ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বসবাসের অযোগ্য কাঠমান্ডু

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৫ মে ২০১৫

বসবাসের অযোগ্য কাঠমান্ডু

নেপালের ভূমিকম্পের পর রাজধানী কাঠমান্ডুর ভবনগুলোর তিন চতুর্থাংশের বেশি বসবাসের অযোগ্য বা অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। ১০ দিন আগে দেশটিতে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এক নতুন জরিপে একথা প্রকাশ পায়। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। গত কয়েকদিন এক হাজারেরও বেশি স্থানীয় প্রকৌশলী আড়াই হাজার ভবনের ওপর জরিপ চালান। এতে দেখা যায়, এদের এক পঞ্চমাংশ আর বসবাসের যোগ্য নয় এবং তিন চতুর্থাংশকে নিরাপদ বলে গণ্য করার আগে সেগুলো মেরামত করা প্রয়োজন। জরিপ সমন্বয়ক ধ্রুব থাপা বলেন, এ নমুনা নির্বিচারে বাছাই করা হয় এবং তাই এতে সমগ্র শহরের পরিস্থিতিরই প্রতিফলন ঘটে। ক্ষয়ক্ষতির অবস্থা শোচনীয়। আমরা এখনও এর পরিমাণ উদঘাটন করছি এবং আমাদের কোন এক সময়ে এক পূর্ণ ও বিস্তারিত মূল্যায়ন করতে হবে। থাপা নেপালী ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশনের (এনইএ) প্রেসিডেন্ট। নতুন জরিপে আভাস পাওয়া যায় যে, নেপাল সরকার ইতোপূর্বে যেরূপ ধারণা করেছিল, তার তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক ভবন মেরামত করার প্রয়োজন হবে। স্থানীয় কর্মকর্তারা দেশটিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এমন ১ লাখ ৫৩ হাজার ভবন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন আরও ১ লাখ ৭০ হাজার ভবন গণনা করেছেন। নেপাল সরকার দেশটির ভূমিকম্প পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য ৬শ’ ৫০ কোটি পাউন্ড (১ হাজার কোটি ডলার) লাগতে পারে বলে এরই মধ্যে জানিয়েছে। নেপাল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। রবিবার বিশেষজ্ঞরা এ হিসাবকে অনেক কম বলে বর্ণনা করেন। ভূমিকম্পে ৭ হাজার ২শ’য়ের বেশি লোক মারা গেছে এবং ১৫ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে বলে জানা যায়। এ দুর্যোগে মোট ৫৪ বিদেশী নাগরিক মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৩৮ ভারতীয়, ৩ আমেরিকান, ১ ব্রিটিশ ও ১ জন ফরাসী ছিলেন। পর্যটন দফতরের প্রধান তুলসি প্রসাদ গৌতম রবিবার বলেন, মৃত বিদেশীদের সংখ্যা বাড়বে। দূরবর্তী লাং তাং উপত্যকা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং অন্তত ১১০ বিদেশী নিখোঁজ রয়েছেন। গৌতম আরও বলেন যে, চলতি বছর বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে আরোহণ করার চেষ্টা চালাতে যে অভিযাত্রী দলগুলোকে অনুমতি দেয়া হবে, এমন সম্ভাবনা খবুই ক্ষীণ, যদিও সরকারীভাবে কোন কিছু ঘোষণা করা হয়নি। কাঠমান্ডুতে আফটার শক আঘাত এনেই চলেছে। এতে প্রকাশ্য স্থানে ত্রিপলের নিচে বসবাসরত হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘরে ফিরে যাওয়া এখনও বিপজ্জনক বলে বোধ করছেন। প্রকৌশলীরা এখনও গ্রামীণ এলাকাগুলোতে জরিপ চালাননি। সেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক কম হলেও ধ্বংসের মাত্রা অনেক বেশি। গোর্খা ও সিন্ধুল পলচক জেলাগুলোর শতশত গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ত্রাণ তৎপরতার শ্লথ গতির জন্য নেপাল সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করা হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সাহায্য বিতরণের গতি বাড়তে শুরু করে। সেসব অঞ্চলে হাজার হাজার লোক গৃহহীন হয়ে রয়েছে। সিন্ধুল পলচক জেলার সবচেয়ে সিনিয়র সরকারী কর্মকর্তা কৃষ্ণ গাইয়াওয়ালি বলেন, আমরা কোনক্রমে শতকরা ২০ ভাগ মানুষের চাহিদা মিটিয়েছি। যানবাহন ও হেলিকপ্টারের অভাবে আমাদের জন্য দুর্গত এলাকায় পৌঁছা কঠিন হয়ে পড়ছে। গোর্খা, দোলাখা ও সিন্ধুলি জেলাগুলোর প্রধান প্রশাসকদের সবাই রবিবার রাতে গার্ডিয়ানকে তাদের নিজ নিজ এলাকার পরিস্থিতি একই রূপ বলে জানান। গোর্খার প্রধান জেলা অফিসার উদ্ধব তিমিলসিনা বলেন, মানুষজনের হাতে কিছু না থাকায় তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও নেপালী কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গভীরভাবে বিভক্ত নেপাল সরকারের ভেতর অন্তর্কলহের কারণে বড় বড় দাতা ও পশ্চিমা দেশগুলো হতাশ হয়ে পড়েছে। পশ্চিমা কর্মকর্তারা সাহায্য তহবিল সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীনে কেন্দ্রীভূত করতে মন্ত্রীদের দেয়া পরামর্শ অগ্রাহ্য করার জন্য নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার (৭৫) ওপর বারবার চাপ দিয়ে এসেছেন। সাহায্যের অর্থ বিতরণের সামগ্রিক দায়িত্ব দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বনদেব গৌতম এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের মধ্যেও দ্বন্দ্ব চলছে। দুর্নীতির কারণেও ত্রাণ প্রচেষ্টা দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে।
×