ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোটের প্রচারে খালেদা জিয়া, ফকিরাপুলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ

বিএনপির গণজোয়ার দেখে সরকার উন্মাদ হয়ে গেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২২ এপ্রিল ২০১৫

বিএনপির গণজোয়ার দেখে সরকার উন্মাদ হয়ে গেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমে মানুষের হাতে হাতে লিফলেট বিতরণ করে চতুর্থ দিনের মতো ভোট প্রার্থনা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সন্ধ্যায় শান্তিনগর কনকর্ড টাওয়ারের সামনে নির্বাচনী প্রচারকালে তিনি বলেন, আমাকে হত্যার জন্য রাজধানীর কাওরান বাজারে গাড়িবহরে হামলা ও গুলি করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার দেখে সরকার উন্মাদ হয়ে আমার গাড়িতে হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, অবৈধ এ সরকারকে সরাতে হলে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এদিকে রাত সাড়ে আটটার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ফকিরাপুল কাঁচাবাজারের সামনে হামলার শিকার হয়। এ সময় হামলাকারীরা তাঁর গাড়িবহরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং কালো পতাকা প্রদর্শন করে। মঙ্গলবার রাত আটটার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে নয়াপল্টন, গাজী ভবন শপিং সেন্টার ও পলওয়েল মার্কেট এলাকায় ‘মগ’ মার্কায় ভোট চাওয়ার সময় তার গাড়িবহর ফকিরাপুল কাঁচাবাজারসংলগ্ন এলাকায় গেলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে মারধর করা হয়। পরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের ধাওয়া করে। এ সময় কিছুক্ষণ উভয়পক্ষের মধ্যে ধাাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ঢিল ছোড়াছুড়ি চলে। তবে নেতাকর্মীদের বেষ্টনীর মধ্যে ওই এলাকা অতিক্রম করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গাড়িবহর। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা পুলিশসহ খবর পেয়ে আশপাশ থেকে আরও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভোটের প্রচারে নেমে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার ভেবেছিল আমরা নির্বাচনে আসব না। কিন্তু আমরা নির্বাচনে এসেছি এবং বিপুল জনসমর্থন পাচ্ছি বলে তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সালাহউদ্দিন নিখোঁজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সালাহউদ্দিনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন তুলে নিয়ে গেছে। এর সঙ্গে সরকার জড়িত। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও বিভিন্ন এলাকায় মা-বোনদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে। এ সরকারের কাছে কেউই নিরাপদ নন। দেশে কারও নিরাপত্তা নেই। প্রতিনিয়ত গুম, খুন ও সন্ত্রাস হচ্ছে। সাভারে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ব্যাংক ডাকাতিতে জড়িত। তারা গুলি করে নিরীহ মানুষদের মেরেছে। তিনি বলেন, অতীতের স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় বিএনপির জনপ্রিয়তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এবারও তিন সিটির নির্বাচনে বিএনপির নিরঙ্কুশ বিজয় হবে। মির্জা আব্বাসের পক্ষে ভোট চেয়ে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আব্বাস যখন মেয়র ছিল, তখন অনেক কাজ করেছে। যখন মন্ত্রী ছিল, তখনও অনেক কাজ করেছে। এখন ঢাকায় গ্যাস নেই, বিদ্যুত নেই, নারী নির্যাতন হচ্ছে, তাই যদি সচেতন না হন তবে আপনাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে নিরাপদে এখানে থাকতে পারবেন না। আপনারা যদি সন্ত্রাসমুক্ত ঢাকা চান, মশামুক্ত, আবর্জনামুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত ঢাকা চান, তবে মির্জা আব্বাসকে ভোট দিন। আব্বাসকে ভোট দিলে ঢাকার ব্যাপক উন্নয়ন হবে, চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসমুক্ত ঢাকা হবে। ঢাকা হবে বাসযোগ্য। আব্বাস নির্বাচিত হলে ঢাকায় শান্তি ফিরে আসবে। অন্যায়-অবিচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, যতদিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারব না, ততদিন আমাদের নিপীড়নের শিকার হতে হবে। আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইতে এসেছি। এর আগেও এসেছিলাম, আপনারা ভোট দিয়েছেন। এবারও দেবেন। তিনি বলেন, মির্জা আব্বাসের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে প্রচারণায় বের হতে দেয়া হয় না। তাই আমি আব্বাসের পক্ষে মগ মার্কায় ভোট চাইছি। আপনারা আব্বাসকে ভোট দিয়ে ঢাকাকে শান্তির নগরীতে পরিণত করুন। যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিলে দেশে শান্তি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠা হবে। এখন দেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত, আব্বাস নির্বাচিত হলে সেটিও ফিরে আসবে। ঢাকাবাসীকে দলে দলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি দলীয় মেয়রপ্রার্থী মির্জা আব্বাসের জন্য ভোট চাইতে শাহজাহানপুরের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তাঁর গাড়িবহরের সামনে ও পেছনে ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের নেতৃত্বে শতাধিক মোটরসাইকেলে করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেন। নতুনবাজার, বাড্ডা ও মালিবাগ চৌধুরীপাড়া হয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শাহজাহানপুরে পৌঁছায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এরপর তিনি গাড়ি থেকে নেমে দোকানে দোকানে গিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাতে হাতে মির্জা আব্বাসের ছবিসংবলিত লিফলেট দিয়ে মেয়র পদে তাঁর জন্য ভোট চান। এ সময় তিনি ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা সেøাগান-হাততালি দিয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। শাহজাহানপুর থেকে রাজারবাগ হয়ে শান্তিনগর গিয়ে ভোটের প্রচার চালান খালেদা জিয়া। সন্ধ্যা ৭টার কিছু পর শান্তিনগর টুইন টাওয়ারে নির্বাচনী প্রচার শেষে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এরপর কাকরাইল ও পল্টন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচার শেষে তিনি গুলশানের বাসায় যান। নির্বাচনী প্রচারকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
×