ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাফর ওয়াজেদ

অবশেষে সিটি নির্বাচন এবং অতঃপর

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

অবশেষে সিটি নির্বাচন এবং অতঃপর

আজ সোমবার রাত ফুরোলেই কাল মঙ্গলবার দেশের তিনটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন নির্বাচনী এলাকাজুড়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে শেষ মুহূর্তের সংযোগ গতকাল রবিবার রাতে শেষ হয়েছে। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা হয়েছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই। সব প্রার্থীই ভোটারদের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করেছেন। তেমন বড় কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে তিন মাস ধরে অবরোধ হরতালের নামে পেট্রোলবোমা মেরে শতাধিক মানুষ হত্যার নির্দেশদাতা বিএনপি-জামায়াত নেত্রী বেগম জিয়ার রাজপথে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গাড়িবহর নিয়ে প্রচারণায় নামার পর উত্তেজিত জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ও মারদাঙ্গা ছাড়া আর কোন অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি হয়নি, যা সাধারণত এ দেশের নির্বাচনকালে ঘটে থাকে। নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখায় সচেষ্ট রয়েছে। তবে ভোটের দিন যাতে সহিংসতা বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে না পারে কেউ, সেটাই হবে মূল বিষয়। নির্বাচনের সফলতা এটার ওপরই নির্ভর করে। সংঘর্ষ বা অনিয়মের কোন লক্ষণ অদ্যাবধি দেখা না গেলেও যে কোন সময় অপ্রীতিকর অবস্থা যে তৈরি হবে না, তার নিশ্চয়তা বিধান করার দায়িত্বও কমিশনের। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনী কাজে জড়িত সরকারী কর্মকর্তারা কমিশনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সুতরাং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার কাজটি কমিশনের এখতিয়ারে। সরকারের এখানে করণীয় কিছু নেই। নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা ও স্বায়ত্তশাসনকে বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের প্রভাবে প্রভাবান্বিত নয়। আর তা স্পষ্ট হয়েছে নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের অংশগ্রহণে। এক সময় বিএনপি বলেছিল, এই নির্বাচন কমিশনের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। এই কমিশনের অধীনে তারা কোন নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণাও দিয়েছিল। যে উছিলায় তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করতে সহিংস অবস্থান নিয়ে নাশকতা চালিয়েছিল। আবার দেখা গেছে, গাজীপুর থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত মোট ৯টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের সব ক’টিতে বিএনপি অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে সাতটিতে তারা এবং দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিল। সরকারী দলের সমর্থিত প্রার্থীরা হেরে যায়। সেদিন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে কোন ধরনের অনিয়ম ও কারচুপির জোরালো অভিযোগ ওঠেনি। আওয়ামী লীগ এ ক্ষেত্রে বিএনপির অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পদ্ধতি অনুসরণ করেনি। মাগুরা উপনির্বাচনকে নিয়ে বিএনপি যে লঙ্কাকা- ঘটিয়েছিল কিংবা ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে একতরফা ভোটের ব্যবস্থা করেছিল, তাতে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব করে তুলেছিল। তাতে বিএনপি সরকারের অধীনে যে কোন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ শুধু নয়, নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাও বিনষ্ট করেছিল, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। এবারও বিএনপি-জামায়াত জোট একই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর দাবি তুলেছিল। এ দাবির মাধ্যমে তারা সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যাকারীদের অবাধ চলাচলের সুযোগ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিল। দেশজুড়ে নৈরাজ্য, সন্ত্রাস-বোমাবাজিতে জড়িত বিএনপি-জামায়াতের অনেকে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে। এসব নাশকতাকারী ও ইন্ধনদাতা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে নির্বাচন পরিচালনা করছে। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ গ্রেফতার করছে না। এমনকি নির্বাচনের আগে যৌথবাহিনীর বেআইনী অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের বিধি-বিধান থাকলেও সেরকম কোন পদক্ষেপও নেয়া হয়নি। প্রচারণাকালে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতারও করা হয়নি। এরা নির্বাচন পরিস্থিতিকে যাতে অস্বাভাবিক করে তুলতে না পারে তা দেখার দায়িত্ব কমিশনের অধীনে থাকা যৌথবাহিনীর। