ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সৌদি প্রতিনিধি দল আসছে আজ

জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিদেশে এক লাখ ৩৭ হাজার চাকরি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২২ এপ্রিল ২০১৫

জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিদেশে এক লাখ ৩৭ হাজার চাকরি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জনশক্তি রফতানির হার দৃশ্যত কমে গেলেও মন্ত্রণালয়ের হিসাবে জনশক্তির বাজার দিন দিন চাঙ্গা হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে দেখা গেছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের ২১ তারিখ পর্যন্ত এক লাখ ৩৭ হাজার ২২৫ কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন। সৌদি বাজার খুলে গেলে কর্মী পাঠানোর চিত্র আরও ভাল হবে। আজ বুধবার সৌদি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছেন। তাদের সঙ্গে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। অবশ্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনশক্তি রফতানির হার কয়েক গুণ বেড়েছে। নানা প্রতিকূল পরিবেশ থাকলেও জনশক্তি রফতানির বাজার ভালই যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এ বছর টার্গেটের চেয়ে বেশি কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশ যাবেন। সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে দু’এক দিনের মধ্যে। আজ সৌদি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছেন। তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত এক লাখ ৩৭ হাজার ২২৫ জন বিভিন্ন দেশে চাকরি নিয়ে গেছেন। জানুয়ারি মাসে ২৮ হাজার ৩৩৩, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৫ হাজার ৫৭, মার্চ মাসে ৪৫ হাজার ৩১৯ ও এপ্রিল মাসে ২৮ হাজার ৫১৬ জন কর্মী বিদেশে চাকরি পেয়েছেন। চার মাসেরও কম সময়ে এত বিপুলসংখ্যক কর্মী বিদেশ গেলেও জনশক্তি রফতানির বাজার নিয়ে অর্থনীতিবিদরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, দিন দিন জনশক্তি রফতানি বাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে এ সেক্টরটি ভবিষ্যতে হুমকির মধ্যে পড়বে। জনশক্তি রফতানির বাজারটি চাঙ্গা করতে এখনই পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। বিএমইটি সূত্র বলেছে, ২০০৮ সালে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছিল ৮ লাখ ৭৫ হাজার জনের। ২০০৭ সালে চাকরি নিয়ে বিদেশ গেছেন ৮ লাখ ৩২ হাজার জন। ২০০৯ সালে জনশক্তি রফতানি ৪ লাখ ৭৫ হাজারে নেমে আসে। আর ২০১০ সালে নেমে আসে ৩ লাখ ৯০ হাজারে। জনশক্তি রফতানিতে ওই দুই বছরের ধস কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ২০১১ সালে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬২ শ্রমিক বিদেশ গিয়েছেন। ২০১২ সালে জনশক্তি সামান্য বাড়লেও আবারও কমেছে ২০১৩ সালে। ২০১৪ সালে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪ জন কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন। এবার প্রথম চার মাসেই এক লাখ ৩৭ হাজার ২২৫ জন কর্মী বিদেশে চাকরি পেয়েছেন। আগামী ৮ মাসে আরও চার লাখের বেশি কর্মী বিদেশে চাকরি পাবেন। সৌদি আরব কর্মী নিয়োগ শুরু করলে কর্মীর সংখ্যা আরও বাড়বে। এ হিসাবে জনশক্তি রফতানির বাজার এ বছর ভাল থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিএমইটির ডিজি শামসুন্নাহার বলেন, জনশক্তি রফতানির পুরনো বাজার ধরে রাখা ও নতুন বাজার সৃষ্টি করার বিষয়ে সব সময় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। দক্ষ কর্মী গড়ে তোলার জন্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) আওতায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি ও ৩৮টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে ৪৮টি ট্রেডে ৬ থেকে ৭ লাখ প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, বাগেরহাট, ফরিদপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় একটি করে মোট পাঁচটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন ও সারাদেশে ৩০টি নতুন টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) স্থাপনের প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করতে সৌদি আরবের একটি প্রতিনিধিদল ৩ দিনের সফরে আজ ঢাকায় আসছেন। এছাড়া, সৌদি আরবের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশী নিয়োগের জন্য তাদের কর্মীর চাহিদা সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ এ তথ্য জানিয়েছেন। বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কোম্পানিগুলোকে সৌদি কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সার্ভারে চাহিদা দেয়া শুরু করেছে গত সোমবার থেকে। এজন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সার্ভার বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের জন্য নিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির চাহিদার বিপরীতে ভিসা ইস্যু করবে সৌদি কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ সরকারের ডাটাবেস থেকে কর্মী নির্ধারণ করে তা সরবরাহ দেয়া হবে। দেশব্যাপী বিদেশ গমনেচ্ছুদের কম্পিউটারে নিবন্ধনের মাধ্যমে এই ডাটাবেস তৈরি করা হয়েছে। ডাটাবেসে প্রায় ২২ লাখ পুরুষ এবং প্রায় পাঁচ হাজার নারী নিবন্ধন করেছেন। বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার সৌদি আরব ২০০৮ সালের শেষ দিকে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৬ বছর পর এই শ্রমবাজারটি বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য পুনরায় খুলে যাচ্ছে।
×