ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ জিতলে গণতন্ত্র পরাজিত, আর বিএনপি জিতলে গণতন্ত্রের জয় !

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৫ মে ২০১৫

আওয়ামী লীগ জিতলে গণতন্ত্র পরাজিত,  আর বিএনপি জিতলে গণতন্ত্রের জয় !

[গত সংখ্যার পর] দেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন বরাবরই ছিল ও আছে। তবে ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণে দেখা যায়, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সবচেয়ে বিতর্কিত ও বাধাগ্রস্ত করেছে সামরিক শাসকরাই। ৪ মে’র পর আজ পড়ুন ... জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় এসে প্রথমেই সেনা কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে জানালেন, আওয়ামী লীগই প্রধান শত্রু যারা সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর কখনই আওয়ামী লীগের কাছে করা যাবে না। তার ভাষায়- We will stay in power for about two years and then handover power to a political party but obviously not to Awami League and Awami League will destroy the Armed Forces. ১৯৮৫ সালে ৪৬০ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়। গোলযোগ হয় ২০০টি নির্বাচন কেন্দ্রে এবং নিহত হয় ৮ জন। ভোট পড়ে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। অনেক জায়গায়, যেমন শ্রীনগরে, ‘প্রার্থী সমর্থকদের চাপের ফলে যে গ্রামের জন্য যে ভোট কেন্দ্র নির্দিষ্ট ছিল সেখানে ভোট না দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো কেন্দ্রে ভোট দিয়েছে। ভোটার নয়, প্রার্থী ও সমর্থকরা ইচ্ছেমতো ভোট দিয়েছে। একটি কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখা ২০২৪। ঐ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২০৩৫টি। এই কেন্দ্রে ১০০ পাতার ব্যালট প্রার্থী সমর্থকদের হাতে একেবারে ছিড়ে না দেয়ায় সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে নাজেহাল হতে হয়।’ লক্ষ্মীপুরে প্রিসাইডিং অফিসারকে গৃহবন্দী ও আলিমপুরে প্রিসাইডিং অফিসারকে লাঠিপেটা করা হয়। দৈনিক ইত্তেফাক মন্তব্য করে, ‘ভোট নামক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বহুলাংশে ক্ষুণœœ এবং দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত সংশয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।... এভাবে নিজস্ব পরিকল্পনা অনুসারে সংসদ নির্বাচনের আগে সামরিক সরকার যে ভিত্তি গড়তে চেয়েছিল, তার প্রাথমিক উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সমাধা হয়ে গেল। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ১৫ দল অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনের শুরু থেকেই নির্বাচনী বিধি-নিষেধ ভঙ্গের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত মেজর জেনারেল মহব্বতজান চৌধুরী ও মেজর জেনারেল শামসুল হকও প্রার্থী হন। এরা দু’জনই ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্য। উল্লেখ্য, সরকারী বিধি অনুযায়ী সামরিক বাহিনীতে চাকরিরত কোন ব্যক্তি নির্বাচন প্রার্থী তো দূরের কথা, কোন রাজনৈতিক দলের সদস্যও হতে পারেন না। