ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট পাসসহ থাকছে ৩ শর্ত

আবারও বাজেট সহায়তা দিচ্ছে এডিবি ॥ মিলবে ২ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

আবারও বাজেট সহায়তা দিচ্ছে এডিবি ॥ মিলবে ২ হাজার কোটি টাকা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আবারও বাজেট সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এবার পাওয়া যাবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা (২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। থার্ড ক্যাপিটাল মার্কেটস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় এ অর্থ দেবে সংস্থাটি। অন্যদিকে এর আগে সেকেন্ড ক্যাপিটাল মার্কেটস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে এডিবি। নতুন বাজেট সহায়তার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী জুন মাসের দিকে নেগোশিয়েশন সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব ও এডিবি ডেস্কের প্রধান সাইফুদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, ইতোমধ্যেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের একটি মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। তারা বাজেট সহায়তার বিষয়ে সম্মতির কথা জানিয়েছিলেন। এ ঋণ পেতে আমরা নেগোশিয়েশনের কার্যক্রম শুরু করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগের বাজেট সহায়তা অর্থ পেতে পুরো প্যাকেজ ঋণ পেতে এডিবি প্রায় ২৮টি শর্ত দিয়েছিল বাংলাদেশকে। এর সবগুলোই পূরণ হয়েছে। সর্বশেষ বাকি ছিল শুধু ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট সংক্রান্ত শর্তটি। ফলে দেখা দিয়েছিল জটিলতা। সেটিও কেটে গেছে। নতুন শর্তের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনও শর্ত কতটি হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি। সেকেন্ড ক্যাপিটাল মার্কেটস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় যেরকম শর্ত ছিল এক্ষেত্রেও সেরকমই হবে বলেই মনে করছি। শর্ত বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন বাজেট সহায়তা পেতে এবার ৩০টির মতো শর্ত দিতে পারে এডিবি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট পাস করা। কেননা এর আগে শর্ত ছিল এই আইনটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন হলেই তারা শেষ কিস্তির টাকা ছাড় করবে। এ সংক্রান্ত আইনটি জাতীয় সংসদের চলতি বছরের শীতকালীন অধিবেশনে উপস্থাপনের জন্য জাতীয় সংসদে পাঠানোর কারণে সে অনুযায়ী সম্প্রতি অর্থ ছাড় করা হয়েছে। বাজেট সহায়তা পেতে বাংলাদেশের আগ্রহ এবং এ অর্থ পেলে সুবিধা কি এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান জনকণ্ঠকে বলেন, বাজেট সহায়তা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার বিভিন্ন শর্তপূরণ করতে হবে। যেগুলো আমাদের জন্য উপকারী। সেদিক থেকে এক ধরনের লাভ হয়। অন্যদিকে এই বাজেট সহায়তা নির্দিষ্ট কোন প্রকল্পের সঙ্গে লিংক থাকে না। এটি সরাসরি বাজেটের সঙ্গে যুক্ত হয়, যা সরকার ইচ্ছে ও প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করতে পারে। এ কারণেই বাজেট সহায়তা পেতে সরকারের এত আগ্রহ থাকে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে এডিবি বাজেট সহায়তা হিসেবে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এটি পেতে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে অর্ধেক পূরণ হওয়ায় প্রথম কিস্তির ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা (১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছাড় দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে অন্য সব শর্তপূরণ হলেও শুধু একটি শর্তপূরণ না হওয়ায় ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট, এফআরএ গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড় দেয়ার কথা থাকলেও তা আর দেয়নি। ফলে আটকে যায় প্রতিশ্রুত এ অর্থ। অবশেষে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাঝামাঝি সময়ে এ আইনটি জাতীয় সংসদে পাঠানোর কারণেই সম্প্রতি ছাড় দেয়া হয় দ্বিতীয় কিস্তির প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা (১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এর মধ্য দিয়ে এডিবি প্রতিশ্রুত বাজেট সহায়তার পুরো অর্থ পায় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বার জনকণ্ঠকে বলেন, সেকেন্ড ক্যাপিটাল মার্কেটস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের প্রতিশ্রুত বাজেট সহায়তার সর্বশেষ কিস্তি ছাড় হয়েছে। তবে নতুন বাজেট সহায়তা এখনও আলোচনার পর্যায় রয়েছে। সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় নিরীক্ষকদের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দ্রুত ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট (এফআরএ) প্রণয়নে গত বছরের শুরুতে তাগিদ দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। আইনটি জাতীয় সংসদে পাস করার জন্য তাগিদ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে একটি চিঠি দিয়েছিল সংস্থাটি। এডিবির মহাপরিচালক হুয়ান মিরান্ডা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করা হলেও এফআরএ পাস করার ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আইনটি পাস করার জন্য আরও একবার সরকারকে অনুরোধ জানায় এডিবি। জবাবে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতেই সংসদে এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করা হবে বলে এডিবিকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু সেটি হয়নি। অবশেষে ২০১৫ সালের সর্বশেষ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে উপস্থাপনের জন্য এ আইনটি জাতীয় সংসদে পাঠানো হয়। ফলে প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করে এডিবি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-২ (সিএমডিপি) এর আওতায় প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে এডিবি যে সব শর্ত দিয়েছে এর মধ্যে ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট’ অন্যতম।
×