ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরিস্থিতি মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ

দেশী সন্ত্রাসের মুখে আমেরিকা

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৬ মে ২০১৫

দেশী সন্ত্রাসের মুখে আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে দু’সন্দেহভাজন ইসলামপন্থী বন্দুকধারীর হামলা চালানোর চেষ্টা ‘দেশী’ চরমপন্থীদের অব্যাহত হুমিক এবং এদের রুখতে মার্কিন কর্তৃপক্ষ যে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়, তা-ই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সোমবার বিশেষজ্ঞরা এ কথা জানান। খবর এএফপির। ডালাসের এক উপ-শহরে রবিবার সংঘটিত ওই ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে তদন্তকারীরা এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই ঘটনায় দু’ভারি আগ্নেয়াস্ত্রসজ্জিত ব্যক্তি এক ট্রাফিক পুলিশকে গুলি করে হত্যা করে। বন্দুকধারীরা মুসলিমবিরোধী একটি গ্রুপের আয়োজিত অনুষ্ঠানে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করছিল। হামলাকারীদের একজন জিহাদীদের পক্ষে লড়তে সোমালিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল বলে খবর বেরোয়। এর প্রেক্ষিতেই বিশ্লেষকরা বলেন, এটি বিদেশ থেকে নির্দেশ না পেয়েও দেশে বেড়ে ওঠা জঙ্গীদের তৎপরতা শুরু করার অন্যান্য ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। উর্ধতন মার্কিন কর্মকর্তারা দেশে বেড়ে ওঠা ইসলামী চরমপন্থীদের ক্রমবর্ধমান হুমকি সম্পর্কে বার বার সতর্ক করে দেন। বিশেষত সন্ত্রাসীরা একা একা নিজেদের ঝুঁকিতে হামলা চালাতে পারে বলে জানানো হয়। এফবিআইয়ের পরিচালক জেমস কোমি গত মাসে এক সাক্ষাতকারে বলেন, এটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। কারণ এসব লোক ইন্টারনেটে, তাদের বাড়িঘরে অবস্থান করায় তাদের বিরত রাখা খুবই কঠিন। চরমপন্থী মোকাবেলায় ‘ভাল অগ্রগতি’ হয়েছে এর কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু লোকজন আমাদের দৃষ্টির বাইরে থেকে তাদের আস্তানায় উগ্রপন্থার বিস্তার ঘটাতে পারে বলে আমরা উদ্বিগ্ন। ২০০১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে অন্তত ৬৩বার মার্কিন ভূখ- থেকেই সেখানে জিহাদী হামলা চালানো হয় বা সেগুলোর ষড়যন্ত্র করা হয়। কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের পরিসংখ্যানে এ কথা বলা হয়। ইসলামিক স্টেট গ্রুপ, আল কায়েদা, ইয়েমেনভিত্তিক আল কায়েদা ইন দ্য এ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা এবং সোমালিয়ার আল-শরাব সবাই যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের বিরুদ্ধে এক শ’ একাই হামলা চালাতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টর জেমস ক্ল্যাপার ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেস সদস্যদের এ কথা জানান। দেশে বেড়ে ওঠা চরমপন্থীদের কোন বড় হামলা চালানোর মতো প্রশিক্ষণ বোমা তৈরির দক্ষতা বা আর্থিক সমর্থন সাধারণত থাকে না। কিন্তু তারা আকস্মিক হামলা চালানোর সুযোগ পায়। কারণ তাদের বিদেশী চরমপন্থীদের সঙ্গে এমন কোন যোগাযোগ থাকে না, যা আড়ি পেতে জানা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ম্যাক্স আব্রাহামস বলেন, দেশে বেড়ে ওঠা হুমকির বিস্তার ঘটতে পারে, কিন্তু এটি এখনও ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় নিম্ন পর্যায়েই রয়ে গেছে। এর অন্যতম সম্ভবত সবচেয়ে বড় কারণ এই যে, আমেরিকার মুসলিম সম্প্রদায় অপেক্ষাকৃত সুখেই রয়েছে। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ক সহকারী অধ্যাপক। আমেরিকান মুসলিমরা আটলান্টিকের অপর পারের মুসলিমদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অধিকতর একাত্ম এবং আর্থিকভাবে বেশি সচ্ছল। কিন্তু তিনি বলেন, রবিবারে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মতো ঘটনাগুলো কোন কোন মুসলিমের মনে বিচ্ছিন্নতাবোধ সৃষ্টি করতে এবং এক সহিংস প্রতিক্রিয়ায় উস্কানি দিতে পারে। ঐদিন মহানবী হযরত মুহম্মদকে (সা.) নিয়ে আঁকা কার্টুনে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রচার মাধ্যমে দেশী জিহাদীদের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করা হলেও নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় ইসলামপন্থী প্রচারণায় প্রভাবিত ব্যক্তিদের তুলনায় ডানপন্থী মতাবলম্বীদের সন্ত্রাসী হামলাতেই বেশি আমেরিকায় মারা যান বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়। এ ডানপন্থীদের মধ্যে রয়েছে শ্বেতাঙ্গবাদীরা, গর্ভপাত বিরোধী ও সরকারবিরোধী জঙ্গীরা। সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বরের পর ডান চরমপন্থীদের হাতে রাজনৈতিক কারণে ৩৪ জন নিহত হয়। আর ২০০১ এর হামলার পর ইসলামী চরমপন্থীরা ২১ ব্যক্তিকে হত্যা করে।
×