ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

আসছে ‘অতিথি’ ফল উঁকি মারছে পাতার ফাঁকে ফাঁকে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

আসছে ‘অতিথি’ ফল উঁকি মারছে পাতার ফাঁকে ফাঁকে

-------------- মামুন-অর-রশিদ -------------- হরেক রকম রসালো ফলের সমারোহ ঘটে বলে জ্যৈষ্ঠমাসকে বলা হয়ে থাকে ‘মধুমাস’। প্রকৃতিতে এখন বৈশাখ। আর ক’দিন পরেই জ্যৈষ্ঠ। হরেক রসালো ফলে ভরে উঠবে বাজার। মধুর সুবাস ছড়াবে চারদিকে। তবে মধুমাসের শুরুতেই লোভনীয় যে ফলটি সবার আগে নজর কাড়ে তা হলো সুস্বাদু রসেভরা লিচু। পুষ্টিগুণে ভরা লিচু খুব অল্প সময়েই মিলে বাজারে। তাই এ ফলকে ‘মৌসুমি’ বা ‘অতিথি’ ফলও বলা হয়। রাজশাহী অঞ্চলে আমের পাশাপাশি লোভনীয় ও রসালো ফল লিচুর খ্যাতিও দেশজুড়ে। আগেই পাকে রাজশাহীর লিচু। ইতোমধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের গাছে গাছে পাকতে শুরু করেছে লিচু। সুমিষ্ট ও সুস্বাদু লিচুর খ্যাতি এখনও রাজশাহীতেই। পরিমাণে কম উৎপাদন হলেও রাজশাহীর লিচুর আকর্ষণ ও চাহিদা দেশজুড়ে। ইতোমধ্যে সবুজ গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থাকায় উঁকি দিয়েছে লিচ্।ু শুরু হয়েছে মৌমাছিদের আনাগোনা। সবুজ থেকে ক্রমেই লাল বর্ণ ধারণ করছে গাছে গাছে থোকায় ঝোলা লিচুতে। এ অঞ্চলের লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরাও আশায় বুকবেঁধে অপেক্ষা করছেন। এরই মধ্যে কিছুটা হলেও বেশি দাম পাওয়ার প্রত্যাশায় বাজারে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন অনেকে। লিচু চাষিরা জানান, আর কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে রসালো লিচু বা অতিথি ফল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ভাল ফলনের আশা করছেন লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা। গাছে গাছে মুকুল আসার পর থেকে চলতি সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লিচুর তেমন ক্ষতি হয়নি। বৈশাখের শুরু ও তার আগে থেকেই কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হওয়ায় বোঁটা শক্ত হয়েছে। ফলে সাম্প্রতিক কালবৈশাখীর হানায় তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। অন্যবার মৌসুমের শুরুতেই অব্যাহত তাপপ্রবাহের কারণে গুটি ধরার আগেই খসে পড়ে। এবার তেমনটি হয়নি। সঠিক সময়ে মুকুল ও সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত লিচু চাষিদের মনে আশার সঞ্চার জাগিয়েছে। বাগানে এখন তাই চলছে লিচুর শেষ পরিচর্যা। খুব সত্বরই বাজারে লাজুক অথচ রসালো এ লোভনীয় ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। লিচু উৎপাদনের অন্যতম এলাকা রাজশাহী নগরীর রায়পাড়া, ছোটবনগ্রাম, লিচুবাগান ও বানেশ্বর এবং চারঘাট ও বাঘা এলাকায় ঘুরে দেখা যায় গাছে গাছে পাতার ফাঁকে ফাঁকে ‘পাক’ ধরেছে লিচুতে। সবুজ বর্ণের সঙ্গে লাল-গোলাপীর মিশ্রণে অন্যরকম রঙিন হয়ে উঠছে লিচু। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েট ক্যাম্পাসেও রয়েছে লিচু বাগান। এসব বাগানেও এসেছে লিচু। সাধারণত দেশীয় প্রজাতির লিচুর চাষ বেশি হয়ে থাকে রাজশাহী অঞ্চলে। হালে হাইব্রিড জাতের লিচুর চাষ হচ্ছে কোথাও কোথাও। আমসমৃদ্ধ জেলার বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায় বাগান সুরক্ষায় চাষিরা ব্যস্ত। অনেকে নেট দিয়ে ঘিরে রাখছে লিচুর গাছ। বাদুড় ও পাখিদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে এ ব্যবস্থা। চারঘাটের লিচু চাষি মুক্তার হোসেন জানান, লিচুতে পাক ধরার সঙ্গে সঙ্গে বাদুড়ের পাশাপাশি পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়। তাদের ছোবলে নষ্ট হয় গাছের লিচু। তাই বাগান সুরক্ষায় নেট বা জাল দিয়ে দেয়া হচ্ছে লিচুর গাছে গাছে। জানা যায়, মৌসুমি ফলে ভরপুর দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। বিভিন্ন ঋতুতে থাকে ফলের মহাসমারোহ। তেমনই একটি ফল লিচু। আকারে ছোট হলেও এটি রসে ভরপুর। শুধু তাই নয়, এতে রয়েছে মানব শরীরের জন্য দরকারী খনিজ ও ভিটামিন। খুবই সুস্বাদু ফল হিসেবে লিচু ছোট বড় সবার কাছেই জনপ্রিয়। লিচুতে রয়েছে উপকারিতার অনেক গুণ। লিচুর রয়েছে নানা প্রজাতি। পুষ্টিগুণের দিক থেকে বলতে গেলে বলা যায়, এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’। ক্যালসিয়াম দরকার হয় হাড়, দাঁত, চুল, ত্বক, নখ ভাল রাখতে। ফলগবেষকদের তথ্যমতে ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে শর্করা ১৩ দশমিক ৬ গ্রাম, ক্যালরি ৬১, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন ‘সি’ ৩১ মিলিগ্রাম। লিচু শুধু সুস্বাদুই নয়, এর রয়েছে নানা উপকারিতাও। যেমন ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমিতভাবে লিচু খাওয়া ভাল। এর ভিটামিন ‘সি’ ও খাদ্যশক্তি আছে। দেহে শক্তি বাড়ায়। কারণ এটা শরীরে ফ্লুইডের পরিমাণ বাড়ায়। প্রচ- ক্ষতিকর আলট্র্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে শরীরকে রক্ষাও করে থাকে লিচু। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও ফল গবেষণা কেন্দ্র জানায়, রাজশাহী অঞ্চলে এবার লিচু আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৩৮৭ হেক্টর জমি। গতবার ছিল ৩৭১ হেক্টর। প্রতিবছরই লিচু চাষের জমি বাড়ছে রাজশাহীতে। এ বছর রাজশাহীতে প্রথম দিকে মুকুল ভাল ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আলীম উদ্দিন জানান, বাজারে সবার আগে আসে রাজশাহীর দেশীয় লিচু। বারি-১ নামের এ লিচুর এবার বাম্পার ফলনের আশা জাগিয়েছে। প্রতিটি গাছে গাছে রং ধরতে শুরু করেছে। বাজারের প্রথম স্বাদের লিচু বলতেই বারি-১ (রাজশাহীর লিচু) উল্লেখ করে তিনি জানান, এবার রাজশাহীতে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ২০৮ মেট্রিকটন। এ ফলন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম আরও জানান, রাজশাহী অঞ্চলে সাধারণত দুই জাতের লিচু হয়ে থাকে। বারি-১ ও বোম্বাই জাতের লিচু। তবে মুকুলে বোম্বাই জাতের লিচুতে এবার কিছুটা ঘাটতির কারণে সামান্য উৎপাদনে হ্রাস পেলেও বারি-১ লিচুর বাম্পার ফলন হবে।
×