ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৩ মে ২০১৫

বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ

নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পর কয়েক হাজার মানুষ নিখোঁজ থাকলেও তাদের বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছে দেশটির সরকার। ধ্বংসস্তূপের নিচে আর কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বলে শনিবার বিবৃতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২৫ এপ্রিল ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয় হাজার ৬২১ জনে পৌঁছেছে। আহত ১৪ হাজারেরও বেশি। এদিকে এক হাজারের বেশি ইউরোপীয় নাগরিক নিখোঁজ বলে নেপালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান জানিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই ভূমিকম্পের সময় জনপ্রিয় ট্র্যাকিং রুটগুলোতে ছিলেন। খবর এএফপি, বিবিসি ও ওয়েবসাইটের। নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লক্ষ্মী প্রসাদ ধাকাল শনিবার বলেছেন, দুর্যোগের পর এরই মধ্যে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে লোকজনকে উদ্ধারে আমরা প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু এখন আমরা ধরে নিচ্ছি এর নিচে কেউ আর বেঁচে নেই। ভূমিকম্পের পর নেপালে উদ্ধার কাজে ২০টি দেশ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ধ্বংস্তূপ সরানোর কাজ চললেও গত বৃহস্পতিবারের পর জীবিত কারও সন্ধান আর মেলেনি। ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা লাশে মর্গ ভরে গেছে। এদিকে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এবং লাশের দুর্গন্ধ কমাতে কাঠমা-ুতেই শুক্রবার অশনাক্ত অনেক লাশ দাহ করা হয়। উদ্ধারকাজে থাকা ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা রমন লাল বলেছেন, মর্গে আর লাশ রাখার উপায় নেই। তাই লাশ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে দাহ করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। উদ্ধার কার্যক্রমের সঙ্গে ত্রাণ বিতরণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হলেও পাহাড়ি এই দেশের দুর্গম অঞ্চলে তা পৌঁছতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নেপাল ফুড কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক রাজ খানাল বলেছেন, ত্রাণ পৌঁছতে পর্যাপ্তসংখ্যক ট্রাক ও ড্রাইভার পাওয়া যাচ্ছে না। সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে দুর্গত বিভিন্ন এলাকায় নুডলস ও বিস্কুট ফেলা হচ্ছে। এদিকে অপ্রতুল ত্রাণের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে নেপালের ঘরহারা ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। বৃহস্পতিবার সাংগাচকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া একটি গাড়িতে ক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়ে লুট করে নেয় ত্রাণসামগ্রী। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, ত্রাণ সরবরাহকারী গাড়িগুলোতে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃষ্টিপাতও ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিচ্ছে। নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল গৌরব রানা ত্রাণকাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি শুক্রবার বলেছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বেড়ে ১০-১৫ হাজার হতে পারে। এদিকে নেপালে নিযুক্ত ইইউ দূত রেনজি তিরিঙ্কা শুক্রবার বলেছেন, কর্তৃপক্ষ ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রায় এক হাজার নাগরিকের কোন খোঁজ পাচ্ছে না। তাদের বর্তমান অবস্থা কী, তা আমরা জানি না। তারা জীবিত আছেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ইইউর অন্য এক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের অধিকাংশই পর্বতারোহী। ভূমিকম্পের সময় তারা মাউন্ট এভারেস্ট বা দুর্গম লাংটাং পাহাড়ি অঞ্চলের আশপাশে অবস্থান করছিলেন। তাদের অনেকেই জীবিত আছেন এবং ভূমিকম্পের কারণে ওই সব অঞ্চলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। অনেক ভ্রমণকারী নিজ নিজ দূতাবাসে নিবন্ধন ছাড়াই নেপালে গেছেন। এখন তাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে যাবে। ভূমিকম্পের পর এখন পর্যন্ত ইইউ দেশগুলোর ২০ নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের কেউ কেউ তুষার ধসে চাপা পড়ে মারা গেছেন। নেপালে পর্বত আরোহণের জন্য পর্বতারোহীদের কাছে এপ্রিল ও মে মাস সবচেয়ে জনপ্রিয় সময়। এ সময় গোটা বিশ্ব থেকে প্রচুর পর্বতারোহী নেপালে যান। ভূমিকম্পের সময় তিন লাখ পর্যটক নেপালে ছিলেন বলে দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ভূমিকম্পের পর কয়েক দফা ভূকম্পনের কারণে বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছেন অনেক নেপালী। জাতিসংঘের হিসাবে এই ভূমিকম্পে নেপালের ৮০ লাখ মানুষ এবং ৬ লাখ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ২০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য, পানি ও ওষুধ খুবই জরুরী। দেশটির জনসংখ্যা ২ কোটি ৮০ লাখ। এদিকে ভূমিকম্পের আঘাতে বিপর্যস্ত শহরটির যেদিকে তাকানো যায় শুধু ধসেপড়া ভবন। আগের অবস্থায় শহরটিকে ফিরিয়ে নিতে দরকার অন্ততপক্ষে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে অবকাঠামোগত পূর্বরূপ ফিরিয়ে আনার জন্য আনুমানিক এই পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাম শর্মা মাহাত।
×