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিএনপি-জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে পেট্রোলবোমা হামলাসহ নাশকতার ঘটনায় মামলা রয়েছে তারা আত্মগোপনে থেকে প্রচারণা চালাচ্ছে। এসব প্রার্থী নির্বাচনকালে নাশকতার পথ যাতে ধরতে না পারে তা নির্মূল করার দায়িত্ব বর্তায় কমিশনের ওপর। প্রশাসনের কর্মকর্তারা যেহেতু নির্বাচন কমিশনের অধীনে, তাই তাদের নিরাপত্তা বিধান করাও কমিশনের দায়িত্বে পড়ে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছিল বর্জন ও প্রতিরোধকারীরা। জনগণ স্বস্তি পেয়েছে নির্বাচনকে সামনে রেখে পেট্রোল বোমাবাজির কর্মসূচী অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহার করায়। কারণ টানা তিন মাসের নাশকতা, সহিংসতায়, হত্যাযজ্ঞে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছিল। বিনা অপরাধে সাধারণ মানুষকে হত্যা শুধু নয়, যানবাহন পোড়ানোর উৎসবও পালন করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে অবরোধ দিয়ে অর্থনীতিকে ধ্বংস করার অভিযোগ করে আসছে ১৪ দলীয় জোট। স্বাভাবিক রাজনীতির পথ হতে সরে গিয়ে বিএনপি নামক দলটি জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদকে আঁকড়ে ধরে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় মরিয়া অনেকদিন থেকে। জনগণের বিরুদ্ধে একতরফা যুদ্ধ ঘোষণা করে তারা সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে নাশকতা চালায়। এই কাজ পরিচালনার জন্য জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের ভাড়াও করা হয়। জঙ্গী ও জামায়াতীদের নেত্রী বেগম জিয়া তার দলের লোকদের সরকার উৎখাতে যে কোন পথ ও পন্থা অনুসরণের যে ঘোষণা দেন তার পথ ধরে বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ করা হয় বাসে। ৭৭ জন মারা যায় আগুনে। দগ্ধ হয় প্রায় ৩৫০ জন। আহত হাজার দেড়েক। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব সংবাদপত্রে প্রায়ই ছাপা হয়ে আসছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এক ধরনের চোরাগোপ্তা খুন, জখম দেশের স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করে তুলতে সহায়ক হয়েছিল। যার রেশ এখনও কাটেনি। সুযোগ বুঝে রাজনৈতিক দলের তত্ত্বাবধানে সন্ত্রাস ও জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। চূড়ান্ত নীতিহীনতা তাই বিএনপি-জামায়াত জোটকে রাজনীতির মাঠ হতে সরিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গীদের বাংলাদেশ শাখায় পরিণত করেছে। যে জঙ্গীবাদের ক্রোড়ে আশ্রয় নিয়ে তারেক ১৭ আগস্ট, ২১ আগস্টসহ দেশব্যাপী গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার নামে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে স্পষ্ট করেছে, তারা পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে মিলিয়ে আইএসআই-এর পরামর্শে কনফেডারেশন করতে চায়। আল কায়েদার ধারায় বাংলাভাই, জেএমবিসহ আরও জঙ্গী সংগঠনকে বাংলাদেশে ঘাঁটি গাড়তে দিয়েছে। এমনকি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্যাম্পও গড়ে তুলেছিল। পঁচাত্তর পরবর্তী দেশকে পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিকে বদলে ফেলে রাতারাতি। পরাজিত শক্তিকে মাঠে নামানো হয় মুক্তিযোদ্ধাদের বিভক্তিকরণে ও বিনাশে। পাকিস্তান পার্লামেন্টে জানানো হয়েছিল, ২০০১ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা বিএনপিকে কয়েক কোটি টাকা দিয়েছিল। এবারের সিটি নির্বাচনে আইএসআই সহায়তা করছে কিনা তা জানা যাবে আরও পরে। বিএনপি-জামায়াত নামক একই পরিবারভুক্ত দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়। যে কারণে দেশকে ধ্বংস করতে জঙ্গীদের প্রশ্রয়দান ও লালন-পালন করে আসছে। দেশকে আফগান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাকের মতো তালেবান, আল কায়েদা, আইএসের অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে জঙ্গী হামলা অব্যাহত রাখাসহ কয়েকটি এলাকাকে ঘাঁটি বানিয়েছে। ২০১৩ সালের মে মাসে দেশকে বিপর্যস্ত করে তুলতে বেগম জিয়া হেফাজতকে দিয়ে যে অরাজকতার বিস্তার ঘটাতে চেয়েছিলেন, তাতে সাময়িকভাবে অনেক ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হতে পেরেছেন। সেই তিনি দুর্নীতি মামলায় জামিন পাবার পর তিন মাসের অন্তরীণ জীবন ছেড়ে গৃহে ফিরে আবার ভিন্নপথে অরাজক অবস্থা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালু রেখেছেন। তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার পরও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গাড়িবহর নিয়ে রাজপথে নেমে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখে চলেছেন। ক্ষুব্ধ জনতা তার গাড়িবহরের গতি রুখতে হামলাও চালায়। বোমা হামলায় নিহতদের স্বজনদের পাশে দাঁড়াননি তিনি। অথচ বলে বেড়াচ্ছেন সরকার বোমা মেরেছে। যদি তাই হতো তবে তিনি প্রথমেই যেতেন বার্ন ইউনিটে, নিহতদের স্বজনদের সান্ত¡না দিতেন। কিন্তু যে অপরাধ তিনি করেছেন, তার মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস পাননি বলেই নির্বাচনী প্রচারকালে মেডিক্যালে যাননি। দেখা গেছে, বেগম জিয়া দোকানে দোকানে বাস মার্কার জন্য ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ করছেন। কিন্তু তিনি যদি সিটি বাসে চড়ে বাস মার্কায় ভোট চাইতেন কিংবা বাসস্টেশনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাতেন তার বাস মার্কায় ভোট দিতে, তবে টের পেতেন জনগণ কীভাবে মূল্যায়ন করে তাকে। কিন্তু তিনি সে পথ মাড়াননি। বাসবহর নিয়ে প্রচারণাও চালাননি। বিশাল গাড়িবহর নিয়ে রাস্তাঘাটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটা গোলযোগ বাধানোর আয়োজনই করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার নামে তিনি তেমন সাফল্য দেখাতে না পেরে নাশকতাকেই বেছে নিয়ে মানুষ হত্যা করেছেন, যা একাত্তরের বর্বরতার সমতুল্য। বিএনপি-জামায়াত জোট যাদের মনোনয়ন দিয়েছে, তাদের একটা অংশ নাশকতা ও বোমা হামলায় জড়িত। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, সেই মামলা মোকাবেলার সৎসাহস তাদের নেই। যেমন নেই একদা ঢাকার মেয়র বিএনপি দলীয় প্রার্থীর, তাই আত্মগোপনে প্রচারণা চালাচ্ছেন, মাঠ পর্যায়ে স্ত্রীকে নামিয়েছেন। জনগণের মুখোমুখি হতে না পারার কারণে প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। এ নির্বাচন স্রেফ তিনটি সিটির নির্বাচন নয়, এ নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য নানাদিক থেকে গুরুত্ববহ। এটা বিচার্য গত তিন বছর ধরে দেশজুড়ে রাজনীতির ছত্রছায়ায় জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ, নাশকতা এবং সাম্প্রদায়িকতার যে বিস্তার ঘটানো হয়েছে, তারই আলোকে জনগণের মতপ্রকাশের নির্বাচন। তদুপরি বিগত তিন মাস ধরে দেশব্যাপী যে নাশকতা চালিয়েছেন, তা দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে পরিচালনা করেছেন। যেদিন অবরোধ তুলে নিলেন, তার পর থেকে বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ বন্ধ। এ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটটি হচ্ছে একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের নির্বাচন। তাই এ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার সুযোগ স্বাধীনতার পক্ষের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। এ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির পরাজয় যদি ঘটে, তাহলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। এ নির্বাচন স্পষ্ট করবে দেশ আবার পাকিস্তানী ভাবধারায় ও যুদ্ধাপরাধী রক্ষায় সহায়ক হয়ে উঠবে কি-না। নির্দলীয় বলা হলেও এই নির্বাচনটি একাত্তরের পরাজিত শক্তির সঙ্গে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ভোটযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার সুযোগ নেই মুক্তিকামী বাঙালীর। নির্বাচনে কোনরকম বিচ্যুতি ঘটলে স্বাধীন দেশের জন্য ভয়াবহ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অত্যধিক। গত তিন মাসে ঢাকা-চট্টগ্রামের রাজপথ ছিল অগ্নিদগ্ধ যানবাহন ও মানুষ পোড়ার গন্ধে ভারী। শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, বাসচালক, হেল্পারদের হত্যার তিনটি মাস মানুষ ভুলে যেতে পারে না। প্রতিটি মানুষই ভুক্তভোগী হয়েছে অবরোধ ও হরতাল নামক নাশকতার কর্মসূচীতে। যারা ঘটিয়েছে তাদের নির্বাচিত হওয়ার অর্থই দাঁড়ায় নাশকতার বৈধতাদান। আরও মানুষ হত্যার ক্ষেত্র সৃষ্টির প্রচেষ্টা। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার অর্থ এই নয় যে, নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। মধ্যবর্তী নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামক বায়বীয় বিষয় আবার সামনে এনে অবরোধ হরতালের মাত্রা ব্যাপকতা পাবে। শুরু হবে জঙ্গীদের ধ্বংসাত্মক কীর্তিকলাপ, নাশকতার নয়া নয়া পদ্ধতি দেশবাসীকে হজম করতে হবে, ঝরবে অনেক প্রাণ। নির্বাচনে জিতুক বা হারুক, বিএনপি-জামায়াত সরকার উৎখাত নামক আন্দোলনকে ভয়াবহ মাত্রা দিতে সামান্য কসুর করবে না। খালেদার নাশকতা কর্মসূচী সমর্থন না করা দলীয় কর্মী ও সিনিয়র নেতারাও মাঠে নামবেÑ নির্বাচন তাদের সে সুযোগ করে দিয়েছে। নির্বাচন শেষে দেশ আবার নাশকতার পথে হাঁটবে আর সরকার চেয়ে চেয়ে দেখবে, তা হবে মারাত্মক বিপর্যয় দেশ ও দেশবাসীর জন্য। তবে খালেদার যদি সুবুদ্ধির উদয় হয় তবে তিনি জঙ্গীবাদী নাশকতার পথ ছেড়ে স্বাভাবিক রাজনীতির পথে হাঁটবেন। সাধারণ মানুষ তাই চায়।
×