ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবদুল মান্নান

বিএনপি কী অগস্ত্যযাত্রা শুরু করল?

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৩ মে ২০১৫

বিএনপি কী অগস্ত্যযাত্রা শুরু করল?

৯২ দিনের অগ্নিসন্ত্রাসের পর সরকার ও নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে সুস্থধারার রাজনীতিতে ফিরে আসার একটা পথ খুলে দিয়েছিল তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। যে দলটি ৯২ দিন ধরে দেশে ফ্রি-স্টাইলে মানুষ হত্যা করল, জনসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করল আর দেশে পেট্রোলবোমা সংস্কৃতির ভয়াবহতা আমদানি করল তাদের জন্য এমন একটি নিরাপদ দ্বার খুলে দেয়া শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। প্রশ্ন উঠতে পারে হঠাৎ সরকার বা নির্বাচন কমিশন এই সন্ত্রাসনির্ভর দলটির ওপর এমন সদয়ই বা কেন হলো? তার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে তারা মনে করেছে বিএনপি-জামায়াতের এই জীবন হরণকারী আর অর্থনীতি বিধ্বংসী কর্মকা- চলতে থাকলে দেশ ও জনগণের যে ক্ষয়ক্ষতি হবে তা কাটিয়ে ওঠা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। আর বাংলাদেশের মানুষ যত না এই ধ্বংসযজ্ঞের জন্য বিরোধীদলীয় তস্করদের দায়ী করবে তার চেয়ে সরকারী দল তথা আওয়ামী লীগকে কম দায়ী করবে না। এই ৯২ দিনে অনেক শিক্ষিত মানুষকে অবলীলাক্রমে বলতে শুনেছি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বিএনপি-জামায়াতের দাবি অনুযায়ী একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে বেগম জিয়াকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলেই তো সব ল্যাটা চুকে যায়। আমার সেই পুরনো মুরব্বির কথায় ফিরে যাই। বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত? কেন, ষোলো কোটি। ভুল। দশ কোটি। বাকি ছয় কোটি হচ্ছে বাংলাদেশে বসবাসরত পাকিস্তানী যাদের সংখ্যা গত চল্লিশ বছরে ফুলে-ফেঁপে ছয় কোটি হয়েছে। এদের কাছে বেগম জিয়াই বাংলাদেশের জন্য সর্বোত্তম প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর জীবিত পুত্র, বর্তমানে আইনের দৃষ্টিতে ফেরারি তারেক রহমান গদিনশিন যুবরাজ। দেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার মতো গ্ল্যামারাস হওয়া চাই। শেখ হাসিনার মতো একজন চিরায়ত বাঙালী মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একেবারেই বেমানান। আমার কথার একেবারে অকাট্য প্রমাণ হচ্ছে সদ্য সমাপ্ত তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে কয়েক লাখ ভোট পাওয়া। যারা তাদের ভোট দিয়েছে তারা সকলেই যে বিএনপি বা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তা কিন্তু নয়। তারা বেগম জিয়াকে বেশ পছন্দ করেন। একজন দুধে আলতা মেশানো রঙের মহিলার নির্দেশে যদি তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী পেট্রোলবোমা মেরে কয়েক শত মানুষ হত্যা করে তাতে দোষের কিছুই নেই। আগামীতে বিএনপি যদি ধানের শীষ মার্কা পরিত্যাগ করে পেট্রোলবোমা মার্কাও নেয় তাহলেও তাদের সমর্থন কমবে না। কারণ এরই মধ্যে বাংলাদেশে বসবাসরত পাকিস্তানীর সংখ্যা আরও কয়েক হাজার তো বাড়বে। অনেকেই বলবে এটি বিএনপির প্রতি আমার ব্যক্তিগত আক্রোশের বহির্প্রকাশ তা কিন্তু নয়। আমার প্রজন্ম যারা দেশ স্বাধীন করার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল সেই একাত্তরে, তাদের তো বিএনপির নষ্ট রাজনীতির প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া থাকতেই পারে। নির্বাচনের দিন আমি আমার শহর চট্টগ্রামে ছিলাম। একদিনের জন্য গিয়েছিলাম ভোট দিতে। আমার ভোটকেন্দ্রটি আমার বাড়ির গেট