ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২২ এপ্রিল ২০১৫

সঙ্কটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্ব অর্থনীতিতে সঙ্কট যেন কাটছেই না। প্রতিনিয়ত সঙ্কটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির নতুন সঙ্কট হচ্ছে সরকারী প্রতিটি সংস্থা, ব্যাংক কুঋণের ভারে জর্জরিত। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় ব্যাংক কুঋণের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট যদি না কাটে অথবা হ্রাস না পায় তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো। সারাবিশ্বে রফতানি আয় কমে যাবে। চীনে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সে দেশের রফতানি আয় কমেছে, শুধু তাই নয়, দেশটির প্রবৃদ্ধি বিগত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান যে ক্রান্তিকাল তা যদি আগামী ৫ বছর অব্যাহত থাকে তাহলে বহু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। এর অর্থ একটাই, বহু লোক বেকার হয়ে পড়বে। বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি হচ্ছে পুঁজিবাজার। বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্ব অর্থনীতি। কিন্তু কোন অবস্থাতেই যেন বাজারে গতিশীলতা আসছে না। দু’দিন ভাল থাকলে তিনদিন নিম্নমুখী। বিনিয়োগকারীরা সঙ্কটে ভুগছে। সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে কোন সুসংবাদ নেই। গ্রীসের ব্যাংক কুঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে, একই সঙ্গে বিশ্ববাণিজ্যে মন্থর গতি সারা পৃথিবীর মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা মনে করছে ২০০৮ সালের মতো আবারও মন্দা হতে পারে। সেটা কি পরিমাণ হবে তা এখনই হিসাব-নিকাশ করে বলা সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবির) মতে, প্রতিটি দেশের সরকার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাংকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থঋণ করছে, কিন্তু উন্নয়ন হচ্ছে ধীরগতিতে। ঋণের পরিমাণ বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বাধিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঋণের পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি। এর পেছনে মৌলিক কারণ হচ্ছে বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, সেসব খরচ মেটাতে গিয়ে তাকে ব্যাংক ঋণ করতে হচ্ছে। উপরন্তু অপরিশোধিত তেলের মূল্য কমে যাওয়ায় রফতানি বাণিজ্যে প্রবলাকারে ধস নেমেছে, যা বিগত পাঁচ বছরে এটাই বড় ধরনের পতন। ব্যাংক কুঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। অপরিশোধিত তেলের বাজার স্থিতিশীল না হলে বিশ্ব অর্থনীতির পরাশক্তির দেশগুলোর অবস্থা ভাল হওয়ার কোন আশাই নেই। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সুসংবাদ, কিন্তু এটাও সম্পূর্ণ সত্য নয়, তেলের মূল্য যদি স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসে, তাহলে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যয় হ্রাস করবে, কর্মী ছাঁটাই করবে, ব্যাংক ঋণ মেটাতে সুদ মওকুফ করতে বলবে অথবা হ্রাস করতে বলবে। তেলের মূল্য পতনের এ ক্ষতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেই নয়, সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়েছে। তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় যে ক্ষতি হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত চিত্র দেয়া যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রেই শিল্প উৎপাদন শতকরা শূন্য দশমিক ৩০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।
×