ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দারুণ রঙিন ঢাকা

আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে...

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে...

মোরসালিন মিজান ॥ আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে/কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা/একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়- ফুল নয়, ওরা/শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।/একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং...। শামসুর রাহমান লিখেছিলেন। অপরূপ সৌন্দর্য নয় শুধু, কৃষ্ণচূড়ার পাপড়িতে বাঙালীর চেতনার রং দেখেছিলেন নাগরিক কবি। সে রং এই এক্ষণ চারপাশে দৃশ্যমান। গ্রীষ্মের শুরুতে যথারীতি ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। চোখ মেলে তাকিয়েছে সুন্দর। রাজধানী ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কের দুই ধারে, পার্কে-উদ্যানে, পুরনো ভবনের কার্নিশে রঙের ছড়াছড়ি এখন। দেখতে দেখতে বদলে গেছে ক’দিন আগে দেখা প্রকৃতি। নতুন করে জেগেছে। কৃষ্ণচূড়ার আগুন-রং মন রাঙিয়ে দিচ্ছে। কৃষ্ণচূড়া গাছ উচ্চতায় খুব বেশি হয় না। সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত ওপরে ওঠে। তবে এর শাখা-পল্লব অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো থাকে। বছরের অন্য সময় গাছগুলো অতো চোখে পড়ে না। কিংবা বলা যায়, আলাদাভাবে দৃশ্যমান হয় না। এপ্রিলে প্রকৃতির সবুজ পেছনে ফেলে সামনে চলে আসে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই ফুল। এখন খুঁজে নিতে হয় না। মাথা সামান্য উপরে তুললেই চোখে পড়ে কৃষ্ণচূড়া। অনেক দূর থেকে দেখা যায়। বিশেষ করে রাজধানীর পার্ক ও উদ্যানগুলোতে যেন আগুন লেগেছে! চন্দ্রিমা উদ্যানের রাস্তার দুই ধারে কৃষ্ণচূড়ার সারি। যত পথ তত কৃষ্ণচূড়া। আকাশের নীলও যেন ঢেকে যায় কৃষ্ণচূড়ার লালে! সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চোখ জুড়িয়ে যায়। মন ভরে ওঠে। গত কয়েকদিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমী এই সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত। রমনা পার্কেও উৎসবের রং। বিশাল উদ্যানে সবুজের সমারোহ। আর উৎসবের রং ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া। এখানে প্রচুর গাছ। পার্কের যে গেট দিয়েই প্রবেশ করা যায়, স্বাগত জানায় কৃষ্ণচূড়া। ভেতরেও এর প্রবল উপস্থিতি। নিসর্গপ্রেমীরা তো বটেই, প্রাতঃভ্রমণে আসা মানুষের অনেকেই পথ হাঁটছেন কৃষ্ণচূড়ার পানে তাকিয়ে। পুরনো অফিস বা বাসার পেছন থেকেও উঁকি দিচ্ছে প্রিয় ফুল। কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত। গুলমোহর নামেও ডাকা হয়। এর আদি নিবাস আফ্রিকার মাদাগাস্কার। ১৮২৪ সালে সেখান থেকে প্রথম মুরিটাস, পরে ইংল্যান্ড এবং শেষঅবদি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার ঘটে। এখন জন্মে আমেরিকা, ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে। ধারণা করা হয়, কৃষ্ণচূড়া ভারত উপমহাদেশে এসেছে তিন থেকে চারশ’ বছর আগে। বহুকাল ধরে আছে বাংলাদেশে। তবে ফুলের নাম কী করে কৃষ্ণচূড়া হলো সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায় না। ধারণা করা হয়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অবতার কৃষ্ণের নামে ফুলটির নামকরণ করা হয়েছে। একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়বে, কৃষ্ণের মাথায় চুলের চূড়া বাঁধার ধরনটির সঙ্গে ফুলটির বেশ মিল। সেখান থেকেই কৃষ্ণচূড়া। আবার উদ্ভিদবিজ্ঞানী, নিসর্গপ্রেমী কিংবা কবি সাহিত্যিকরাও এই নামকরণ করে থাকতে পারেন। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, এই ফুল বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ফোটে থাকে। বাংলাদেশে ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। প্রথম মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যেই পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। ফুলের প্রধান বৈশিষ্ট্য এর উজ্জ্বল রং। তরুরাজ্যে এত উজ্জ্বল রং সত্যি দুর্লভ। ফুলের পাপড়ির রং গাঢ় লাল, লাল, কমলা, হলুদ, হালকা হলুদ হয়ে থাকে। প্রস্ফুটিত ফুলের ব্যাস ২ থেকে ৩ ইঞ্চি। বৃতির বহিরাংশ সবুজ। ভেতরের অংশ রক্তিম। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়িযুক্ত। পাপড়ি প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়ে থাকে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট। প্রতিটি পাতা ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা। ২০ থেকে ৪০টি উপপত্র বিশিষ্ট। হ্যাঁ, এমন আরও অনেক তথ্য দেয়া যেতে পারে। তবে এসব তথ্য দিয়ে ফুলের সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। তার চেয়ে অনেক সহজ নিজে দেখে নেয়া। অনেকে দেখেছেন? আবার দেখুন। এবার কৃষ্ণচূড়া দেখার জন্য একদিন সময় বের করুন। দেখুন। নিশ্চিত করে বলা যায়, আপনার বিগত দিনের দেখার চেয়ে এই দেখা হবে শতগুণ সুন্দর!
×