ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বিশ্বব্যবস্থার খোঁজে

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

নতুন বিশ্বব্যবস্থার খোঁজে

বিশ্বশান্তি ও প্রগতি অর্জনে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরী হয়ে পড়েছে। কারণ বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা অনেকটা অচল ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্ত্রাস ও চরমপন্থা। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত ২২০ কোটি মানুষের দারিদ্র্য মোকাবেলা করা না গেলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়বে। তাই নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার জানানো হলো তিন দিনব্যাপী আফ্রো-এশীয় শীর্ষ সম্মেলনে। ৩৪টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ ১০৫টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় এই সম্মেলন বসেছিল। এতে বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি জাতিসংঘ, আসিয়ান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, আফ্রিকান ইউনিয়ন, আরব লীগ ও সাউথ সেন্টারসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। এ বছর ছিল সম্মেলনের ৬০তম বর্ষপূর্তি। ১৯৫৫ সালে ইন্দোনেশিয়াতেই হয়েছিল প্রথম সম্মেলন। এই সম্মেলনের প্রভাবে দুই বছর পর দুই বৃহৎ পরাশক্তির বাইরে সৃষ্টি হয়েছিল জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন তথা ন্যাম। সম্মেলনে দুই মহাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করার প্রত্যয় জানানোর পাশাপাশি স্থিতিশীলতার প্রয়াস ও সমতার সমর্থনে একটি নতুন সমন্বিত অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার প্রস্তাবও রয়েছে। দেশগুলো উপলব্ধি করেছে যে, বৈষম্যের মাধ্যমেই এশিয়া ও আফ্রিকাকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। তাই বৈষম্যের অবসানে বিশ্বব্যবস্থায় সংস্কার আনা জরুরী। আর এজন্য দরকার সমন্বিত বৈশ্বিক নেতৃত্ব। তবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে যে, এশিয়া ও আফ্রিকার বিপুল মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার আলোকেই ভবিষ্যত পৃথিবী গড়ে উঠবে। তাই দুই মহাদেশকে সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত করতে এই দুই মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়ানো প্রয়োজন। একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে দেশগুলো আরও শক্তিশালী হবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নে গতি, শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন, সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থা দমন, মানব পাচাররোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্বের দক্ষিণভাগের দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, দক্ষিণ-দক্ষিণ দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্কের বর্তমান নাজুক অবস্থা কাটিয়ে তুলতে হবে। সন্ত্রাস দমন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্ব নেতাদের সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান শেখ হাসিনার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে। তিনি ক্ষুধা, অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াই, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রপন্থা দমন এবং টেকসই উন্নয়নকে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে উল্লেখ করেন। এসব লক্ষ্য পূরণে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে আফ্রো-এশীয় দেশগুলোর প্রতি তিনি যে আহব্বান জানান তাতে ব্যাপক সমর্থনও পেয়েছেন। এটা অনেকটাই বাস্তব, পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর অবস্থা করুণ। তাদের চ্যালেঞ্জ ও সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। তাই দুই মহাদেশজুড়ে স্থিতিশীলতার প্রয়াস ও সমতার সমর্থনের একটি নতুন সমন্বিত কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। দেশগুলোর বিপদ সামাল দেয়ার ক্ষমতা অর্জনে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা গড়ে তোলা জরুরী। এই দুই মহাদেশের মানুষের অনেকাংশই দরিদ্র এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, যাদের অবস্থা ও অবস্থান পরিবর্তনে দক্ষিণের দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হলেই বিশ্বের শান্তি ও অগ্রগতির সোপান খুলে যাবে।
×