ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুলনায় আজ শুরু সিরিজের প্রথম টেস্ট

টেস্টেও পাকিদের কাঁপানোর পালা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

টেস্টেও পাকিদের কাঁপানোর পালা

মিথুন আশরাফ, খুলনা থেকে ॥ ওয়ানডে সিরিজে টানা তিন ম্যাচ হারের পর এক টি২০ ম্যাচেও বাংলাদেশের কাছে হেরেছে পাকিস্তান। আর তাতেই মনে হচ্ছে কাজ হয়ে গেছে। কী কাজ হয়েছে? আজ প্রথম টেস্ট খেলতে নামার আগেই পাকিদের কম্পন শুরু হয়ে গেছে। তাই তো একবারও পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ উল হক বলতে পারছেন না যে টেস্টে জিতবেনই। উল্টো বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম কিন্তু ঠিকই ওয়ানডে ও টি২০ জেতার আত্মবিশ্বাস টেস্টেও কাজে লাগানোর কথা উচ্চৈঃস্বরেই বলছেন। হায়, কী দুর্দশা হয়েছে পাকিস্তানের! সেই দুর্দশা আবার বাংলাদেশের বিপক্ষেই হচ্ছে। বিশ্বকাপের পর সব যেন ওল্ট-পাল্ট হতে শুরু করেছে পাকিস্তানের। একই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ এতটাই ভাল খেলেছে যে সেই ধারাবাহিকতার এক চুলও নড়চড় হচ্ছে না। পাকিস্তানকে ওয়ানডেতে বাংলাওয়াশ করে দিল বাংলাদেশ। এরপর টি২০ ম্যাচেও হারিয়ে দিল। এবার টেস্টেও পাকিস্তানকে কাঁপানোর পালা। যে মাঠে খেলা হবে সেটিও আবার ‘লাকি ভেন্যু’ই, খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম। যে স্টেডিয়ামে সর্বশেষ টেস্টটি জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দাপটের সঙ্গেই জিতেছে বাংলাদেশ। এবার পাকিস্তানকে টেস্টেও শিক্ষা দেয়ার সুযোগ। দলটি টেস্টে যতই শক্তিশালী হোক। মিসবাহ, ইউনুস, হাফিজ, আজমল, ওয়াহাবদের নিয়ে যতই দল এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাক, পেছনে তো ‘বাংলাওয়াশ’ টেনে ধরবেই। সেটি তো চাপ প্রয়োগ করবেই। এরপর আবার পাকিস্তান ক্রিকেটারদের খানিক ভয়ও কাজ করবে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নেমে টানা ৪ ম্যাচে হারের পর সমালোচনা চলছেই। সেই সমালোচনাও ছোঁয়া ক্রিকেটারদের গায়ে ভালভাবেই লাগছে। সোমবার দুপুরে যখন পাকিস্তান ক্রিকেটাররা সেন্ট্রাল উইকেট, নেটে অনুশীলন করল; তখন তাদের ভেতর আত্মবিশ্বাস বলে কিছুই দেখা গেল না। বোঝাই যাচ্ছে, ভেঙ্গে পড়েছে দলটি। এখন এ সুযোগটিও যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে তো টেস্টেও পাকিস্তানকে বিপাকে ফেলতে পারবে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের মুখগুলো যেখানে ফ্যাকাশে, সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা কী উদ্দীপ্ত। সবার মুখেই হাসি। সবার ভেতরই কী আত্মবিশ্বাস। কী ব্যাটিং, কী বোলিং, কী ফিল্ডিং; যে যেটা করছে, সেটা কী বিশ্বাস নিয়েই না করছে। একের পর এক ম্যাচ জেতায় এখন পাকিস্তানকে যেন অতীতের বাংলাদেশ আর বাংলাদেশকে যেন মনে হচ্ছে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। যারা হাসছে, খেলছে, হেসেখেলে জয় তুলে নিচ্ছে। আর পাকিস্তান দল যেন ‘দুর্বল’ দলে পরিণত হয়ে গেছে। যারা অনুশীলন করছে ঠিক। তাতে নেই কোন বিশ্বাসী মনোভাব। শরীর ঠিকমত দুলে তো দুলে না। নড়ে তো চড়ে না। আর যখন খেলায় নামছে, তখন কী