাণহানির আরেকটি জাহাজডুবির দুর্ঘটনা। এতে প্রায় ৭শ’ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটা নিয়ে এ বছর একই ধরনের দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যে নিহতদের সংখ্যায় আরও দেড় সহস্রাধিক লোক যুক্ত হলো। এতে ২০১৪-২০১৫ সালের চেয়ে বেশি সাল প্রাণঘাতি হয়ে দেখা দিয়েছে। ‘১৪ সালে ভূমধ্যসাগরে এ ধরনের শোকাবহ ঘটনাটি একটি রেকর্ড বর্ষ হয়ে উঠছিল। তখন নৌযান ডুবিতে ৩ সহস্রাধিক লোক প্রাণ হারায়। ইউরোপের দক্ষিণ প্রান্তের অন্তত ১২টি দেশে চেপে বসা অর্থনৈতিক অবক্ষয়, যুদ্ধ, দমনপীড়ন ও বেকারত্বের দরুন উত্তর অভিমুখে অভিবাসনের সংখ্যার স্ফীতি ইউরোপের কর্তৃপক্ষগুলোকে অভিভূত করে ফেলেছে। দেশগুলো এই সমস্যার মোকাবেলার একটি একক সমন্বিত নীতি প্রণয়নে হিমশিম খাচ্ছে। সমালোচকদের মতে তাদের কিন্তু বিবেকশূন্য মানুষ পাচারকারীদের হাতে খেলতে হচ্ছে। ইউরোপে অবৈধভাবে আগমনকারী অভিবাসীদের সংখ্যাকে একটি স্থায়ী সঙ্কট হিসেবে চিহ্নিত করা কোন অতিরঞ্জন হবে না। তবে এই সমস্যার আওতার মধ্যেও ২০১৫ সাল বিশেষভাবে একটি কঠিন বছর হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। গত বছর ইতালির অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান মেরি নস্ত্রাম হাজার হাজার মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছিল। তবে ওই ইউনিটটি গত বছর সরে দাঁড়ানো অনেক দুর্বল ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউরোপীয় উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনাকারী ইউনিট দায়িত্ব গ্রহণ করে। অভিবাসীদের বিপুলসংখ্যার জন্য অনেক কারণই দায়ী। প্রতিবছর আফ্রিকার সাহারা সন্নিহিত অঞ্চল বিশেষ করে ইরিত্রিয়া ও সোমালিয়া থেকে হাজার হাজার লোক চরম অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা, যুদ্ধ পরিস্থিতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বাঁচতে ইউরোপে পালিয়ে আসে। খুব সাম্প্রতিককালে লিবিয়া ও সিরিয়ার সংঘাত ও ভেঙ্গে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে আরও অধিক সংখ্যক লোক চলে আসে। জাতিসংঘ শরনার্থী সংস্থা ইউএসএইচসিআর জানায়, ২০১১ সালের পর থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি সিরীয় ইউরোপে চলে এসেছে। এটা একটা বড় সংখ্যা হলেও যে ৩০ লাখের বেশিরভাগ প্রতিবেশী জর্দান ও তুরস্কে পালিয়ে যায় তার তুলনায় এই সংখ্যা একটা ক্ষুদ্র অংশ। যেসব নেটওয়ার্ক লোকদের যুদ্ধবিহীন দেশগুলো থেকে ভূমধ্যসাগরের আফ্রিকান উপকূলে নিয়ে আসে এবং তারপর কৌশলে তুলে দেয় তাদের সদস্যরা অবধারিতভাবে অপরাধী নয়। এসব নেটওয়ার্ক বহুজাতিক, ঘরোয়া স্বভাবের এবং সভা পরিবর্তনশীল। এসব সংগঠিত চক্রের সঙ্গে হবু অভিবাসীদের খুব কমই যোগাযোগ হয়। একটি মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া লোকেরা কিভাবে গাজার একটি ট্রাভেল অফিসের মাধ্যমে তাদের সমুদ্রযাত্রার ব্যবস্থা সম্পন্ন করে তা বর্ণনা করেছে। তারা টুরিস্ট ভিসায় নিজেদের খরচে মিসরীয় বন্দর দামিয়েত্রায় যায়। তারপর তাদের একটি বাসে করে নির্দিষ্ট জাহাজে উঠিয়ে দেয়া হয়। সাগরে তিনবার তাদের জাহাজ পরিবর্তন করা হয়। তবে, এগুলো এমন গমনপথ যার সন্ধান লাভ অনেক জটিল। ইতালীয় উদ্ধারকারী ইউনিট মেরি নন্ত্রাম প্রায় এক বছর দায়িত্ব পালন করে। তাদের উদ্ধারকাজে ইতালীয় নৌবাহিনীর প্রায় ৯০ লাখ ইউরো ব্যয় হয়। -গার্ডিয়ান অনলাইন
×