ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুখে জয় অন্তরে ড্র!

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

মুখে জয় অন্তরে ড্র!

মিথুন আশরাফ, খুলনা থেকে ॥ একটি দলে যখন ৮ ব্যাটসম্যান খেলানো হয়, তখন দল যে ড্র’র জন্যই খেলতে নামে; তা আর বোঝার অপেক্ষা থাকে না। বাংলাদেশ ড্র’র জন্যই যে খেলছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। প্রথম টেস্টের প্রথম দিনটি বাংলাদেশ যেভাবে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৩৬ রান করল, তাতে ড্র’র দিকেই যে বাংলাদেশ দলের দৃষ্টি তা বোঝাই যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম প্রথম টেস্ট শুরুর আগের দিন বলেছিলেন, ‘আমরা ড্র বা হারের জন্য নয়, জয়ের জন্যই খেলব।’ মুখে জয় অথচ অন্তরে যে ড্র’ই আছে, তা প্রথম দিনের খেলাতেই প্রমাণ মিলছে। অবশ্য ‘জয় জয়’ ধ্বনি তুলে যদি শেষ পর্যন্ত জয় না হয়, উল্টো হারের শঙ্কাতেই পড়ে যেতে হয়, এরচেয়ে ড্র অনেক ভাল। অন্তত পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা ৮ টেস্টে হারের পর সেই হারের গোলকধাঁধা থেকে তো বের হওয়া যাবে। ১৬ বছর পর ওয়ানডে জেতার পর সিরিজ জিতে পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ও করা গেছে। কোনদিন টি২০ না জেতার আক্ষেপও ঘুচেছে। এবার টেস্টেও পাকিস্তানের কাছে হারা থেকে মুক্তি মিললেও কম কিসের। আর যদি কোনভাবে প্রথম ইনিংসে শেষপর্যন্ত আজ ভাল স্কোর গড়ে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে ধস নামানো যায়, এরপর বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে জ্বলে উঠতে পারে। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসেও ধ্বস নামিয়ে দিতে পারে, তাহলে জয় যে ধরা দেবে না তা কে বলতে পারে। জয় না হলেও ড্র হয়ে গেলেও তো অনেক বড় প্রাপ্তি মিলবে। এরপর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টটিতো আছেই। সেই টেস্টে যদি বাংলাদেশ জয় তুলে নিতে পারে, তাহলে তো সিরিজ জয়ই হয়ে যাবে। ব্যাটসম্যান বাড়িয়ে না নিয়ে, আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে, পাকিস্তানকে হারানোর নেশায় যদি হার হয়ে যায়, তাহলে মুহূর্তেই দলের আত্মবিশ্বাসও কমে যেতে পারে; আবার মিরপুর টেস্টের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় বাধাও তৈরি হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে যেমন বলেছিলেন, ‘আমরা সিরিজ জিততে চাই।’ খুলনা টেস্ট ড্র করার পর মিরপুর টেস্টে জিতেও সেই সিরিজ জয় হতে পারে। যদি খুলনা টেস্ট শেষ পর্যন্ত ড্র করা যায়, তাহলে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের মনোবলে বড় ধরনের ধাক্কাই পড়বে। সেই ধাক্কায় মিরপুর টেস্টে পাকিদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণও করা যাবে, যে আক্রমণ বাংলাদেশকে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টেও জয় এনে দিতে পারে। ব্যাটিংয়ে ১ নম্বর থেকে তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, টেস্টে অভিষেক হওয়া সৌম্য সরকার ও ৮ নম্বরে শুভাগত হোম আছেন। আটজনই ব্যাটসম্যান। বাকি তিনজনের মধ্যে স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে তাইজুল ইসলাম, দুই পেসার রুবেল হোসেন ও টেস্টে অভিষেক হওয়া মোহাম্মদ শহীদ রয়েছেন। শেষ তিনজনকে