ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাটসম্যানদের ওপরই এখন ভরসা

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১ মে ২০১৫

ব্যাটসম্যানদের ওপরই এখন ভরসা

মিথুন আশরাফ, খুলনা থেকে ॥ টেস্ট সিরিজ আসতেই দুই দলের অধিনায়কও পরিবর্তন হয়ে গেল। পাকিস্তানের দায়িত্ব নিলেন মিসবাহ উল হক। বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকলেন মুশফিকুর রহীম। মিসবাহর ছোঁয়ায় এক নিমিষে পাকিস্তান কী বদলেই না গেল! খুলনা টেস্টের প্রথম দিনটিতে যা বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ সমানে-সমান রাখতে পারল। এরপর তো প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে বাংলাদেশকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। মোহাম্মদ হাফিজের ডাবল শতকে (২২৪) তৃতীয় দিন শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ৫৩৭ রানই করে ফেলল পাকিস্তান। বাংলাদেশ থেকে ২০৫ রানে এগিয়ে গেল পাকিস্তান। সরফরাজ আহমেদ (৫১*) ও আসাদ সফিক (৫১*) পাকিস্তানের এগিয়ে যাওয়া আরও বাড়িয়ে নিতে আজ চতুর্থদিনে ব্যাট হাতে নামবেন। এখন ম্যাচে যে অবস্থা দাঁড় হয়েছে, বাংলাদেশকে বড় স্কোর গড়ে হার এড়াতেই ব্যাটিং করে যেতে হবে। আর তা করতে হলে ব্যাটসম্যানদেরই যা করার করতে হবে। তাই ব্যাটসম্যানদের ওপরই এখন ভরসা। ম্যাচ বাঁচাতে বাংলাদেশ যে ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলছে। তাদের ওপরই এখন নজর থাকছে। প্রথম ইনিংসে ৩৩২ রান করেছিল বাংলাদেশ। এ রানের জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় দিন শেষে পাকিস্তান ১ উইকেটে ২২৭ রান করেছিল। হাফিজ ১৩৭ রানে ও আজহার ৬৫ রানে ব্যাট করছিলেন। তৃতীয় দিনে এ দুই ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে নামেন। আরও ৫০ রান স্কোর বোর্ডে যোগ করেন। দ্বিতীয় উইকেটে দুইজনের জুটি গিয়ে দাঁড়ায় ২২৭ রানে। দ্বিতীয় উইকেটে যা কি না বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ জুটি। এমনকি বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১১ সালে আসাদ সফিক-ইউনুস খানের পঞ্চম উইকেটে করা ২৫৯ রানের সর্বোচ্চ জুটির পরেই এ জুটির অবস্থান। দলের যখন ২৭৭ রান তখন গিয়ে তৃতীয় দিনে নিজের স্কোর বোর্ডে আরও ১৮ রান যোগ করা আজহারকে (৮৩) আউট করে দেন শুভগত হোম। তাতে মনে হয়েছিল, এবার বুঝি কিছু একটা হবে। যদি আজহারের উইকেটটি পড়াতে দ্রুত আরও কয়েকটি উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলা যায়। কোথায় কী। আবারও একটি বড় জুটিরই দেখা মিলল। এবার হাফিজ ও ইউনুস মিলে ৬২ রানের জুটি গড়ে ফেললেন। ততক্ষণে দল বাংলাদেশের করা রানকেও টপকে গেল। ১ রান লিড নিয়ে প্রথম সেশন শেষ করল পাকিস্তান। এরপর দ্বিতীয় সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে কিছু দূর এগিয়ে যেতেই ৩৩৯ রানে ইউনুস খানকে (৩৩) দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দিলেন স্পিনার তাইজুল। ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে যদি কোন ‘প্রাণ’ কেউ বের করতে চায়, তাহলে তাইজুলের ডেলিভারিটি যে ইউনুস বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে গেলেন, সেটি থেকে পেতে পারে। এছাড়া তো দিনের পুরোটা সময় জুড়েই ফ্যাকাশে দেখাল বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের। যেই ব্যাট হাতে নামছেন হাফিজের সঙ্গে ৫০ রানের বেশি জুটি করেই সাজঘরে ফিরছেন। যখন ইউনুস আউট হলেন, ততক্ষণে কিন্তু কা- একটি ঘটে যেতে শুরু করে দেয়। হাফিজ ১৯০ রানের ঘরে চলে যায়। তৃতীয়বারের মতো ক্যারিয়ারে ১৯০ রানের ঘরে পৌঁছে গিয়ে প্রথমবারের মতো ডাবল শতক করার আশায় রয়েছেন