ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াতপন্থী বুয়েট শিক্ষকের শাস্তি দাবিতে ছাত্রলীগ সোচ্চার

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৪ মে ২০১৫

জামায়াতপন্থী বুয়েট শিক্ষকের শাস্তি দাবিতে ছাত্রলীগ সোচ্চার

মুহাম্মদ ইব্রাহীম সুজন ॥ যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্যকারী জামায়াতপন্থী বুয়েট শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে এবং বুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। এদিকে এই ঘটনায় বুয়েট প্রশাসনের বিতর্কিত অবস্থান নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াতপন্থী শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মোট চারজনকে বহিষ্কার করে। এই ঘটনার পর দেশব্যাপী বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানায়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলন শুরু করে। এর মধ্যে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে অনড় অবস্থানে রয়েছে বুয়েট প্রশাসন। অন্যদিকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে তীব্র আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সারাদেশে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলা, মহানগর, উপজেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচী পালিত হবে। একই দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ জনকণ্ঠকে বলেন, বুয়েট প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অন্ত্যন্ত ন্যক্কারজনক। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বহিষ্ককৃতদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। তবে এই ঘটনা নিয়ে আর কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. খালেদা ইকরাম। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘দেখেন ভাই, আমি আর এই বিষয় নিয়ে কোন ধরনের কথা বলতে চাই না। অনেক হয়েছে, এখন চুপ থাকাই ভাল। আমি ফোন রাখছি।’ বাঁশের কেল্লা ও বুয়েট শিবিরের অভিনন্দন ॥ জামায়াতপন্থী শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মোট চারজনকে বহিষ্কার করায় বুয়েট প্রশাসনকে অভিনন্দন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জামায়াত-শিবিরের ‘বাঁশের কেল্লা’ এবং ‘বুয়েট ইসলামী ছাত্রশিবির’। এসব বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রহসন চলছে। সেই বিচারের সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়ায় বুয়েট শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে ছাত্রলীগ মারধর করেছে। ছাত্রলীগের মতো অগণতান্ত্রিক ও সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাদের বহিষ্কার করে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করায় বুয়েট প্রশাসনকে অভিনন্দন। বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ ॥ অন্যদিকে বহিষ্কারের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রদান ও কর্মসূচী পালন করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ঢাবি শাখা সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ। আন্দোলনের পথে ছাত্রলীগ ॥ জামায়াতপন্থী এক শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। তারা জানিয়েছেন, বুয়েটে অনেক আগে থেকেই স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বুয়েটে জামায়াত-শিবিরের অসংখ্য কর্মী সক্রিয় রয়েছে। ফলে বুয়েট ক্যাম্পাস আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাভাবিক জায়গা নেই। এখানে পড়ালেখার সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে অনতিবিলম্বে জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটিকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। এ জন্য দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামার আহ্বান জানান তারা। জামায়াতপন্থী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বহিষ্কার হওয়া ছাত্রলীগ সভাপতি শুভ্রজ্যোতি টিকাদার বলেন, একজন শিক্ষক দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে সমালোচনা ও কটাক্ষ করে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কথা বলে। প্রতিবাদ জানালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলে, এরপরেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ জানাতেই আমাদের বহিষ্কার করা হলো। আমরা ন্যায় বিচার চাই। তিনি আরও বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। আশা করি আমরা ন্যায় বিচার পাব। বহিষ্কারাদেশ বিষয়ে তিনি বলেন, বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করার পর আদালত থেকে তা খারিজ করে দেয়া হয়। এখন আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
×