ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে বন দখল

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৩ মে ২০১৫

কক্সবাজারে বন দখল

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ভূমিদস্যুদের এখন লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে সৈকত সংলগ্ন বনপাহাড়ে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজারে একদিকে সমুদ্র অপরদিকে ওই সমুদ্রঘেঁষা বিশাল বিশাল পাহাড় বর্তমানে বেদখল হয়ে পড়ছে। কক্সবাজার শহরতলীর দক্ষিণ কলাতলী এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক একর বনাঞ্চলের পাহাড় দখলে নিতে আগুন দিয়ে পুড়ে দিয়েছে অসংখ্য বৃক্ষরাজি। শহরতলীর দরিয়ানগর এলাকায় বনবিভাগের ২নং খতিয়ানের এক শতক জায়গা দখলে নিয়ে এক লাখ টাকা হারে বিক্রি করছে ভূমিদস্যুরা। পাহাড়ে আগুন ও বনজসম্পদ পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় এ পর্যন্তও কোন মামলা না নেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, গত বুধবার দরিয়ানগর বড়ছড়া এলাকার বনাঞ্চলে আগুন দেয়ায় দুই শতাধিক একর বনাঞ্চলের সমস্ত বৃক্ষ পুড়ে ছাই এবং অগ্নিকা-ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত দুই মাসে বনভূমি দখলে নিতে একই ধরনের অন্তত ১০টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটিয়েছে আছমত আলীর নেতৃত্বে ভূমিদস্যুরা। এতে প্রায় ১ হাজার একর বনাঞ্চল ধ্বংস এবং পরিবেশ-প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়রা আরও জানায়, ভূমিদস্যু আছমত আলীর একগুঁয়েমি ও তার অনৈতিক কাজে বাঁধা দিলে নাজেহাল হওয়ার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। ওই ভূমিদস্যু চক্রের সঙ্গে কলাতলী বনবিটের কতিপয় বনকর্মীর যোগসাজশ থাকায় সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ বেহাত হতে চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। জানা যায়, জবরদখলকারী চক্র আগে ওইসব পাহাড়ে অবৈধভাবে শনের চারা (খড়) লাগিয়ে শনখোলা তৈরি করে। পরে আস্তে আস্তে খড়ের ছাউনি দিয়ে টংঘর তৈরি করে দখলে নেয়া হয়। কয়েকবছর আগে দখলবাজদের ওইসব শনখোলায় বনবিভাগ চারাগাছ রোপণ করেছে। ওইসব চারা বড় হওয়ায় শনখোলা তথা কোটি টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্নে দখলে নেয়া বনজসম্পদ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে বনাঞ্চলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ভূমিদস্যুরা। এলাকাবাসীর মতে, বন রক্ষা করতে হলে সর্বাগ্রে শনখোলা উচ্ছেদ করতে হবে। অন্যথায় সবার অগোচরে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বনজসম্পদ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। ভূমিদস্যুরা ইতোপূর্বে দখলে রাখা বনভূমির দখল বিক্রি করে কামাই করে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। রোহিঙ্গাসহ বহিরাগতরাই ওইসব জমির ক্রেতা। লাখ লাখ টাকায় শুধুমাত্র দখল বুঝে নিয়ে রাতারাতি বসতঘর তৈরি করে তারা বসতি গাড়ছে সেখানে। মাত্র এক লাখ টাকা দিলেও মিলছে বসতি স্থাপনের জন্য এক একটি ভিটা। শহরতলীর লারপাড়া, দরিয়ানগর ও কলাতলী এলাকায় মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের মধ্যে ক্যাম্প ত্যাগকারী শরণার্থীরাও রয়েছে। নিরাপদ স্থানে রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া সরকারের সিদ্ধান্তের পর টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি শরণার্থী ক্যাম্প থেকে লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ওইসব রোহিঙ্গারা। কলাতলী থেকে ইনানী পর্যন্ত বনবিভাগের বহু জায়গা দখল কিনে বসবাস করে চলছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। সন্ধ্যার পর ওইসব রোহিঙ্গারা দরিয়ানগর ও হিমছড়ি পয়েন্টে সড়কে ব্যারিকেট বসিয়ে ছিনতাই করে থাকে পর্যটকদের। এ ব্যাপারে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের কলাতলী বিটের বিট কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান জানান, বনাঞ্চলে আগুন দেয়ার ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব না হওয়ায় মামলা করা যায়নি।
×