ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আরও বড় কীর্তি গড়তে চান তামিম

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৪ মে ২০১৫

আরও বড় কীর্তি গড়তে চান তামিম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ তিন ফরমেটেই এখন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ওপেনার তামিম ইকবালের। টেস্টে ২০৬, ওয়ানডেতে ১৫৪ ও টি২০তে ৮৮ রান করেছেন তামিম। শনিবার খুলনায় প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৬ রান করে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশকেও ড্র’র স্বাদ এনে দিয়েছেন। ম্যাচ শেষ হতেই তামিমকে মনে করিয়ে দেয়া হয়, বাংলাদেশের হয়ে সব ফরমেটের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের মালিক আপনি। তামিম বলেন, ‘আমার আসলেই খুব ভাল লাগছে এতে। ক্রিকেটের বড় খেলোয়াড়দের দেখবেন, ভাল সময় তারা এমন সব বড় বড় কীর্তি গড়ে রাখেন, বাজে সময় খারাপ কিছু আলোচনার সুযোগই থাকে না। আমিও ও রকম কিছু করতে চাই।’ তামিমের কথাতেই বোঝা যাচ্ছে, ক্রিকেটে আরও বড় বড় কীর্তিই গড়তে চান তামিম। প্রথম ডাবল শতক করলেন। দুর্দান্ত সময় কাটাচ্ছেন। তামিম এ নিয়ে বললেন, ‘আমি চেষ্টা করছিলাম, অন্তত চা-বিরতি পর্যন্ত ব্যাটিং করতে। লক্ষ্য ছিল ওটাই। ভেবেছিলাম তাহলে খেলাটা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। পুরোপুরি আমাদের পক্ষে এসে যাবে। একটাই জিনিস, ব্যাটিংটা উপভোগ করছি। এর চেয়ে বেশি নয়। হয় তো ভাল ব্যাটিং করছি, রান হচ্ছে। এই জিনিসটা যত বেশি দিন ধরে রাখা যায় ততই আমার জন্য ভাল হবে। খারাপ সময় কখন আসবে সেটা তো কেউই জানে না। খারাপ সময় এই ভাল সময়টা কাজে দেবে।’ তামিম-ইমরুল মিলে যে ৩১২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছেন। যেই জুটিতে ম্যাচ বাঁচিয়েছে বাংলাদেশ। সেই জুটি দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ার বিশ্বরেকর্ডই গড়েছে। সেই রেকর্ড নিয়ে তামিম জানান, ‘এটা বিরাট এক অর্জন। একটা বিশ্ব রেকর্ডে বাংলাদেশের দুজনের নাম থাকাটা খুবই আনন্দের। আমরা দুজনই চেষ্টা করব বাংলাদেশকে যতটা সম্ভব ভাল শুরু এনে দেয়ার।’ নিজের ব্যাটিং নিয়ে পরিকল্পনার কথাও জানান বাংলাদেশ ওপেনার, ‘আমি সব সময়ই আমার জন্য খুব উঁচু একটা মানদ- ঠিক করে নিই। হয় তো বা যেটি ঠিক করেছিলাম, সেখানে পৌঁছাতে পারিনি। তবে ডাবল সেঞ্চুরি করায় একটা স্বপ্ন তো অবশ্যই পূর্ণ হয়েছে। আমি অনেক খুশি। ক্রিকেটার হিসেবে যে লক্ষ্যগুলো ঠিক করেছি, আস্তে আস্তে সেগুলোও যদি পূরণ করতে পারি, আমিই হব সবচেয়ে সুখী মানুষ। আমাদের সেঞ্চুরি হওয়ার পর, নিজেরা কথা বলেছি। বলেছি আমাদের নিজেদের কাজ শেষ। এখন থেকে যাই হবে, দলের জন্য হবে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল সময়ক্ষেপণ করা, তবে তার মধ্যেও ইতিবাচক থাকতে হবে। পঞ্চম দিনে যখন ব্যাটিং করতে নামি, নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম, আমরা যদি লাঞ্চ পর্যন্ত ব্যাটিং করতে পারি খেলাটা আমাদের দিকে এসে যাবে। দুর্ভাগ্যক্রমে ইমরুল লাঞ্চের কিছুক্ষণ আগে আউট হয়ে যায়। তবে আমি মনে করি, পুরো ইনিংসে সে যেভাবে ব্যাটিং করেছে, এক কথায় অসাধারণ। ব্যতিক্রমীও বলব, কারণ কখনই সে তার ব্যাটিংয়ের চরিত্র থেকে বের হয়নি। আমার দেখা অন্যতম সেরা ইনিংস। বাংলাদেশ ২৯৬ রানে পিছিয়ে ছিল। সেখান থেকে কী দুর্দান্তভাবেই না ম্যাচটা ড্র করে নিল। তামিম এমন খেলার পেছনে কোচকেই যেন কৃতিত্ব দিতে চাইলেন। বললেন. ‘আমাদের কোন বাড়তি চাপ দেয়া হয়নি। কোচ বলেছিলেন, মনে কর প্রথম ইনিংস ব্যাট করছ। যা ভাল মনে হয় তাই করবে। এটা আমার কাছে খুব ইতিবাচক মনে হয়। যার যেটা খেলা উনি সেটাকেই সমর্থন করেন। এমনকি আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে কেউ যদি ১০ রান করেও একটা ছয় মারতে গিয়ে আউট হয়ে যায়, তাতেও তার কোন সমস্যা থাকে না।’ ছক্কা মেরে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। ১৯৫ রানে গিয়ে ছক্কা মারা। এক কথায় অসাধারণ। তামিম এ নিয়ে বলেন, ‘১৬৯-এ যখন ছিলাম তখন থেকে ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে চিন্তা শুরু করি। তারপর তো তিন ছয় হয়ে গেল। ১৯৫-এর সময় আমি জানতাম সে ওই জায়গায়ই বল করবে। পরিকল্পনাটা আমার জন্য খুব ভাল ছিল। আর ৯৫-৯৬ রানে গেলে তাড়াতাড়ি সেঞ্চুরি করে ফেলাটাই আমি উপভোগ করি।’ সেঞ্চুরি যেদিন করলেন, ম্যাচের চতুর্থ দিন তামিমের ফুফু মারা গেলেন। সেঞ্চুরিটি ফুফুকে উৎসর্গ করেছেন। আর ডাবল শতকটিকে তামিম দলকেই উৎসর্গ করেছেন। তামিম বলেছেন, ‘ম্যাচের চতুর্থদিন আমার জন্য খুব দুঃখের দিন ছিল। দুই শ’ রান করেছি। এটা দলকেই উৎসর্গ করতে চাই। তবে দুই শ’ রানের চেয়ে বেশি ছিল অত সময় ধরে ব্যাটিং করতে পারা। এটা টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।’ তামিম তিন ম্যাচে টানা শতক করলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্টে যা কখনই হয়নি। করলেন সবচেয়ে বেশি ৭ টেস্ট শতক। আবার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও এখন তামিমেরই। সেই তামিম এতেই খুশি হতে পারছেন না। আরও বড় বড় কীর্তি গড়তে চান তামিম।
×