ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেয়র কারাগারে

কাটাখালী পৌরসভার টাকা লোপাট, সচিব পালিয়েছেন

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৫ মে ২০১৫

কাটাখালী পৌরসভার টাকা লোপাট, সচিব পালিয়েছেন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ মেয়র সাত মাস ধরে কারাগারে বন্দী থাকার সুযোগে রাজশাহীর কাঁটাখালী পৌরসভার বিভিন্ন হিসাব থেকে ৭৮ লাখ টাকা হাতিয়ে পালিয়েছে সচিব। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল থেকে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার ফিরোজ আহাম্মেদ লাপাত্তা হয়েছেন। তিনি আর কার্যালয়ে আসছেন না। তার সঙ্গে পৌরসভার সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগাযোগও বিছিন্ন রয়েছে। পৌরসভার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কাঁটাখালী পৌরসভার মেয়র ও জামায়াতের নেতা মাজেদুর রহমানকে নাশকতার মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করে। তারপর পৌরসভায় কোন ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়োগ দেয়া হয়নি। মেয়র গ্রেফতারের আগে থেকেই পৌরসভায় অচলাবস্থা চলছিল। ৩৬ মাস ধরে কর্মচারীরা বেতন পাননি। ২৮ মাস থেকে কাউন্সিলরদেরও ভাতা দেয়া হয়নি। এদিকে, গত ২২ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্যানেল মেয়র আব্দুল মোক্তাদিরকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ২৬ তারিখে আব্দুল মোক্তাদির এই চিঠি হাতে পেয়ে ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পৌরসভার তহবিল শূন্যতার বিষয়টি। পৌরসভার নামে থাকা পূবালী ব্যাংকের কাঁটাখালী শাখার দুইটি হিসাব নম্বর থেকে ও সোনালী ব্যাংকের পবা শাখার একটি হিসাব নম্বরের ব্যাংক বিবরণী তুলে এই বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলনের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত হন। ব্যাংক বিবরণী সূত্রে জানা গেছে, পূবালী ব্যাংকের কাঁটাখালী শাখার একটি হিসাব নম্বর থেকে গত ১৩ অক্টোবর থেকে গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৪৬২ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আর ১৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকার একটি চেকে মেয়র গ্রেফতার হওয়ার আগের দিনের তারিখে ব্যাংকে জমা দেয়া হয়। এছাড়া গত ১০ নবেম্বর পূবালী ব্যাংকের ওই শাখার অপর একটি হিসাব নম্বর থেকে একই দিনে তিনটি চেকের মধ্যেমে ৩৯ হাজার ৯৬২ টাকা এবং সোনালী ব্যাংকের পবা শাখা থেকে গত ২ অক্টোবর থেকে গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সাতটি চেকে মোট ১০ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ব্যাংক বিবরণীতে দেখা যায়, কয়েকটি চেক পৌরসভার হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ ফারুক, স্থানীয় হাবিব ট্রেডার্স, ইসলাম এন্টারপ্রাইজ, শরীফুল ও শফিকুলের নামে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অনলাইনেও কিছু টাকা ওঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ৮৮ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। পৌরসভা সূত্রে আরও জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত মেয়র চিঠি পাওয়ার পর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার ফিরোজ আহাম্মেদ লাপাত্তা হয়ে যান। পৌরসভার তার শেষ কর্মদিবস ছিল গত ২৭ এপ্রিল। বগুড়ায় তিন দিনের কর্মশালায় যোগ দেয়ার নাম করে চলে যান। ভারপ্রাপ্ত মেয়র আব্দুল মোক্তাদির বলেন, সহকারী প্রকৌশলী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার ফিরোজ আহাম্মেদ বরিশালে নিজ বাড়ি চলে গেছেন। সেখানে যাওয়ার পরে ১ মে সচিব একটি এসএমএস পাঠান। তাতে তিনি বলেছেন, তিনি বরিশালে চলে এসেছেন। এরপর থেকে তিনি আর ফোন ধরছেন না। এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের কাঁটাখালী শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক খোসদার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চার মাস আগে তিনি ওই শাখা থেকে বদলি হয়েছেন। তবে মেয়রের অনুপস্থিতিতে টাকা তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো মেয়র কারাগারে যাওয়ার আগের স্বাক্ষরিত চেক হতে পারে। অনেক সময় জনপ্রতিনিধিরা চেকে আগাম স্বাক্ষর করে থাকেন। এ সুযোগে এ পরিমাণ টাকা দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে সচিব উত্তোলন করে থাকতে পারেন।
×