ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভূমিকম্পে প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

ভূমিকম্পে প্রস্তুতি

শনিবার উপর্যুপরি ভূমিকম্পে বিরাট আকারের কোন ক্ষতি না হলেও গোটা দেশের মানুষকে তা ক্ষণিকের জন্য কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে। বিশেষ করে বিপুল জনঅধ্যুষিত ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বহু মানুষের হৃৎকম্পের কারণ হয়েছে এই ভূমিকম্প। কয়েকটি টিভি চ্যানেল তাৎক্ষণিকভাবে মহানগরবাসীর অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। তাতে ধারণা হয়, এবারের ভূমিকম্প অনেকের মনেই আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এই দুর্ভাবনা মানুষের মনে স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিশেষ করে পর পর দুদিন ভূ-কম্পনের ফলে মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বিপদে পড়লে মানুষ তার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুযায়ী তা থেকে পরিত্রাণের পথ খোঁজে। আর বিপদের আশঙ্কা থাকলে মানুষের ভেতর সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ তৈরি হয়। বাংলাদেশ থেকে বহু দূরে নেপালের পোখরায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল হওয়ায় সে দেশটিতেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সঙ্গত কারণে। মৃতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও অল্পবিস্তর ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশেও যে একেবারেই ক্ষতি হয়নি তা নয়। বেশ কয়েকটি ভবন হেলে পড়েছে, কয়েকটিতে ফাটল ধরেছে, আতঙ্কে আত্মরক্ষা করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এর চাইতে উচ্চ মাত্রার ও দীর্ঘস্থায়ী ভূ-কম্পন হলে কী পরিমাণ ক্ষতি হতো তা কল্পনা করতেও শিউরে উঠতে হয়। বিশেষ করে ঘনবসতির এই রাজধানীতে মাত্রাতিরিক্ত বহুতল ভবনের জঙ্গলে বড় ধরনের ভূমিকম্প রীতিমতো মহাবিপর্যয় ঘটিয়ে ফেলতে পারে। ঢাকার কোন একটি ক্ষুদ্র এলাকাতেও যদি তীব্র ভূমিকম্প হয় তাহলে ভবনে ভবনে আটকেপড়া লোকদের উদ্ধার করা ভীষণ জটিল এক দুঃসাধ্য কর্ম হয়ে উঠতে পারে। তাই অবশ্যই জরুরী প্রস্তুতি থাকা চাই। ভূমিকম্পের ঝুঁকির ক্ষেত্রে যে বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা বিপজ্জনক অবস্থানে আছে, তা আমরা অনেকেই জানি না। আবার সমাজের শিক্ষিত ও সচেতন অংশ এ ব্যাপারে অবগত হয়েও তা উপেক্ষা করে যান। শনিবারের ভূমিকম্পের পর বিপদ কেটে গেছে ভেবে বিষয়টি বিস্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যেতে দিলে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের ছাড় দেবে না। ভূতত্ত্ববিদ ও গবেষকরা অনেকদিন থেকেই বাংলাদেশে ভূমিকম্পের আশঙ্কার কথা বলে আসছেন। বিপদ বলে কয়ে আসে না। ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণের সময়ই ভূমিকম্পের বিষয়টি মাথায় রাখার কথা। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুত সংযোগগুলোর নকশাও ভূমিকম্পের কথা মাথায় রেখে করা সমীচীন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাজউক অনুমোদিত কয়টি ভবন সে বিধি স্মরণে রেখে নির্মিত? রেডক্রসের পরামর্শ অনুযায়ী, ভূমিকম্পের সময় আত্মরক্ষার সবচেয়ে ভাল উপায় হলো ‘ড্রপ, কাভার, হোল্ড অন’ পদ্ধতি। যদিও কম্পন শুরু হলে শক্ত ও দৃঢ আসবাবের নিচে আশ্রয় গ্রহণের এ পদ্ধতিটি ঢাকা শহরের উঁচু বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে বিশেষ কাজে নাও আসতে পারে। বিপদের ঘণ্টা কিন্তু বেজে গেছে। অথচ ভূমিকম্প সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা নেই বললেই চলে। ভূমিকম্পের সময় ও পরে কী করা উচিত, সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা প্রয়োজন। এ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার কোন উদ্যোগ আজও নেয়া হয়নি। তাই এখনি ভূমিকম্প বিষয়ে প্রস্তুতি, সতর্কতা গ্রহণ সম্পর্কে বিশদ জানানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের করণীয়ই প্রধান, তবে সমাজসেবক ও স্বেচ্ছাসেবীদেরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্যোগ প্রতিরোধ করা যাবে না, তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় পথ রচনার কাজ এখনি শুরু করা চাই।
×