দিয়ে ব্যাটিংয়ে কোন ভরসা নেই। বাকি আটজন তুখোড় ব্যাটসম্যান। এমন একাদশ দেখেই প্রশ্ন উঠে গেছে, বাংলাদেশ ড্র’র জন্যই খেলছে। এর পেছনে কিছু যুক্তিও আছে। বল হাতে আট ব্যাটসম্যানের মধ্যে শুধু সাকিবই দ্যুতি দেখাতে পারেন। বাকি যে তিনজন বোলার রয়েছেন, তাদের মধ্যে আবার পেসার রুবেল, শহীদ খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে কতটা কী করতে পারবেন, তা সময়ই বলে দেবে। যেহেতু খুলনায় স্পিনটা ভাল ধরে। তৃতীয় দিনে গিয়ে স্পিনই মূল ভরসা হয়ে দাঁড়ায়, তাই সাকিব, তাইজুলই ভরসা। মাত্র দু’জন ভরসাবান নিয়ে কি আর টেস্ট জেতা যায়? যেখানে মিসবাহ, ইউনুস, হাফিজ, আজহারদের মতো ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং করবেন, সেখানে মাত্র দুই স্পিনার দিয়ে কি আর পাকিস্তানকে গুটিয়ে দেয়া যাবে? পাকিস্তানকে যেন বেশি সময় ধরে ব্যাটিং করার সুযোগই দিয়ে দিতে চাইছে বাংলাদেশ। বেশি সময় অপচয় মানেই তো খেলা পাঁচদিনে গড়ানো এবং ম্যাচ ড্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এখানেই বাংলাদেশের ড্র ভাবনা সবার সামনে ভাসতে শুরু করেছে। প্রথম দুই দিন বাংলাদেশ ব্যাটিং করবে, এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু প্রথম দিনে বাংলাদেশ অলআউট হয়নি। দুই দিন ব্যাটিং করা মানে হাতে থাকে আর তিন দিন। পাকিস্তান তৃতীয় দিনে অনেক ভাল ব্যাটিং করবে, তা বলা যাচ্ছে না। যেহেতু তৃতীয় দিন থেকেই স্পিন ধরবে, বাংলাদেশের দুই স্পিনার সাকিব ও তাইজুল মূল ভূমিকা পালন করবেন। তাই বলে তৃতীয় দিনে পাকিস্তানকে অলআউট করে দেয়া যাবে, এমন ভাবনাও নিশ্চয়ই কেউ করবে না। তাহলে কী দাড়াচ্ছে? তৃতীয় দিনও শেষ হবে। চতুর্থ দিনও তাহলে পাকিস্তান ব্যাটিং করবে। তা না হলেও চতুর্থ দিনের অর্ধেকটাতো পাকিস্তান ব্যাটিং করতে পারবে। থাকবে তখন দেড় দিন। এই দেড় দিনে আবার দুই দলের এক ইনিংস করেও থাকবে। কোনভাবে চতুর্থ দিন বাংলাদেশ শেষ করে দিতে পারলেই ম্যাচ ড্র হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো। চতুর্থ দিনের অর্ধেকটা যদি বাংলাদেশ পায়, অলআউট নিশ্চয়ই হয়ে যাবে না। পঞ্চম দিনের অন্তত এক সেশন ব্যাটিং করলেই ম্যাচ ড্র হয়ে যাবে। বাংলাদেশের ব্যাটিংঅর্ডার ও প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে ব্যাটিং দেখে বোঝাই যাচ্ছে সেদিকেই দল এগিয়ে যেতে চাইছে। স্কোরবোর্ডে রান নয়, বাংলাদেশের নজর যত বেশি সময় অপচয়ের দিকেও। তাইতো এত আত্মবিশ্বাস থাকার পরও প্রথম দিনে কোন ঝুঁকি নেননি ব্যাটসম্যানরা। খুলনার উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ব্যাটসম্যান যদি ভুল না করে তাহলে বড় স্কোর গড়তে পারে। তামিম (২৫) ও ইমরুল (৫১) দু’জনই বড় স্কোর গড়তে পারলেন না। ৯২ রানের মধ্যেই দু’জন আউট হয়ে গেলেন। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ ৫২ রান ঠিকই গড়েছেন। তামিম, ইমরুলের পর তৃতীয় উইকেটে যে মুমিনুল-মাহমুদুল্লাহ মিলে ব্যাটিং করলেন, ৯৫ রানের জুটি গড়লেন, তাতে দল অনেকটা পথ এগিয়ে গেল। দলের ১৮৭ রানে গিয়ে মাহমুদুল্লাহও (৪৯) আউট হলেন। মুমিনুল-সাকিব মিলে দিনটি শেষ করেই দিচ্ছিলেন। দিনের শেষ বলটিতে মুমিনুল (৮০) এলবিডাব্লিউ হয়ে গেলেন। বাংলাদেশের ৪ উইকেটের পতন ঘটল। তবে এখনও আছে ৬ উইকেট। এরমধ্যে সাকিব ১৯ রানে ব্যাট করছেন। আজ মুশফিককে নিয়ে দিন শুরু করবেন।
×