হাফিজ। এবার মিসবাহকে সঙ্গে নিয়ে হাফিজ এগিয়ে চলতে থাকেন। মিসবাহর ছোঁয়ায় পাকিস্তান বদলে গেল, সেই ছোঁয়ায় যেন সবচেয়ে বেশি বদলালেন ওয়ানডে সিরিজ ও টি২০ ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া হাফিজ। মিসবাহ থাকতেই ডাবল শতক পূরণ করে ফেললেন হাফিজ। যখন হাফিজের স্কোর বোর্ডে ১৯৮ রান, তখন তাইজুলের বলে সুইপ করে ফাইন লেগে ২ রান নিয়ে হাফিজ প্রথমবারের মতো ‘নার্ভাস নাইনটিজে’র বাধা পেরিয়ে ডাবল শতক করলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষেই প্রথম শতক করেন। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষেই প্রথম ডাবল শতকটিও করলেন হাফিজ। হাফিজের ডাবল শতক হওয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের স্কোর বোর্ডেও ৩৫২ রান যুক্ত হলো। এগিয়ে চলতে থাকে পাকিস্তান। কোনভাবেই বাংলাদেশ বোলাররা হাফিজকে থামাতে পারছেন না। আরেক স্পিনার যে কতটা দরকার ছিল দলে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেল। বল ঘুরছে। কিন্তু সাকিব কিছুই করতে পারছেন না। আরেক স্পিনার থাকলে তাইজুল, সাকিবের সঙ্গে আক্রমণ চালাতে পারতেন। কিন্তু বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট তো ৮ ব্যাটসম্যান নিয়েই খেলাতেই মগ্ন! অবশেষে হাফিজকে ঠেকানো গেল। যখন ৩৩২ বলে ২৩ চার ও ৩ ছক্কায় ২২৪ রান করে ফেলেন হাফিজ, তখন শুভগত হোমের বলে লেগ সিøপে মাহমুদুল্লাহ হাতে ক্যাচ আউট হন হাফিজ। ততক্ষণে অবশ্য পাকিস্তান যা করার করে ফেলে। ৪০২ রানে পৌঁছে যায়। হাফিজও তার লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেন। এর আগে ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একবার ১৯৬ ও গতবছর নবেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকবার ১৯৭ রান করেও ডাবল শতক করতে পারেননি হাফিজ। এবার যখন পেয়েছেন, তখন ডাবল শতক করেই ফেললেন। এ ব্যাটসম্যানের এ ইনিংসে বাংলাদেশও তৃতীয় দিনেই ম্যাচ হারের শঙ্কাতেই পড়ে গেল। হাফিজ গেলেও পাকিস্তানের রান তোলার গতি কিন্তু কমেনি। মিসবাহ ও আসাদ সফিক মিলেও ৬৬ রানের জুটি গড়লেন। পাকিস্তানের স্কোর বোর্ডে যখন ৪৬৮ রান, তখন গিয়ে মিসবাহকে (৫৯) আউট করে দেন তাইজুল। মিসবাহকে আউট করতেই ৩ উইকেট শিকার করে নেন তাইজুল। শুভগত হোম নেন ২ উইকেট। অথচ সাকিব ১ উইকেটও নিতে পারলেন না! আগেরদিন ১২ ওভার করে ৫৭ রান দেন সাকিব। তৃতীয় দিনে আরও ১৯ ওভার বল করে ৩ মেডেনসহ মোট ১২২ রান দিয়েছেন। দেশের সেরা অলরাউন্ডারকে তৃতীয় দিন পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে খুঁজেই পাওয়া গেল না। দুই পেসার যে নামানো হলো, তারা কোন কাজেই আসলেন না। মোহাম্মদ শহীদকে টেস্টে অভিষেক করানো হলো। অথচ এ পেসারকে দিয়ে ১৭ ওভার বল করানো হলো! ভালভাবেই একজন বাড়তি স্পিনারের অভাব বোধ হলো। পাকিস্তানের পঞ্চম উইকেট পড়ার পড়ত আর কোন উইকেটই পড়ল না। প্রতিটি উইকেটেই ৫০ রানের বেশি জুটি হলো। ষষ্ঠ উইকেটেই যেমন আসাদ সফিক ও সরফরাজ আহমেদ মিলে ৬৯ রানের জুটি গড়লেন। দুই ব্যাটসম্যানই আবার ৫১ রান করে নিলেন। অপরাজিতও থাকলেন। ৫ উইকেট পড়ার পর এ দুইজনের জুটিতে পাকিস্তানও সাড়ে পাঁচ শ’ রান করার দিকে এগিয়ে গেল। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানও করে ফেলল। এর আগে ২০১১ সালে যে বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৫৯৪ রান করেছিল পাকিস্তান, তা অতিক্রম করে ফেলার হুঙ্কারও যেন দিচ্ছেন সরফরাজ-আসাদ। পাকিস্তান এখন যত রানই করুক, এরপর ম্যাচ বাঁচাতে দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদেরই। এখন তামিম, ইমরুল, মুমিনুল, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, সৌম্য, শুভগতই ভরসা।
×