ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব বেশি

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব বেশি

ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক দুঃশাসনের কবল থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলেও এক শ্রেণীর রাজনীতিক, সামরিক কর্মকর্তা ও আমলাদের মন-মানসিকতায় রয়ে গেছে ভূতপূর্ব ধ্যান-ধারণা। অর্থাৎ, পাকিস্তানকে আজও মুছে ফেলা গেল না মন থেকে। বর্তমান নিবন্ধে সে বিষয়টিই আলোচিত হয়েছে। ২৮ এপ্রিলের পর আজ পড়ুন... তুচ্ছ ঘটনা প্রসঙ্গে বলা যাক। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা জনৈক জেনারেল জামালীই একমাত্র সঠিক উক্তি করেছেন। এই ঘটনা ঘটেছে। সেনাপ্রধানকে যদি প্রকাশ্যে সচিবালয়ের একজন পিয়ন ধাক্কা মারে ও মতিন চৌধুরীকে যদি একজন সিপাহী গালে একটা চড় কষিয়ে দিত প্রকাশ্যে, তাহলে ঘটনাটি তুচ্ছ হতো কিনা বিবেচ্য? সেনারা বলবে, সমর্থকরাও। এদের এ কথা বলার কারণ, সিভিলিয়ানদের অপমান তুচ্ছ করা না হলে সেনা আধিপত্য বিস্তার করা যায় না। সেনাশাসকরা প্রায় সময় ‘লেজুড়বৃত্তি’ নামে একটি শব্দ ব্যবহার করেন। খারাপ বা নেতিবাচক অর্থে তা ব্যবহৃত হয়। লেজুড়বৃত্তি বলতে বোঝান হয়, রাজনীতিবিদদের সমর্থন করাকে। পাকিস্তানে সেনা কর্মকর্তারা ক্ষমতায় থাকলে এই শব্দ ব্যবহার করেন। বাংলাদেশী জেনারেলরাও। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার গোলাম কাদের বিবিসি সংলাপে বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পনেরো শ’ শিক্ষকের মধ্যে দু’শ’ শিক্ষক বিভিন্ন রাজনৈতিক (এই স্ট্যাটিসটিকস তিনি কীভাবে পেলেন তিনিই জানেন) দলের লেজুড়বৃত্তি করে, যা কাম্য নয়।” (আমার দেশ, ২৬.৮.২০০৭) প্রশ্ন, শিক্ষকরা কোন দল করলে তাদের অসুবিধা কী? শিক্ষকরা তাদের ক্লাস নেন কিনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিউটি করেন কিনা, সেটি মূল বিষয়। যে সেনা অফিসার এ কথা বললেন, তাকে কেউ প্রশ্ন করেননি যে, জিয়া ও এরশাদ আমলে তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন। চাকরি করেছেন। সেটি অপরাধ নয়। কিন্তু তারা এখন সৈনিকদের ব্যবহার করে দল করেছেন, ডিজিএফআই দল গড়েছে, দু’হাতে টাকা বিলিয়েছে এবং সংবিধান বিনষ্ট করেছে, যে সংবিধান রক্ষার জন্য সৈনিকরা শপথ নেন। তারা যে ব্যবহৃত হচ্ছেন এবং ফলে সুবিধা পাচ্ছেন, সেটি তারা জানতেন। অর্থাৎ এ সব অন্যায় কাজে তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, জিয়া-এরশাদের-মইনের উচ্চাকাক্সক্ষা মেটাতে সেনারা কি লজুড়বৃত্তি করেননি? মধ্যবিত্তরা এখন সব কিছুর শেষে সৈনিক শব্দটি ব্যবহার করে আনন্দ পান। এ প্রসঙ্গে বদরুদ্দীন উমর লেখেন-“লক্ষ্য করার বিষয় যে, ১৯৭১ সালের আন্দোলনে নানাভাবে অংশগ্রহণকারীদের ঢালাওভাবে মুক্তিযোদ্ধা নামে অভিহিত করা হলেও, সারা সত্তর দশক ধরে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ভাষাযোদ্ধা বা ভাষাসৈনিক হিসেবে অভিহিত করা হয়নি। এর শুরু আশির দশকের প্রথম দিকে। সৈনিক শব্দটি এ সময় শুধু ভাষার সঙ্গেই যুক্ত হয়নি। এরপর থেকে শব্দ, কলম ইত্যাদির সঙ্গে সৈনিক যুক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে শব্দসৈনিক, কলমসৈনিক ইত্যাদি। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির ওপর সামরিক সংস্কৃতির প্রভাব যে কত ব্যাপক ও গভীর,এ হলো তারই প্রমাণ। এই প্রভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নেতা- কর্মীরা ভাষাসৈনিক হিসেবে অভিহিত হতে কোন আপত্তি করেন না। উপরন্তু এই আখ্যা তাদের চিত্তে এমন অবস্থার সৃষ্টি করে, যাতে তারা নিজেদের সৈনিক হিসেবে বিবেচনা করে গৌরববোধ করেন। এটা যে এক কুৎসিত ব্যাপার, তা তাদের মনে হয় না। কাজেই এই সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিবৃতির মধ্যে বসবাস এবং অবগাহন করেই তারা এরপর থেকে নিজেদের স্মৃতিচারণ করতে থাকেন। স্মৃতি যখন তাজা ছিল, তখন যে নেতারা সেকালে স্মৃতিচারণ করেননি, এখন স্মৃতি বাসি, অস্পষ্ট ও ঘোলাটে হতে থাকার সময় তারাই মহাউৎসাহের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করেন। অনেকে একই চর্বিতচর্বণ প্রতিবছরই করে থাকেন।” (বদরুদ্দীন উমর, ‘ভাষাসৈনিকদের’ যুগে একুশে ফেব্রুয়ারি,’ সমকাল, ১৯.২.২০০৮) গোলাম কাদের আরও বলেন, “সেনাবাহিনীর সুনাম কলঙ্কিত করার চেষ্টা চলছে।” সেনাকর্মকর্তাদের তোষণ করে একই সংলাপে শিরিন আক্তার বলেন- “আমাদের একমাত্র ভরসা সেনাবাহিনী। তারা জনগণের অংশ”(আমার দেশ, ২৬.৮.২০০৭)। বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা উঠলেই সেনা কর্মকর্তারা বলেন, সেনাবাহিনীর বিপথগামী অংশ এই হত্যাকা-ে জড়িত। আমার গবেষণায় দেখিয়েছি-(বাংলাদেশী জেনারেলদের মন), এই হত্যায় প্রায় সব সেনা কর্মকর্তার পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ সায় ছিল। জিয়া হত্যার উল্লেখের সময়ও একই বাক্য উচ্চারণ করা হয়। অথচ পুরো দেশ জানে কে, কেন এই হত্যাকা- ঘটিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও জানেন। ক্ষমতায় এলেই সেনাকর্মকর্তারা প্রথমে অপবাদ দেন এভাবে, রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিবাজ, দুর্বৃত্ত, দেশের সর্বনাশ করছেন। কিন্তু-পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে দেখা যাচ্ছে, সেনা শাসকরাও এ বিষয়ে দক্ষ। আবার ঐ কারণে কিন্তু সব রাজনীতিবিদকে ধরা হয় না। তার মানে, সবাই দোষী নয়। মুওদুদকে এরশাদ গ্রেফতার করেন এবং তারপর মন্ত্রী করেন। কিন্তু রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে যখন তারা বলেন, তখন কেন বলেন না, রাজনীতিবিদদের একটি অংশ দুর্নীতিবাজ। কারণটা খুব সাধারণ। হত্যাকা-ের দায় যেন সম্পূর্ণ সেনাবাহিনীর ওপর না পড়ে, পড়লে তারা যে বেশি ভাল, তা প্রমাণ করা যায় না। উল্লেখ্য, সংবাদকর্মী, রাজনীতিবিদরাও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ উঠলে বলেন, সেনাবাহিনীর বিপথগামী একটি অংশ। ধারণা করা হয়, সেনাবাহিনী বিএনপিকে পছন্দ করে বা তাদের সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। প্রেসিডেন্ট জিয়া বিএনপি গঠন করলে এ ধারণার সৃষ্টি হয়। এবং বিএনপিও তাদের বক্তব্যে ও কর্মকা-ে নানা সময় এ ধারণার সৃষ্টি করেছে। খালেদা জিয়ার সময় তারেক রহমানকে যশোর বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে অতিথি করে নিয়ে যাওয়া হয়, যদিও তারেক কোন পদে ছিলেন না। আওয়ামী লীগ সে কারণে ক্ষমতায় এলে সেনা বন্দনায় শুধু মেতে ওঠে তাই নয়, তাদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়। মেট্রোরেল প্রসঙ্গটি ধরা যাক। লাইন যাওয়ার কথা ছিল তেজগাঁ ঘেঁষে। কিন্তু বিমানবাহিনী রাজি হয়নি এ প্রস্তাবে। ফলে তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সংসদ ঘেঁষে। এ জন্য অর্থ ব্যয় প্রচুর বৃদ্ধি পাবে। উল্লেখ্য-সেই সেনা কর্মকর্তা এতে বাদ সেধেছিলেন, তার নামও জিয়াউর রহমান। মইন উদ্দিনের আমলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রেফতার