ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জুনের মধ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১ মে ২০১৫

জুনের মধ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা

এম শাহজাহান ॥ সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা আগামী জুন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের পাশাপাশি দেশের সকল সেক্টরে নিয়োজিত শ্রমিকের জন্য এই বিধিমালা প্রযোগ্য হবে। শ্রম আইন মেনেই শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা করবেন মালিক পক্ষ। জিএসপি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এ্যাকশন প্ল্যানের ১৬টি শর্ত বাস্তবায়ন করছে সরকার। এক্ষেত্রে রফতানি প্রক্রিয়া অঞ্চলসহ (ইপিজেড) সকল পোশাক কারখানায় সংশোধিত শ্রম আইন কার্যকর করতে হবে। আর তাই সত্বরই সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। বিধিমালাটি আগামী জুন মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন পাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, টেলিযোগাযোগসহ কয়েকটি সার্ভিস খাত সংশোধিত শ্রম আইনের বাস্তবায়নবিধিতে শ্রমিকের সংজ্ঞাসংক্রান্ত পৃথক দাবি করেছে। শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে মুনাফার অংশ ভাগের হার নিয়ে আপত্তি রয়েছে রফতানিমুখী শিল্পোদ্যোক্তাদের। বিভিন্ন খাতের মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের এ ধরনের মতবিরোধিতায় বিলম্বিত হচ্ছে শ্রম আইন বাস্তবায়নবিধি প্রণয়ন। এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সচিব মিকাইল শিপার জনকণ্ঠকে বলেন, সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আগামী জুন মাস নাগাদ বিধিমালাটি অনুমোদন পাবে। শ্রম আইন কার্যকর করতে হলে এই বিধিমালা দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, একাধিক কারণে বিধিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়া এতদিন বিলম্বিত হয়েছে। আগামী ৬মে সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা চূড়ান্তকরণ বিষয়ে বৈঠক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রম আইনটি সংশোধন করা হয়েছে দেশের সকল খাত বিবেচনায় নিয়ে। নতুন করে ঢুকে পড়েছে টেলিকমসহ কয়েকটি সার্ভিস খাত। আমরা মালিক-শ্রমিক, শ্রমিক নেতা সবার কথা শুনেছি। তাই একটু বিলম্ব হয়েছে। জানা গেছে, বিধিমালার একাধিক বিষয়ে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মতপার্থক্য আছে। বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে অসদাচরণের জন্য শ্রমিকের চাকরিচ্যুতি, কল্যাণ তহবিল, টেলিকম ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের পক্ষে শ্রমিকের পৃথক সংজ্ঞা দাবি, নিরাপত্তা কর্মীর নিরাপত্তা এবং তৃতীয় পক্ষের সরবরাহ করা কর্মীর দায়িত্বভার নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতৈক্যের ভিত্তিতে বিধিমালা চূড়ান্তের জন্য কাজ করছে শ্রমমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ৬০ সদস্যের ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কমিটি (টিসিসি)। এতে সরকার, মালিক ও শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এদিকে, সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালায় বলা হয়েছে, কারখানায় ৫০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে সেখানে সেফটি কমিটি গঠন করতে হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে নিয়মিত দিতে হবে অগ্নি নির্বাপন মহড়া। এছাড়া শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং কারখানায় ন্যূনতম ১শ’ শ্রমিক থাকলে সেখানে গ্রুপবীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষানবিসকাল বা তিনমাস মেয়াদ বৃদ্ধি শেষে কনফারমেশন চিঠি দেয়া না হলে যেকোন শ্রমিক স্থায়ী হিসেবে গণ্য হবেন। পাওনা পরিশোধ না করে কোন শ্রমিককে তার বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে মালিক সংগঠন বা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন আন্তর্জাতিক সংস্থা বা কনফেডারেশনের কাছ থেকে সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারবে। এসব বিধিবিধান রেখে বাংলাদেশ শ্রম সংশোধন আইন-২০১৩’র বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত বাংলাদেশ শ্রম সংশোধন আইন-২০১৩ সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। এতে কিছু সংশোধনীসহ শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের লক্ষ্যে আনা এ বিলটি ২০১৩ সালে পাস হয়। সে সময় বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন ওই সময়ের শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। সংশোধিত শ্রম আইনে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করতে ৪৬ ধারায় নতুন একটি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে মালিক সংগঠন বা শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন আন্তর্জাতিক সংস্থা বা কনফেডারেশনের কাছ থেকে সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালায় শ্রমিকের জন্য একটি কল্যাণ তহবিল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রম আইন যুগোপযোগী বিশেষ করে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নিশ্চিত, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়া সহজ, মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং শ্রমিকের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধন করা প্রয়োজন। নতুন সংশোধিত শ্রম আইনের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ আইনে কোন কারখানায় নারী শ্রমিকের সংখ্যা ২০ শতাংশ হলে ওই কারখানার ট্রেড ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটিতে ন্যূনতম একজন নারী সদস্য থাকার বিধান রাখা হয়েছে; যা নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি রয়েছে শ্রমিকের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনার বিষয়ে। একই ধরনের দাবি আছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শ্রমিক বা কর্মীবাহিনী নিয়েও। এছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার কার থাকবে আর কার থাকবে না এ সংক্রান্ত ধারা নিয়ে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের মতপার্থক্য রয়ে গেছে। আবার মালিক প্রতিনিধিরা শ্রম আইনের ১-এর ৪ ধারা ব্যবহার করে একদল কর্মীবাহিনীকে আইনের আওতার বাইরে রাখতে চাইছেন।
×