হয়েছে; তা সবারই জানা। সাকিব আল হাসান ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগেও ‘বাংলাদেশই ফেবারিট’ বলে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের চাপে ফেলে দিয়েছিলেন। আর বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের ভেতর যেন জ্বালানি শক্তি তৈরী করে দিয়েছিলেন। এবারও ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, আমরাই বোলিংয়ে এগিয়ে’ বলে পাকিস্তানকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছেন। সেই ভাবনায় এখন মশগুল থেকে টেস্টেও পাকিস্তানের বেহাল দশা হলেই হয়। টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে কখনই কুলিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। ৮ টেস্টের সব হেরেছে। তবে এক টেস্টে জয়ের একেবারে কাছে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে। দুর্দান্ত খেলেছিল বাংলাদেশ। জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও ইনজামাম উল হকের শতকের কাছে ১ উইকেটে হার মানতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার বাংলাদেশ এমন সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই হাতছাড়া করবে না? তা তো কোনভাবেই নয়। তবে ভয় যে থাকছে না তা কিন্তু নয়। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীমরা ভাল করলে, অনেক কিছুই সম্ভব। তবে বাস্তবতা বলছে, এটা ওয়ানডে কিংবা টি২০ ম্যাচ নয়, টেস্ট ম্যাচ। আর এ ফরমেটের খেলায় পাকিস্তান খুবই ভয়ঙ্কর একটি দল। দলে যে তিন ব্যাটসম্যান আছেন, মিসবাহ, ইউনুস ও হাফিজ; এ তিনজনই ভয়ঙ্কর! মিসবাহ সর্বশেষ ৪ টেস্টে তিন শতক হাঁকিয়েছেন। এক টেস্টে তো দুই ইনিংসেই শতক করেছেন। তাও আবার আবুধাবিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ইউনুস খান তো আরও ভয়ঙ্কর। সর্বশেষ ৫ টেস্টে ৪ শতক রয়েছে তার। দুবাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ইনিংসেই শতক করার পর আবুধাবিতে একই দলের বিপক্ষে ডাবল শতকও হাঁকিয়েছেন। মোহাম্মদ হাফিজও কম নন। সর্বশেষ ২ টেস্টের দুটিতেই শতক করেছেন। বিশ্বকাপের আগে যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে পাকিস্তান, তাতে মিসবাহ ও ইউনুস ঝলকেই পাকিস্তানের জয় হয়েছে। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হাফিজ দ্যুতিতে জয় ধরা দিয়েছে। মিসবাহ তো তাই বার বার বলেছেন, ‘টেস্টে আমরা অন্যরকম দল।’ সাকিবও স্বীকার করেছেন, ‘পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ অনেক শক্তিশালী।’ তাহলে কী দাঁড়াল? বাংলাদেশকে জিততে হলে বা ম্যাচ ড্র করতে হলে এ তিন ব্যাটসম্যানকেই তুলে নিতে হবে দ্রুত। এ জন্য জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খুলনাতেই শতক ও ১০ উইকেট নেয়া সাকিব, নতুন পেসার শহীদ, রুবেলদেরই যা করার করতে হবে। বাংলাদেশ বোলিংয়ে শক্তিশালী আর পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে। পাকিস্তানের শক্তিই টেস্টে একটু বেশি। এ শক্তি এখন দুর্বল করে দিতে পারলেই টেস্টেও বাজিমাত করবে বাংলাদেশ। টেস্টেও পাকিস্তানকে কাঁপন ধরাতে পারবে। এখন টেস্টেও পাকিস্তানকে সেই কাঁপানোর পালাই বাংলাদেশের।
×