ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ফল পাকাতে নিষিদ্ধ রাসায়নিক ব্যবহার করা যাবে না’

ফরমালিন নিয়ন্ত্রণে এবার বিধিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

ফরমালিন নিয়ন্ত্রণে এবার বিধিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করতে বিধিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এই বিধিমালা অনুমোদন হওয়ার পর ফরমালিন আইনেই শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে। মধু মাস সামনে রেখে ফলমূলে ফরমালিনের অপব্যবহার বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। মৌসুমী ফলমূলে যাতে কোনভাবেই ফরমালিন ব্যবহার হতে না পারে সেলক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। বর্তমান আইনে লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন বা মজুদ করলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ- ও ২০ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০১৫ প্রণয়ন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিধিমালাটি চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে কয়েকদফা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুমোদন পাবে বলে সূত্র দাবি করেছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনে যা আছে, বিধিমালায় তাই থাকছে। কিন্তু আইনটি কার্যকর করতে হলে বিধিমালা প্রয়োজন। সেই বিধিমালা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিধিমালা অনুমোদন পেলে ফরমালিন আইনেই শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে। তাই আইন কার্যকর করতে বিধিমালাটিও জরুরী। এদিকে, মন্ত্রিসভায় ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুমোদন হওয়ার পর ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে আইনটি উত্থাপন করা হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন বা মজুদ করলে যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান রেখে এ বিলটি উত্থাপন করেন। আইনটি বাস্তবায়নে ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৫’ পাসের জন্য সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। পরে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটির বৈঠকে বিলটি যাচাই-বাছাই শেষে তা পাসের সুপারিশ করে সংসদে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করে আইনটি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে। এজন্য সংসদে উত্থাপনসহ ও বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হলে নতুন এই আইন কার্যকরে আর কোন বাধা থাকবে না। জানা গেছে, বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংযুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে-আইনটি কার্যকর হলে ফরমালিন ব্যবহার ও ব্যবসা কার্যক্রম আইনি কাঠামোর আওতায় আসবে। বর্তমান ও ভবিষ্যতে যে সব কোম্পানি ফরমালিন ও ফরমালিন জাতীয় দ্রব্য বিপণন করবে, তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। জানা গেছে, মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ফরমালিন মাছ, শাক-সবজি ও ফল দীর্ঘ সময় তাজা রাখতে ব্যবহার করা হয়। যা নিয়ন্ত্রণ ও অপব্যবহার বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। সর্বশেষ এ বিষয়ে আইন তৈরি করা হয়। ওই আইনে বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ, বিক্রি ও ব্যবহার করা যাবে না। যারা লাইসেন্স পাবেন, তারাও চাওয়া মাত্র কর্তৃপক্ষকে ফরমালিন কেনাবেচার হিসাব দেখাতে বাধ্য থাকবেন। এ ছাড়া বিলে লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন বা মজুদ করলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন ও ২০ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। আর লাইসেন্সের শর্ত ভাঙলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদ- এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদ-ের বিধান থাকছে। লাইসেন্স ছাড়া ফরমালিন পরিবহন করলে সর্বোচ্চ ২ বছর থেকে ৬ মাসের কারাদ- এবং এক লাখ থেকে তিন লাখ টাকা অর্থদ-ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ফরমালিন উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়-এমন যন্ত্রপাতি রাখলেও দ-ের বিধান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ২ বছর থেকে ৬ মাসের কারাদ- এবং ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। ফল পাকাতে নিষিদ্ধ দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না ॥ ফল পাকাতে ব্যবহৃত হচ্ছে-কার্বাইড, ইথোফেন ও ক্যারিথ্রিনসহ বিষাক্ত দ্রব্য। এ ছাড়া মিষ্টিতে রাসায়নিক রং এবং আলকাতরা প্রয়োগ করা হয়। প্যাকেটজাত পানীয়তে রাসায়নিক রং ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া মাছ, শাক-সবজি, ফলমূল ও অন্যান্য দ্রব্য টাটকা ও পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ফলমূল পাকাতে নিষিদ্ধ দ্রব্য ব্যবহার করা হলেও এ সংক্রান্ত কোন আইন দেশে নেই। এতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্রি হওয়া শতকরা ৯৪ ভাগই ফরমালিনযুক্ত। তাই এবার ফল পাকাতে নিষিদ্ধ দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধে আইন করা হবে। আইনটি প্রণয়নে কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কি ধরনের শাস্তি ও জরিমানার বিধান রেখে আইনটি করা যেতে পারে তার ওপর মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে একটি বৈঠকও করা হয়েছে। ওই বৈঠকে উর্ধতন কর্মকর্তারা আইনটি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে ইতিবাচক মতামত প্রদান করেছেন। জানা গেছে, এ ছাড়া এসব ফল পাকাতেও নিষিদ্ধ কার্বাইড ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশী ফল আম, জাম ও লিচুতেও ফরমালিনের উপস্থিতি শতভাগ। এছাড়া মালটা, আপেল, আঙুর, কমলা, টমেটো, তরল দুধ ও মাছেও ফরমালিনের উপস্থিতি রয়েছে।
×