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে অবাধ নির্বাচন গণকমিশনের আমন্ত্রণে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দু’জন সদস্য ও বিবিসির একজন সাংবাদিক ঢাকায় আসেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে। তারা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘যদিও তাদের তিন জনের অভিজ্ঞতা ভিন্ন, কিন্তু তাদের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার ও অভিন্ন। এতে অপরাহ্ণে সশস্ত্র ব্যক্তিদের দ্বারা ভোট গ্রহণ নস্যাত করার কথা বলা হয়। তারা লাঙ্গল ব্যাজধারীদের (জাতীয় পার্টি) উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনে কারচুপির জন্য প্রধানত জাতীয় পার্টি দায়ী। যে নির্বাচন বাংলাদেশে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক ঘটনা হতে পারত ও হওয়া উচিত ছিল তাকে জাতীয় পার্টি গণতন্ত্রের ট্র্যাজেডিতে পরিণত করেছে।’ ঐ রিপোর্ট অনুযায়ী- ১. এমন কোন আসন খুঁজে পাওয়া যায় না যেখানে জাপা প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে অথচ সন্ত্রাস হয়নি। ২. বাংলাদেশে ইতোপূর্বে কখনও ভোট কেন্দ্রে সেনাবাহিনী দেখা যায়নি যা এবার দেখা গেছে। ৩. ‘বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বেতার-টেলিভিশনে যেভাবে ফলাফল রদবদল ঘোষিত হয়, সন্ধ্যা ছটায় ফলাফল প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়, তাতে নির্বাচন কমিশনের বাইরে অন্য কোথাও ফলাফল ম্যানিপুলেশনের তথা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্যু ঘটেছে বলে জনমনে প্রবল সন্দেহ ছড়িয়ে পড়েছে।’ স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। পরাজিত শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন- ‘সরকার ও জাতীয় পার্টি এবার শুধু ভোটের কারচুপিই করে নাই, ভোটের ডাকাতি করিয়াছে।’ এরপর বড় ধরনের কোন নির্বাচনে সিভিল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেননি। এরশাদ সব রকমের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। দুটি উদাহরণ উল্লেখ করছি। ১৯৮৭ সালে নওগাঁ উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহবুব জামান লক্ষাধিক ভোট পান, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী পান ১৬ হাজার ভোট। অথচ আসনটি সব সময় ছিল আওয়ামী লীগের। ১৯৮৮ সালের আরেক উপনির্বাচনে, ঢাকার মোহাম্মদপুর কেন্দ্রে প্রার্থী ছিলেন আবুল হাসনাত। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রগুলোতে ভোটার ছিল না। ত্রিশ-চল্লিশজন তরুণ অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে পাহারা দেয়। হাসনাত পান ৯৮ হাজার ৬৯ ভোট এবং তার নিকটতম প্রার্থী মজিবর রহমান পান ৫,৭৫৯ ভোট। এরশাদের এই নির্বাচনের সামরিকায়নের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে নির্বাচনী এলাকার (বাখেরগঞ্জ-৪) নির্বাচনী ফলাফল ঝালকাঠির জেলা জজ ১৬ ডিসেম্বর এক রায়ে বাতিল করেন। ঐ আসনে জাতীয় পার্টির মাইদুল ইসলামকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল। সম্ভবত এই প্রথম বাংলাদেশে কারও আসন বাতিল করা হয়। ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে যে মন্তব্য করে তাতেই এরশাদ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণাটি স্পষ্ট হবে।Ñ ‘প্রকৃতপক্ষে কোন নির্বাচন হয়নি... ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি... বাদী-বিবাদী উভয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার প্রতিযোগিতা করেছেÑ ভোটারের চেয়ে ব্যালট বেশিÑ রিটার্নিং অফিসার খেয়াল-খুশিমতো ভোটের সংখ্যা বসিয়ে মাইদুল ইসলামকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন... এরূপ কার্যকলাপ দেশে চলতে থাকলে দানবীয় শক্তির কাছে ভাল মানুষকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।’ হোসেন জিল্লুর রহমান এ ধারাকে উল্লেখ করেছেন ‘চড়ষরঃরপধষ বীপষঁংরড়হ’-এর জন্য ভায়োলেন্স হিসেবে। তিনি এক হিসাবে দেখিয়েছেন ১৯৮৮ সালে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৩০০০ কেন্দ্রে সংঘর্ষ হয়েছিল। এরশাদ চেয়েছিলেন এভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে মানুষকে আস্থাহীন করে তুলতে। মানুষ আস্থাহীন হয়েছিল নির্বাচন নিয়ে নয়, বরং এরশাদকৃত নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে। এবং নির্বাচনের এই সামরিকায়নের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধেই সিভিল সমাজে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে ওঠে এবং দেশজুড়ে দাবি ওঠে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর সুষ্ঠু নির্বাচনের ভার অর্পণ করতে হবে, যাতে সিভিল সমাজের প্রতিনিধিরা সার্বভৌম একটি সংসদ গড়ে তুলতে পারেন। অন্তিমে এরশাদকে এই দাবির কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল। ॥ ৪ ॥ ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসেন। সে সময় শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, ‘সূক্ষ্ম কারচুপি করা হয়েছে।’ তিনি এর বিশদ ব্যাখ্যা দেননি। গোলযোগ পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো হয়নি এবং নির্বাচন সবাই মেনে নেয়। খালেদা জিয়ার শাসনামলের শেষ পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ওঠে। বিএনপি ছাড়া সব রাজনৈতিক দলই এতে ঐকমত্য পোষণ করে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করে এবং ২৬০টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু, পুরো দেশ তার বিরুদ্ধে চলে গেলে তিনি বাধ্য হন সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচন দিতে। এখানে একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ্য, ‘খালেদা বাধ্য না হলে কি নির্বাচন দিতেন।’ এ প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ্য, বিএনপি-জামায়াত ও মিডিয়া ২০১৪ সালের নির্বাচনকে নির্বাচন নয় উল্লেখ করেছে। ২০১৪ সালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যা ছিল বেশি এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচিত প্রার্থীর সংখ্যা ১৯৯৬ সালের তুলনায় ছিল কম। এ কথা কেউ এখন উল্লেখ করেন না। ২০০১ সালের নির্বাচনের কথা কি বলব। নির্বাচনের শুরু থেকেই লতিফুরের ঠ্যাঙ্গারে উপদেষ্টারা ছিলেন আওয়ামীবিরোধী। প্রথম দিন থেকেই তাদের নির্দেশে সেনাবাহিনী-পুলিশ আওয়ামী সমর্থকদের পেটাতে লাগল। নির্বাচনের আগে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হলো যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে না আসেন। সেনাবাহিনীর উদ্যোগেই এ কাজটি করা হয়েছিল। সেনাপ্রধান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা লে. জে. হারুনুর রশীদ। নির্বাচনের আগের দিন চাউর হয়ে গেল প্রত্যেক থানায় কর্মরত অফিসারের কাছে সাদা খাম পৌঁছে গেছে। আমাদের এলাকায় বিএনপির প্রার্থী ছিলেন এহসানুল হক মিলন। তার সঙ্গে দুদিন আগে থেকেই খুব সম্ভব মার্কিন দূতাবাসের এক মহিলা অফিসার অবস্থান করছিলেন। ভোটের দিন তাকে আমাদের গ্রামের কেন্দ্রে নিয়ে আসা হলো, অন্যান্য কেন্দ্রেও তিনি গেলেন। সব এলাকায় বিশেষ করে আমাদের এলাকায় হিন্দুদের পিটিয়ে ঘরে ফেরানো হলো। মিলিটারির লাঠির বাড়ি আমি ও আমার স্ত্রীও খেয়েছি। আমাদের কেন্দ্রে যাতে ভোট বেশি না পড়ে, সে কারণে কি এক কারণ দেখিয়ে তারা লাঠিচার্জ করছিল। বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী প্রার্থী ও সমর্থকরা প্রহৃত হতে লাগলেন শুধু নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে নয়, বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের হাতেও। ফরিদগঞ্জে আমার বন্ধু শফিকুর রহমান [সাংবাদিক ও আওয়ামী প্রার্থী] পুকুরে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে পরে আমাকে জানিয়েছিলেন। অনেক এলাকায়, যেখানে আওয়ামী প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা ছিল না, সেখানে ব্যালট বাক্সের খোঁজ পাওয়া গেল না। এই মুহূর্তে সেই নির্বাচনে নিহতের সংখ্যা মনে পড়ছে না। বিএনপি-জামায়াতকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো। লতিফুর ঘরে ফিরলেন। ইতিহাসের ট্র্যাজেডি, সেই যে ঘরে ফিরলেন, তিনি আর ঘর থেকে বেরুতে পারলেন না। সেই থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হলো। বিএনপি-জামায়াত যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচনে সেনাবাহিনী চায়, তার প্রধান কারণ এই। আপনারা কি মাগুরা নির্বাচনের কথা ভুলে গেছেন? তেজগাঁয় ফালুকে কীভাবে নির্বাচিত করা হয়েছিল, ভুলে গেলেন? ভুলেতো যাবেনই, কারণ নির্বাচনগুলো বিএনপির আমলে হয়েছিল। সবচেয়ে অবাক কা-, আশি-উর্ধ অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ নাকি এসব নির্বাচন দেখেননি। তাই এই সিটি নির্বাচনকে তার সবচেয়ে জঘন্য মনে হয়েছে। আমরা সবাই হয়তো কমবেশি ধান্ধাবাজ, মধ্যবিত্ত যেহেতু। কিন্তু এরকম ধান্ধাবাজ আর চোখে পড়েনি। ধান্ধাবাজ চূড়োমণি আর কাকে বলে? সেই ২০০১ সালের নির্বাচনের পরদিন প্রায় সব মিডিয়া জানাল, নির্বাচন চমৎকার এবং সুষ্ঠু হয়েছে। অত্যাচার এমন হয়েছিল যে, আওয়ামী নেতাকর্মীরাও দীর্ঘদিন প্রতিবাদ করার ক্ষমতা বা সাহস রাখেনি। সেই সময় কবীর চৌধুরী, শাহরিয়ার কবির ও আমার উদ্যোগে একটি প্রতিবাদ বিবৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। মূল বক্তব্য ছিল, নির্বাচন একদম সুষ্ঠু হয়নি। বিবৃতিতে আমরা ছাড়া কবি শামসুর রাহমান, কমিউনিস্ট নেত্রী হেনা দাস, শিল্পী হাশেম খান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরসহ মাত্র ১৫ জন। বিএনপি-জামায়াতের ভয়ে কেউ বিবৃতিতে সই করতে পর্যন্ত রাজি ছিলেন না। শামসুর রাহমান ও হেনা দাস পরে বিবৃতি দিয়ে স্বাক্ষর প্রত্যাহার করেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে শামসুর রাহমান জানান, তার কন্যা-জামাতা সামরিক বাহিনীতে চাকরি করেন। তাকে জানান হয়েছে, শামসুর রাহমান যদি স্বাক্ষর প্রত্যাহার না করেন তাহলে তাকে [জামাতা] চাকরিচ্যুত করা হবে। হেনা দি স্বাক্ষর প্রত্যাহার করেন। তিনি জানান, পার্টি মনে করে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সুতরাং তাকে স্বাক্ষর প্রত্যাহার করতে হবে। বলার কিছু নেই। কারণ কমিউনিস্ট পার্টি বরাবরই বেঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। একটি ঘটনার উল্লেখ করি। খুব সম্ভব মে মাসে নির্মূল কমিটি একটি গোলটেবিলের আয়োজন করে। প্রাথমিক ভয় কেটে যাওয়ার পর অনেকেই সেখানে যোগ দিয়েছিলেন। ছিলেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অধ্যাপক নিম ভৌমিক। শাহরিয়ার তার মূল বক্তব্যে বলেছিলেন, শতকরা ৭০ ভাগ হিন্দুকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। তারা নির্যাতিত হয়েছে। তোফায়েল আহমেদ পর্যন্ত ঐ দিন নির্মূল কমিটির সভায় বলেছেন, লালমোহনে ভোটারদের কি অবস্থা করেছিল বিএনপি-জামায়াত বাহিনী। তারা বাসায় থাকতে পারেননি। নিম ভৌমিক বললেন, না, তেমন কিছুই হয়নি। ৭০ ভাগ হিন্দু ভোটার ভোট দিয়েছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা যখন এ ধরনের বক্তব্য দেন, তখন বুঝতে হয় কোথাও একটা গ-গোল আছে। তাদের রক্ষা করতে গিয়ে শাহরিয়ার ও আমি শুধু গ্রেফতার নয়, অশেষ নির্যাতনের সম্মুখীন হই। নিম ভৌমিকের কিছুই হয়নি। বরং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাকে রাষ্ট্রদূত করা হয়। আমাদের মনোজগৎ কেমন গোলমেলে। তার একটি উদাহরণ দিলাম। (চলবে)
×