ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিকম্প মোকাবেলায় দেড় হাজার কোটি টাকা সাহায্য বিশ্বব্যাংকের

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

ভূমিকম্প মোকাবেলায় দেড় হাজার কোটি টাকা সাহায্য বিশ্বব্যাংকের

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বিশ্বব্যাংক বলছে ভূ-তাত্ত্বিক গঠনের কারণেই বাংলাদেশ ভূমিকম্পের বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্বের ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। এজন্য ভূমিকম্পের মতো জরুরী আপদ মোকাবেলায় প্রায় ১ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা (১৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সহজ শর্তে এ ঋণ প্রদান করবে সংস্থাটি। বাংলাদেশ আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি) বাস্তবায়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। ইতোমধ্যেই এ ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক বোর্ড। বর্তমানে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলেই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এর আগে গত মার্চ মাসে ইআরডির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য একটি সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছিল বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম জনকণ্ঠকে জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ ঋণের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নেগোশিয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। একনেকে প্রকল্প পাস হলেই চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ আরবান রেজিলিয়েন্স শীর্ষক আম্ব্রেলা প্রকল্পের মাধ্যমে শহর এলাকায় বৃহদাকারের জরুরী অবস্থা মোকাবেলা এবং উদ্ধার কার্যক্রম সফল ও কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য সরকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের কম্পোনেন্টসমূহ বাস্তবায়নে পৃথক চারটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। এ চারটি উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তপক্ষ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগ। প্রথম পর্যায় ঢাকা ও সিলেট শহরে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাংলাদেশ আরবান রেজিলিয়েন্স শীর্ষক আম্ব্রেলা প্রকল্পটি আগামী জুলাই মাস থেকে শুরু করে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সহজ শর্তের এ ঋণের সার্ভিস চার্জ হিসেবে নেয়া হবে বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ইআরডি সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক হতে প্রাপ্ত ফাইনান্সিং এগ্রিমেন্ট (এফএ) ও প্রজেক্ট ডকুমেন্টের ওপর বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ঠিক করার জন্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু সংশোধন করে এ দুটি প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। খসড়া ঋণচুক্তির বিষয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুমোদনে একটি নেগোশিয়েশন ঠিক গঠন করা হয়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসে নেগোশিয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া খসড়া ফাইনান্সিং এগ্রিমেন্ট এবং অন্যান্য নেগোশিয়েশন ডকুমেন্টের ওপর লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ইতিবাচক মতামত পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটির ওপর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এ প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব জনকণ্ঠকে বলেন, গুরুত্বের দিক বিবেচনা করে এ ঋণ প্রস্তাবটি বোর্ড সভায় পাস করা হয়েছে। এখন চুক্তি স্বাক্ষর বাকি আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের আগে একনেকে প্রকল্প পাস হলে ভাল হয়, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। সূত্র জানায়, এর আগে রাজধানীতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকির প্রেক্ষিতে দক্ষতা বৃদ্ধির রোড ম্যাপ তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভূ-তাত্ত্বিক গঠনের কারণেই বাংলাদেশ ভূমিকম্পের বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্বের ২০টি ঝুঁকিপর্ণ শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। ঢাকা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর। তার ওপর অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে এ ঝুঁকি আরও অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজধানীর উন্নয়ন ও পরিকল্পনার সঙ্গে অনেকগুলো সংস্থা জড়িত। এক্ষেত্রে বলা যায় প্রায় ৫০টি সংস্থা কাজ করছে। এ সবের মধ্যে সমন্বয় দরকার। এর আগে বিশ্বব্যাংকের তখনকার ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস্টিন কাইমস বলেছিলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রস্তুতি বিষয়ে সরাসরি সহায়তা করার জন্য আরবান আর্থকোয়ার্ক রিজিলিয়েন্ট প্রজেক্টেরটিই প্রথম উদ্যোগ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি, ঝুঁকি এবং করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করে তোলা হবে। বিশ্বব্যাংক এবং গ্লোবাল ফ্যাসিলিটি ফর ডিজাস্টার রিডিউশন এ্যান্ড রিকভারি (জিএফডিআরআর) যৌথভাবে অনুদান সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে। আরবান আর্থকোয়ার্ক রিজিলিয়েন্ট প্রজেক্টের আওতায় এ অর্থ ব্যয় করা হবে। এটি ঢাকায় পাইলট হিসেবে বাস্তবায়িত হবে। এ প্রকল্পের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে মূলত প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্ঞান সমৃদ্ধ তথ্য সরবরাহ করা যা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করতে সহায়ক হবে।
×