করার পর নির্যাতন চালনাকালে বার বার প্রশ্ন করা হয়েছে, তারা আওয়ামী লীগ করেন কিনা? পাকিস্তান আমলে সেনাবাহিনী প্রধান শত্রু মনে করত আওয়ামী লীঘকে। সেই ধারণাই সঞ্চারিত হয়েছে আমাদের সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে যাদের গ্রেফতার করা হতো, তাদের জিজ্ঞেস করা হতো “তোম আওয়ামী হ্যায়? তোম মুুক্তি হ্যায়।” আমাকে জামায়াত-বিএনপি আমলে যে প্রশ্ন বার বার করা হয়েছিল তা হলো- আমি কবার ভারত গেছি। আমি বলেছি, আমি কয়বার পাকিস্তান গেছি, তাতো জিজ্ঞেস করলেন না। মিডিয়ার একটি অংশের মধ্যেও সে ধারণা বলবৎ। মইনের আমলে একুশে টিভিতে ‘একুশের সময়’-এ আলোচনাকালে উপস্থাপক আশরাফ মন্তব্য করেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে সন্ত্রাস হয়েছে’ অর্থাৎ আওয়ামীরা সন্ত্রাস চালিয়েছেন। আর ‘তারেক জিয়া চাঁদাবাজি করেছেন।।’ অর্থাৎ বিএনপি সন্ত্রাস চালায়নি, আওয়ামী লীগ চালিয়েছে। আর তারেক জিয়া শুধু মাত্র চাঁদাবাজি করেছেন। (একুশের সময় ২.১.০৮)। একই ধরনের মন্তব্য করেন মতিউর রহমান প্রথম আলোর প্রথম পাতার প্রতিবেদনে। (১.১.২০০৮)। আওয়ামী লীগের প্রতি এই যে ঘৃণা পাকিস্তানীদের, কীভাবে তা সঞ্চারিত হয়েছে শিক্ষিতদের মধ্যে, তার উদাহরণও দেয়া যেতে পারে। বিভিন্ন বক্তব্য, কথোপকথনে এটি বোঝা যায়। পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্তর্ভুক্তকরণ নিয়ে গত তত্ত্বাবধায়ক আমলে কথা উঠলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান এক বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুকে শুধু ‘মুজিবুর রহমান’ ও জেনারেল জিয়াকে জিয়াউর রহমান সাহেব বলে উল্লেখ করেন। সেখানে তাজউদ্দীন আহমদসহ চার নেতার কোন উল্লেখ ছিল না। আলোচনাটি ছিল মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত (টিভি সাক্ষাতকার ২৪.১২.২০০৭)। মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মতিন তখন উপদেষ্টা ছিলেন। তিনিও বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্থপতি, কিন্তু জিয়াউর রহমান ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক। সংবাদপত্রের ভাষা দেখুন-“টি এ্যান্ড টি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের জন্য বিটিআরসির চেয়ারম্যানের মতো একজন চৌকস সাবেক সামরিক কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে।” (আমাদের সময়, ১২.২.২০০৮)। সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা শুধু নয়, পরবর্তীকালে সিভিলিয়ানদের ক্ষেত্রেও শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠান তখন তুঙ্গে। সেখানে সেনা শাসনের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য মঈন উ আহমেদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়- “জিল্লুর রহমানের প্রথম প্রশ্নটি ছিল সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে। ১১ জানুয়ারির পর তিনি বিভিন্ন সময় বলেছেন, বাংলাদেশ লাইনচ্যুত ট্রেনের মতো। এটাকে লাইনে তুলতে হবে। গন্তব্যে নিয়ে যেতে হবে। ট্রেনটি লাইনে উঠেছে কিনা প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ট্রেনটি লাইনে এসেছে। এটাকে এখন চালাতে হবে। আর চালাবার জন্য প্রয়োজন দক্ষ ড্রাইভার। আমি মনে করি, এ দক্ষ ড্রাইভার হবেন রাজনীতিবিদরা। যারা দেশকে নিয়ে যাবেন সঠিক গন্তব্যে অর্থাৎ একটা মধ্য পর্যায়ের ধনী দেশে পরিণত করবেন। গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকার ব্যাপারে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী শক্তি হিসেবে কাজ করছে। অর্থাৎ ট্রেনটিকে লাইনে তোলার জন্য ক্রেন হিসেবে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো হয়েছে। লাইনে ওঠার পর চালানোর জন্য যে শক্তি দরকার, অন্যদের সঙ্গে সেনাবাহিনীও সেখানে একটি শক্তি হিসেবে কাজ করছে। জনগণের সমর্থন নিয়ে সবসময় তারা এই শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি মনে করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি বন্যা, সাইক্লোনসহ বিভিন্ন দুর্যোগের উদাহরণ দেন, যেখানে তারা শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। জরুরী অবস্থা জারিকে সমর্থন করে তিনি বলেন, ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত যে অস্থিরতা, রাজনৈতিক সংঘাত ও হানাহানি হয়েছে তাতে রাষ্ট্রপতি জরুরী অবস্থা জারি করে সঠিক কাজটিই করেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতার ফল। তাদের অনেক ব্যর্থতা রয়েছে।’’ “সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করতে চায় না” (প্রথম আলো ২০.৩.২০০৮), সেনাবাহিনী কিন্তু তখন ক্ষমতা দখল করে ফেলেছে। আইয়ুব খানের সময় থেকে জারজ রাজনীতিবিদদের বিকাশ হতে থাকে, যারা বিভিন্ন অজুহাতে বন্দুকধারীদের ছত্রছায়ায় থেকে বন্দুকের ছায়ায় গণতন্ত্র ‘প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে’ লিপ্ত থাকেন। এ ধরনের লোকদের সংখ্যা বাংলাদেশে কম নয়। সামরিক তত্ত্বাবধায়ক আমলে এরশাদ সমর্থনকারী রব ও জিয়ার সমর্থনকারী ফেরদৌস কোরিশী মাঠে নেমে পড়েন। তাদের বক্তব্য দেখা যাক-সাবেক মন্ত্রী আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, ‘‘সংস্কার প্রক্রিয়াকে আরও বিস্তৃত ও টেকসই করতে এবং নতুন রাষ্ট্রীয় শাসন পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য ১৯৭২ সালের সংবিধানের আমূল পরিবর্তন দরকার। এজন্য সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন গঠন জরুরী। এই কমিশন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, ফেডারেল পদ্ধতির সরকার, প্রদেশ ও প্রাদেশিক পরিষদ গঠন, রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনাবাহিনীসহ পেশাজীবীদের অংশগ্রহণ এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রস্তাব সুপারিশ করবে। এই সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আসন্ন জাতীয় সংলাপে সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।” (আমাদের সময়, ১৬.২.২০০৮) ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী বলেন, “পুরনো ধাঁচের রাজনীতি থেকে জাতিকে বের করে আনতে হবে। দ্বি-দলীয় কাঠামো ভেঙ্গে আমাদের বহুদলীয় রাজনীতিতে যেতে হবে, যেন নতুন রাজনীতির উন্মেষ ঘটে। এ জন্য কোন অবস্থাতেই ১/১১-এর আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া যাবে না।“ (আমাদের সময়, ২০.১.২০০৮) ধরতে গেলে দু’বার ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি, যা আগেই উল্লেখ করেছি। কিন্তু ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল-কোথাও এ ধরনের মনোবিকার দেখা যায়নি। নেপালে অনেক আগে থেকেই রাজতন্ত্র ছিল। পাকিস্তান ও বাংলাদেশেই এরকমটি ঘটল। এতবড় একটা লড়াই হলো ১৯৭১ সালে। তারপরও পাকিস্তানকে ঝেড়ে ফেলা গেল না মন থেকে! এটি কি শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি? সিভিল সমাজের ঔদাসীন্য? না কি মুসলমানের মন? (সমাপ্ত)
×