ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে ভূমিকম্প আতঙ্ক নিয়েই বসবাস

৩৪ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেই দায় শেষ

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

৩৪ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেই দায় শেষ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ দেড় শ’ বছরের পুরানো নগরীর কাউনিয়া প্রধান সড়কের জমিদার মোহন ব্যানার্জীর বাড়ির ভবন। ওই ভবনে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছে দুটি পরিবার। একই অবস্থা বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাস, বিএম কলেজের সুরেন্দ্র ভবন ছাত্রাবাস, বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী হোস্টেল ও সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের শহীদ আলমগীর ছাত্রাবাস। এভাবেই নগরীর ৩৪টি বহুতল ভবনকে গত দুই বছর পূর্বে নামেমাত্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল সিটি কর্পোরেশন। অদ্যাবর্ধি ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে ফেলার ব্যাপারে আর কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও দশকের পর দশক ধরে মৃত্যুকে সঙ্গী করেই এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস, অফিসিয়াল ও ব্যবসায়ীক কর্মকা- পরিচালনা করছেন সহস্রাধিক মানুষ। সূত্র মতে, দেশে গত কয়েকদিনের তিন দফা ভূমিকম্পের পর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাসকারীদের। দ্বিতীয় দফার ভূমিকম্পে বিএম কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী হোস্টেল ভবন, শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাসসহ একাধিক ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। সূত্রে আরও জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের নক্সা অনুযায়ী নির্মিত নগরীর হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় জাহাঙ্গীর হোসেনের মালিকানাধীন ‘শেখ নিবাস’ নামের পঞ্চম তলার একটি ভবন ২০১৩ সালের ৫ মে বিকেলে পার্শ্ববর্তী ছয়তলা ভবনের ওপর হেলে পড়ে। ওই সময় সিটি কর্পোরেশন, প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে ভবন মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার পর তাৎক্ষণিক ভবনটি সিলগালা করে দিয়েছিলেন বিসিসির ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইসরাইল হোসেন। বর্তমানে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি অফিস ও বাসা হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। নগরীর সুশীল সমাজের একাধিক নেতৃবৃন্দ জানান, দীর্ঘদিন পূর্বে বিসিসি কর্তৃপক্ষ সরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন মিলিয়ে মাত্র ১০টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করলেও কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হচ্ছে, কাউনিয়ার জানুকিসিং রোড এলাকার লস্কার ভবন, কাউনিয়া প্রধান সড়কের সিরাজ মহল, বেনী লাল মহল, পূর্ব বগুড়া রোডের রবিন্দ্র নাথ ভবন, আগরপুর রোডের মহিলা কলেজের দক্ষিণ পার্শ্বের মনু ভবন, ফজলুল হক এভিনিউ রোডের বাহাদুর ভবন ও গোল্ডেন টাওয়ার, সার্কুলার রোডের মুনসুর ভবন, ঈশ্বর বসু রোডের সৈয়দ মঞ্জিল, অমৃত লাল দে কলেজের দক্ষিণ পার্শ্বের মৃধা ভবন, কালু শাহ সড়কের জালাল ভবন, মেজর এম. জলিল সড়কের হাতেম আলী কলেজের সৈয়দ আলমগীর হোসেন ছাত্রাবাস ও কলেজের জ্ঞান বিজ্ঞান ভবন, সদর রোডের ফরিদ উদ্দিনের ক্ষণিকা মেডিক্যাল লেন, সরকারী বিএম কলেজের সুরেন্দ্র ভবন ও বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাস, বগুড়া রোডের সালমা ভবন, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন সড়কের পশ্চিম পার্শ্বের হাজী ভবন, নগর ভবনের পেছনের পরিত্যক্ত হাজতখানা, শেবাচিম হাসপাতালের সামনের ক্ষণিকা ভবন, কলেজ রোড এলাকার ফরিদ ভবন, উপজেলা পরিষদ বরিশাল সদর ভবন, সদর রোডের সৈয়দ ভবন, রূপাতলীর নলছিটি প্লাজা, কাটপট্টির মিল্লাত ফার্মেসি, চন্দ্রিমা ব্রাদার্স, আহম্মদ ক্লথ স্টোর্স, বেলায়েত স্টোর্স, জুম্মান ব্রাদার্স, অমৃত ভবন, সৈয়দ স্টোর্স, চিত্ত ভবন, সাধনা ঔষধালয় ও হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন এলাকার ‘শেখ নিবাস’ নামের হেলে পড়া পঞ্চম তলা ভবন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত বিভাগের এক প্রকৌশলী জানান, শুধু নগরী নয়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, থানা কম্পাউন্ডের কোয়ার্টার এবং হাসপাতাল ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ব্যবহারে সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান, তারা ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি ভবনের মালিকদের প্রাথমিকভাবে চিঠি দিয়েছেন। জরুরীভিত্তিতে মালিক পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলার ব্যাপারে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×