ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ সেরা তামিম, ম্যাচসেরা সৌম্য

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

সিরিজ সেরা তামিম, ম্যাচসেরা সৌম্য

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ইতিহাসের পাতায় অল্পের জন্য উঠতে পারলেন না! তবে এরপরও আরেকটি রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন। যে কোন এক সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রান করে এখন সবার ওপরে তামিম ইকবাল! নিজের ইতিহাস গড়া না হলেও বাংলাদেশ দলের ইতিহাস হয়েছে। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা। সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন তামিম ওয়ানডে সিরিজে টানা দুই সেঞ্চুরির পর তৃতীয় ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৬৪ রান! বিস্ময়কর এক ধারাবাহিকতা! যেভাবে খেলছিলেন হয়ে যেত টানা তিন সেঞ্চুরির রেকর্ড যা বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটারেরই নেই। সাকল্যে সারাবিশ্বে সেটা করে দেখিয়েছেন এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ইতিহাসে ৭ ব্যাটসম্যান। তবে তামিমের ইতিহাস না হলেও দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তরুণ ওপেনার সৌম্য সরকার। আজহার আলীকে ছক্কা হাঁকিয়ে আক্রমণাত্মক মেজাজের এ ২২ বছর বয়সী ডানহাতি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ১১০ বলে ১৩ চার ও ৬ ছক্কায় ১২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। সমালোচনা, বিতর্কের জবাব এর চেয়ে আর ভাল কী হতে পারে? মানসিকভাবে হতাশ একজন ব্যক্তির এভাবে ফিরে আসাটাকে রূপকথার গল্পই বলা যেতে পারে। এমন ঘটনা এর আগে ওয়ানডে ক্রিকেটে বিরল। যে ব্যাটসম্যান ধারাবাহিকতার অভাব এবং রান খরায় থাকার কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন, এমনকি দাবি উঠেছিল চারদিকে ‘বাদ দাও, তামিম অকেজো।’ অযাচিত ও অসংলগ্ন অনেক কথাই তার শুনতে হয়েছে। এত সব মানসিক চাপ নিয়েই টানা দুই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজের জাতটা দেখিয়ে দিলেন। কেন তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ওপেনার সেটারও যথার্থ প্রমাণ দিলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারলে জহির আব্বাস, সাঈদ আনোয়ার, কুমার সাঙ্গাকারা, হার্শেল গিবসদের মতো কিংবদন্তি এবং বর্তমান সময়ের ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স, কুইন্টন ডি কক ও রস টেইলরদের কাতারের একজন হয়ে যাওয়ার সুযোগ। সেভাবেই খেলছিলেন। অনেকদিন পর বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিও যেন প্রতিপক্ষের জন্য বিভীষিকার নামান্তর হয়ে উঠল। প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়কের ভ্রƒ-কে কুঞ্চিত করল। তরুণ সৌম্য স্বভাবেই বিধ্বংসী। সেই রূপটা তিনি প্রথম থেকেই দেখাতে শুরু করলেন। সে তুলনায় তামিম কিছুটা যেন নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। নিজের চেয়ে অনভিজ্ঞ আর বয়সে ছোট সৌম্যকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আর সৌম্যও ব্যাট হাতে ঝলসে উঠলেন। উদ্বোধনী জুটিতে এলো ১৪৫ রান! ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ সেরা ওপেনিং জুটি। গত ১২ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের উদ্বোধনী জুটি কোন শতরান দেখেনি! তৃতীয় ওয়ানডেতে সেই খরাটা কাটালেন তামিম-সৌম্য। সর্বশেষ গত বছর ২৩ নবেম্বর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে আরেক তরুণ এনামুলকে নিয়ে ১৫৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন তামিম। এর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী জুটিতে ১৫০ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েছিলেন ইমরুল কায়েস-এনামুল। সেটা তারা করেছিলেন গত বছর এশিয়া কাপে। দু’জনই ততক্ষণে হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বাধিক হাফসেঞ্চুরির মালিক তামিম এদিন করলেন ক্যারিয়ারের ২৯তম অর্ধশতক। অর্ধশতক পাওয়ার একটু আগে থেকেই নির্লিপ্ততার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তামিম। চড়াও হতে শুরু করেছিলেন পাক বোলারদের ওপর। টানা তিন সেঞ্চুরি করার ইতিহাসটাও হাতছানি দিচ্ছিল। উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন এবং পাক বোলারদের আক্রমণ হয়ে উঠেছিল নখ-দন্তহীন। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না এদিন। হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে পেসার জুনাইদ খানের বলটা মিস করে হয়ে গেলেন এলবিডব্লিউ। ৭৬ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রান করে বিদায় নেন তিনি। ততক্ষণে সৌম্য ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৭৭ বলে করে ফেলেছেন ৭৬। তামিম ফিরে যাওয়ার পরেও থামেননি সৌম্য। ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের সামনে দাঁড়িয়েও বিন্দুমাত্র স্নায়ুচাপে ভোগেননি। বরং যেন আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন তিনি। ৩৪তম ওভারের শেষ বলে আজহারকে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে প্রথম ওয়ানডে শতক অর্জন করেন সৌম্য। প্রথম দুই ম্যাচে ২০ ও ১৭ রান করে প্রত্যাশাটা যেন পূরণ করতে পারেননি এ তরুণ। আর তৃতীয় ওয়ানডেতে শেষ পর্যন্ত তিনি দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। ৯৪ বলে সেঞ্চুরি অর্জনের পরও থামেননি। ইনিংসের গোড়া থেকে ব্যাট চালিয়ে অপরাজিত থেকেছেন ১১০ বলে ১২৭ রানে। দারুণ ধারাবাহিক থেকে দুর্দান্ত এক সিরিজ শেষ করলেন তামিম। সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রান করার দিক থেকে আগেও সেরা ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের আগস্টে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৫ ম্যাচের ঘরোয়া ওয়ানডে সিরিজে ৩০০ রান করেছিলেন তিনি। তবে ৩ ম্যাচের সিরিজে সর্বাধিক ২০৪ রান ছিল শাহরিয়ার নাফিসের। তিনি আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের মার্চে এ রান করেছিলেন। এখন সবদিক থেকেই বাংলাদেশের পক্ষে এক সিরিজে সর্বাধিক রান করার গৌরবময় মালিক হলেন তামিম। তিনি ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাধিক ৩৪২ রান আছে দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ ওপেনার কুইন্টন ডি ককের। তিনি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ভারতের বিরুদ্ধে ঘরোয়া সিরিজে করেছিলেন ৩৪২ রান। সেদিক থেকে এখন বিশ্ব ওয়ানডের ইতিহাসে তিন নম্বরে জায়গা করে নিয়েছেন তামিম। ৩৩০ রান করে দুইয়ে আছেন নিউজিল্যান্ডের ওপেনার মার্টিন গাপটিল। ২০১৩ সালের মে মাসে ইংল্যান্ড সফরে তিনি তিন ম্যাচের সিরিজে এ রান করেছিলেন।
×