ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেমিনারে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর বিচারক সঙ্কটে মামলাজট বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর বিচারক সঙ্কটে মামলাজট বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিচারপতিদের বসার জন্য কক্ষের অভাবে বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাড়ছে মামলাজট, সনাতনী পদ্ধতিতে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক অবকাঠামো, বিচারক স্বল্পতা, আইনজীবী ও আদালতের প্রতি অবিশ্বাসসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঠিকমতো অফিসে আসেন না। দুপুর দুটোর পর অনেক আইনজীবীকেও আর দেখা যায় না। স্পেশাল কোর্টের জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেই। বিচারপতিদের বসার স্থানের অভাবে এক বিচারক সকালে বসছেন তো অন্যজনকে বিকেলে দ্বিতীয় সেশনে বসতে হচ্ছে। তাহলে বিচারকরা ৩০ লাখ মামলা কমানোর প্রতি মনোযোগ দেবেন কী করে? এতে মামলার জট বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। শনিবার সকালের দিকে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মাসিক লিগ্যাল এইড আয়োজিত বিচার ব্যবস্থা সহজ করা বিষয়ে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ শুধু দরিদ্রই নয়, তারা ন্যূনতম মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাবে মানবাধিকার এবং আইনের অধিকার বিষয়ে অজ্ঞ। তিনি বলেন, মামলা পরিচালনায় দীর্ঘসূত্রতা এবং ব্যয়বহুল হওয়ায় দরিদ্র নাগরিকরা বিচার ব্যবস্থার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারে না। তাই তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি বলেন, বিচারক স্বল্পতা ও আনুষঙ্গিক সহায়তার অভাবে বাড়ছে মামলাজট। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে বার বার জানিয়েও কোন সুরাহা হচ্ছে না। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, সরকার নতুন আইন তৈরি করে কিন্তু সুপ্রীমকোর্টকে জিজ্ঞাসা করে না। যদিও ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথক করা হয়েছে, তবুও কিছু জটিলতা রয়েছে। ফলে মামলার সংখ্যা বেড়ে মামলাজট সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, দুপুরের পর আইনজীবীরা আদালতে থাকেন না, সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের আদালত চলে বেলা একটা পর্যন্ত কিন্তু বারোটার পরে আর কোন আইনজীবীকে আদালতে পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের এক হাজার ৬শ’ ৫৫ সহকারী বিচারকের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ৪৫৭ জনের নিয়োগ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কয়েক বছর ধরে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা যায়নি। জেলা জজ পর্যায়ে আরও ২৯ বিচারকের প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু নিয়োগ চূড়ান্ত হয়নি। বিচারকদের অন্যান্য পদেও নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে কিন্তু বিচারকের অভাবে মামলা নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশের আদালতগুলো প্রায় ৩০ লাখ মামলার জট বয়ে বেড়াচ্ছে। এর ৬০ শতাংশ হলো ভূমি বিষয়ক মামলা। বিশেষত দেওয়ানি বিচার পদ্ধতিতে অসংখ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনুষ্ঠানে দেশের নিম্ন আদালতে কর্মরত জেলা জজ ও সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। আদালত প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার পেছনে কারণ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সনাতনী পদ্ধতিতে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক অবকাঠামো, বিচারক স্বল্পতা, আইনজীবী ও আদালতের প্রতি অবিশ্বাসসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঠিকমতো অফিসে আসেন না। দুপুর দুটোর পর অনেক আইনজীবীকেও দেখা যায় না।
×