লাগোয়া, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বেলা দশটায় গিয়ে দেখি সেই কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলমের কোন এজেন্ট বা কর্মী নেই। অন্য সকল প্রার্থীর আছে, এমন কী বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরও। জানতে চাইলে অন্য এজেন্টরা বলে মনজুরের কোন এজেন্ট আসেনি। আমার ভোট দেয়ার পর প্রায় ডজনখানেক সেন্টার ঘুরে দেখি একই চিত্র। আসলে মনজুরকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে ঠিক কিন্তু তাদের সাংগঠনিক সমর্থন তার প্রতি কখনো ছিল না। অন্যদিকে ৯২ দিনের অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে জামায়াত-বিএনপির অনেক নেতাই পলাতক ছিল অথবা হাজতবাস করছিল। ২০১০ সালের সিটি নির্বাচনের চিত্রটা ঠিক উল্টো ছিল। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘরানার বলে পরিচিত মনজুরকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিএনপি আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে প্রার্থী মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রায় ৯৫ হাজার ভোটে জয়ী করে এনেছিল। সেই নির্বাচনে একদিকে বিএনপি মনজুর পেছনে তাদের সকল সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োগ করেছিল আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগে ছিল চরম বিভক্তি। এবার পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। আওয়ামী লীগে বিভক্তিটা সম্পূর্ণ দূর না হলেও পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল, আর ছাত্রলীগ, যুবলীগের অধিকাংশ কর্মী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাসিরের প্রতি তাদের সমর্থনই শুধু দেয়নি তাঁকে বিজয়ী করতে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে। এমন অবস্থা মনজুরের বেলায় কখনো ছিল না। তারপরও মনজুর বেগম জিয়ার নির্দেশে নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করার পূর্ব পর্যন্ত ৩ লাখ ৪ হাজার ৮ শত সাঁইত্রিশটা ভোট পেয়েছেন (প্রদত্ত ভোটের ৩৯%)। এটি তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার ফসল। মনজুর ১৭ বছর কাউন্সিলর ও ৫ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। বেশ সজ্জন এবং নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে পেরেছেন। চট্টগ্রামের অনেক পরিচিতজনের কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছি মনজুরকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বিএনপির অনেক নেতা তার কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেই কারণেই যখন মনজুরকে পাশে বসিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনজুরের নির্বাচন থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন তখন মনজুর অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে বলে ফেলেন তিনি রাজনীতি থেকেও অবসর নিচ্ছেন। বিএনপির রাজনীতি তাঁর দেখা হয়ে গেছে। তিনি হয়ত কিছুটা দেরিতে বুঝতে পেরেছেন তাকে টয়লেট পেপার হিসেবে ব্যবহার করে এখন ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বেলায়ও তাই। লিক হয়ে যাওয়া মওদুদ আর শিমুল বিশ্বাসের, নজরুল ইসলাম খান আর জনৈক তৃণমূল কর্মীর কথোপকথনের টেপ এটিই প্রমাণিত করে যে, বিএনপি দিনের প্রথম অংশে যে নির্বাচন বর্জন করবে তা তারা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল। আর আগের দিনের তাবিথ আউয়াল আর নয়জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের একজন প্রতিনিধির কথোপকথন শুনলে মনে হবে তাবিথ আউয়াল নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। তাবিথ দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৩ লাখ ২৫ হাজার আশি ভোট পেয়েছিলেন (প্রদত্ত ভোটের ৪১%)। এই সময়ে তাঁর প্রাপ্ত ভোট ইঙ্গিত দেয় তিনি আনিসুল হকের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পেরেছিলেন। তিনি ব্যারিস্টার মওদুদের সংবাদ সম্মেলনে আসতে গড়িমসি করছিলেন। মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস তাঁর স্বামীর অনুপস্থিতিতে ক্লান্তিহীনভাবে তাঁর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। হয়ত বুঝতে পারেননি পর্দার অন্তরালে অন্য ষড়যন্ত্র আর নাটক চলছে। মির্জা আব্বাসও ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১টি ভোট পেয়েছিলেন (প্রদত্ত ভোটের ৩৫%)। মির্জা সাহেব যেহেতু বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন বলে হয়ত তিনি বিএনপির ষড়যন্ত্রনির্ভর রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত। যে কারণে তিনি আদালতে জামিনের জন্য একাধিকবার আবেদন করেও আবার শুনানির দিন সময় প্রার্থনা করেছেন। আসল কথা হচ্ছে, বিএনপি সৎ উদ্দেশ্যে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। উদ্দেশ্য যদি সৎ থাকত তাহলে তারা ঢাকা উত্তরে একজন অচেনা তাবিথ আউয়াল আর দক্ষিণে ফেরারি মির্জা আব্বাসকে অথবা চট্টগ্রামে অর্ধেক আওয়ামী লীগার আর অর্ধেক বিএনপির মতাদর্শে দীক্ষিত মনজুর আলমকে মনোনয়ন না দিয়ে বিজয়ী হওয়ার জন্য আরও উপযুক্ত প্রার্থী দিত। ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগই দিয়েছিলেন ঢাকার মেয়র হওয়ার জন্য। তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হলো কিনা সামান্য ভুলের জন্য যা সকলে মনে করেন তাঁর ইচ্ছাকৃত। সকলে আবদুল আউয়াল মিন্টুকে একজন সতর্ক এবং হুঁশিয়ার মানুষ হিসেবে চেনেন। তাঁর এ ধরনের ভুল হবে তা কেউ বিশ্বাস করেনি। তিনি আবার নিজের পুত্র তাবিথ আউয়ালকে দিয়েও মনোনয়নপত্র দাখিল করিয়েছেন অথচ মনোনয়নপত্র দাখিল করার পূর্বে তাঁকে তেমন কেউ চিনতই না। এতে বুঝাই যায় আবদুল আউয়াল মিন্টুর মতলব ভাল ছিল না। এটি এক বাক্যে সকলে স্বীকার করবেন বিএনপি বর্জনের ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তিন সিটি কর্পোরেশনেই একটি আনন্দঘন পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছিল। ঢাকা দক্ষিণের কয়েকটি কেন্দ্রে কিছু সহিংসতা হয়েছে এবং তা ছিল কাউন্সিলরদের সমর্থকদের মধ্যে। এ নির্বাচনের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সমর্থনকারী প্রার্থীরা কয়েক ধাপ এগিয়ে। চট্টগ্রামে একটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নয়জন প্রার্থী ছিল। নির্বাচনের সময় এবং তার পরে এ রকম প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত অনেকটা অনিবার্য ছিল। চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় নির্বাচনের পরের দু’দিনও দু’গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ চলেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেনি ততক্ষণ পর্যন্ত মেয়রপ্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে তেমন বড় ধরনের কোন গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি। তারা নির্বাচন বর্জনের পর কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের মাত্রা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায়। কোন কোন এলাকায় ফ্রি ফর অল অবস্থা। দৈনিক ইত্তেফাকের খবর অনুযায়ী তিন সিটি কর্পোরেশনে মোট কেন্দ্র ছিল ২৭০০টি যার মধ্যে ৫৫টিতে গোলযোগ ও অনিয়ম হয়েছে। এমন গোলযোগের কারণে ঢাকায় এক লাখের মতো এবং চট্টগ্রামে ১০ থেকে ১২ হাজার ভোটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (দৈনিক ইত্তেফাক, এপ্রিল ২৯)। অথচ দেশের বেশকিছু গণমাধ্যম নির্বাচনের পরেরদিন এই বলে সংবাদ শিরোনাম করেছে, এই নির্বাচনের ফলে দেশ থেকে গণতন্ত্র চিরতরে নির্বাসিত হলো। এদের কেউই একবারও উল্লেখ করল না বিএনপির নির্বাচন বর্জনের আসল উদ্দেশ্য। বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছে আর ২৮ এপ্রিল তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে একই কাজ করতে চেষ্টা করেছে। বিএনপি এটি কখনো বুঝতে চায়নি সব সময় দেশের সকল মানুষকে বোকা বানানো সম্ভব নয়। আর বাংলাদেশে ছয় কোটি পাকিস্তানীর বাইরে এখনও দশ কোটি বাঙালী আছেন যারা বাংলাদেশের ওপর আস্থা রাখেন এবং বাংলাদেশের আদর্শকে বুকে ধারণ করেন। অন্যদিকে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ নামের নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের একটি মোর্চার মতে এই নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হয়নি নানা অনিয়মের কারণে। তারা সকলে মিলে ঢাকার ১৯১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করেছে। পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ছিল ৬০০ জনের মতো। চট্টগ্রামে তাদের কোন কর্মকা- ছিল না। কারা এই পর্যবেক্ষক, তাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী, দিনের কোন সময় এই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে অথবা কেন্দ্র বাছাইয়ে কী পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে তা কিন্তু তারা বলেন না। বলেন অভিযোগ আছে বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তারা কারা আর কোথা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তাও কিন্তু অজানা। এই মোর্চার কর্তাব্যক্তিরা আবার জিয়ার ‘হাঁ’ ‘না’ ভোট, মাগুরা অথবা ঢাকা-১০ উপনির্বাচন কিংবা ২০০২ সালের তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যাতে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেনি তা নিয়ে কথা বলতে চান না। বলেন আমরা অতীতমুখী হতে চাই না। বলতে বাকি রেখেছেন এই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন অবাধ হয়েছে তা প্রমাণ করতে হলে আওয়ামী লীগকে সব ক’টি সিটিতে পরাজয় বরণের নাটক করতে হবে। অনেকের প্রশ্ন এই তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমেই কী বিএনপি নামক দলটির অবস্থা বাংলাদেশের বামপন্থী দলগুলোর মতো হয়ে গেল। তেমনটি হওয়া মোটেও বাঞ্ছনীয় নয় কারণ দেশে গণমুখী রাজনীতির জন্য একাধিক সুস্থধারার রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন আছে। এই শূন্যতা পূরণ করতে পারত বামধারার রাজনৈতিক দলগুলো। তা এখন আর সম্ভব নয়। বিএনপি এই শূন্যস্থানটি পূরণ করতে পারে তবে তাদের রাজনীতির খোলস পাল্টাতে হবে। মতাদর্শে পরিবর্তন আনতে হবে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তারা যদি মনে করে বেগম জিয়া আর তাঁর গুণধর পুত্র তারেক রহমান আর কিছু সামরিক বেসামরিক অথর্ব আর অদূরদর্শী আমলা দিয়ে অনেক দূর যেতে পারবেন তা হলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। এসব দিয়ে বড়জোর তারা পেট্রোলবোমানির্ভর রাজনীতিতে ফিরে যেতে পারবেন। ফলে তাদের আরও কিছু নেতাকর্মী ফেরার হতে পারে, দল কর্মীশূন্য হতে পারে। বিএনপি কী করবে তা তাদেরই ঠিক করতে হবে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন একটি শুদ্ধ বিএনপি দেশের রাজনীতিকে ইতিবাচক অনেক কিছুই দিতে পারে। আর আওয়ামী লীগও আত্মসন্তুষ্টিতে ভুলে গেলে হবে না। তাদের ভেতরেও অনেক পচা আপেল আছে। সেসব আপেলকে সময় থাকতেই বেছে ফেলে দিতে হবে। কোন ব্যক্তিই দেশ ও দলের স্বার্থে অপরিহার্য নয়। ২ মে, ২০১৫ লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক
×